সমর্থকদের জন্য...

সমর্থকের জন্য বিয়ের আয়োজন করে কোনো ক্লাব, কোনো কোনো ক্লাবের আবার পাঁড় ভক্তদের জন্য আছে কবরস্থানও
একটি নাটকের সংলাপ দিয়েই শুরু করা যাক। ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে বদলে নিতে পারো, রাজনৈতিক দল বদল করতে পারো, ধর্মও পরিবর্তন করতে পারো, কিন্তু কোনো দিনই তোমার প্রিয় ফুটবল দলকে ছেড়ে যেতে পারো না।’
সংলাপটি কেন লোয়াচের লুকিং ফর এরিক নামের কমেডি থেকে নেওয়া। কিংবদন্তি ফরাসি খেলোয়াড় এরিক ক্যান্টোনাকে নিয়েই এই নাটক। এ থেকেই বোঝা যায়, ফুটবল দল আর সমর্থকের মধ্যে সম্পর্ক কতটা নিবিড়। ফুটবল দলের সমর্থক জীবন বাজি রেখে দলের পক্ষে দাঁড়ায়। গ্যালারিতে বসে চিৎকার করে যাওয়ার মধ্যে যে ভালোবাসা রয়েছে, তার তুলনা কি আছে কোথাও?
সেই পাঁড় সমর্থকদের কথা মনে রেখেই বিশ্বজুড়ে কোনো কোনো ক্লাব এমন কিছু কাজ করেছে, যা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। আসুন, সে ভুবন থেকে ঘুরে আসি।
বলুন তো, কখন একজন মানুষ কোনো ফুটবল দলের পাঁড় সমর্থক হয়ে যায়? জানি, এ প্রশ্নে অনেক তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে। তবে জার্মানির হ্যানোভার ৯৬ দলটি নিজেদের মতো করেই এই প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে নিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে তারা সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য ফ্রেডেরিঙ্কেসটিফ্ট ক্লিনিকে একটি প্রসূতিকক্ষ তৈরি করেছে। এখানেই সন্তানের জন্ম দেবেন তাঁরা। এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে সবুজ ও সাদা রঙে— দুটোই দলটির জার্সির রং। হাসপাতালটির অবস্থান জার্মান শহর হ্যানোভারের এডব্লুডি স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই। এই নবজাত সন্তান হ্যানোভার ফুটবল দলের সমর্থক না হয়ে যাবে কোথায়?
সারা দুনিয়ায় ছড়ানো ফুটবল ক্লাবগুলোর কোনো কোনোটি এই ভাবনাকে গ্রহন করেছে হূদয় দিয়ে। আর্জেন্টিনার এস্তুদিয়ান্তেস, ল্যানুস আর ব্যানফিল্ড দল তিনটি গড়ে তুলেছে কিন্ডারগার্টেন। শিশুরা যখন দোলনায় দুলছে, তখনই তাদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। তবে বুয়েনস এইরেসের সেরা দল রিভার প্লেটও পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নবীন কিশোরদের জন্য খুলেছে স্কুল। রিভার প্লেটের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের প্রধান মার্কোস কাপুরো বলছেন, ‘আমরা সবচেয়ে প্রতিভাবানদেরই খেলাধুলায় উৎসাহিত করে থাকি। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বাড়ানো নয়, বরং একসঙ্গে চলার শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা যেন এখানেই পাওয়া যায়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাই আমরা।’
জার্মানির হার্থা বার্লিন ও শালকে জিরো ফোর তাদের সমর্থকদের বিয়ের আয়োজনটাও করছে তাদের ফুটবল নায়কদের স্মরণ করার জায়গাটিতে। স্কটল্যান্ডের সেল্টিক বিয়ের অতিথি ও সাক্ষী কারা হবে, শুধু এই ব্যাপারটাই ছেড়ে দেয় হবু বর-বউয়ের কাছে। বিয়ের আয়োজনসহ যাবতীয় কাজের ভার নেয় ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদ ২০১০ সালে একটা অন্তর্বাস তৈরির কারখানাই দিয়ে বসেছে। রিয়ালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় পেপে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, রিয়ালের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের অগণিত সমর্থক এই কারখানায় তৈরি কাপড় পরবেন।’
লিওঁর কিন্তু অন্তর্বাসের ঝামেলা নেই। তাদের আছে ট্যাক্সি-সার্ভিস। লিঁও-সার্ভিসের ট্যাক্সিকে ফোন করলেই হলো, সঙ্গে সঙ্গে হাজির হবে সেটি। আরও চাই? যদি সমর্থকদের কেউ চুল কাটাতে চান, তাহলে তাঁরা যেতে পারেন লিঁওরই সেলুনে। আগামী ছুটির দিনটি আপনি কোথায় কাটাবেন, সেটাও আপনি জেনে নিতে পারেন লিওঁর ট্রাভেল এজেন্সি থেকে। আর হ্যাঁ, এ জন্য টাকা দেওয়ার ব্যাপারেও আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। লিওঁ ব্র্যান্ডেড ব্যাংক কার্ডই তো আছে আপনার হাতে!
স্পেনের আটলেটিকো মাদ্রিদ দলটি আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা ২০০৮ সাল থেকে ভস্মাধারের ব্যবস্থা করেছে। যে সমর্থকেরা মৃত্যুর অমোঘ নিয়তি বদল করতে পারবেন না, তাঁদের ভস্ম সংরক্ষণ করার জন্যই এই ব্যবস্থা। এ রকম প্রায় চার হাজার ২০০ ভস্মাধার রয়ে গেছে ভিসেন্তে ক্যালদেরোন স্টেডিয়ামে। এই ভাবনাটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কাজ করছে বেটিস, এসপানিওল এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও।
আর আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র কী করেছে শুনবেন? তারা তাদের সমর্থকদের জন্য ২০০৬ সালে তৈরি করেছে সমাধিক্ষেত্র। তাদের পথ ধরে একই কাজ করেছে হামবুর্গ আর শালকে ক্লাব দুটিও।
অর্থাৎ দোলনা থেকে গোরস্থান পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্বই নিচ্ছে ফুটবল ক্লাব!
ফুটবল—যুগ যুগ জিয়ো!
 ফিফাডটকম অবলম্বনে জাহীদ রেজা নূর

No comments

Powered by Blogger.