ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস আজ

 আজ ২৪ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা,
পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতি অর্জন করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন মহান স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। পাকিস্তানী সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্যআইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান। আর শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় এই দিনে। শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে বাঙালী জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়।
জনতার রুদ্ররোষ এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পতন ঘটে আইয়ুবের স্বৈরতন্ত্রের। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মতিউরসহ সকল শহীদের অসামান্য অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, সকল শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী দল-মত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
দিবসটি উপলক্ষে শহীদ আসাদ পরিষদ বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত, বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউশনে শহীদ মতিউরের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপার্জিত স্বাধীনতার মঞ্চে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী। আলোচক থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিকেল ৪টায় দিবসটি স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.