২০১৪ সালে পরিবর্তন দিয়ে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরুঃ ড. কামাল by মাহমুদ মেনন ও আশরাফুল ইসলাম

চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েন থেকে দেশ ২০১৪ সালে মুক্তি পাবে বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট আইনজীবী সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সামনে আরও ১২ মাস সময় আছে এই সময়ের মধ্যেই এ নিয়ে কাজ করা হবে।
সারাদেশ থেকে ভালো মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।
মানুষ এখন পরিবর্তন চায় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রীসহ অনেককেই দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও চলমান রাজনীতি’ শীর্ষক অনলাইন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে তিনি গণতন্ত্রের সেবক, জনগণের সেবক। তিনি যদি সেটা বুঝতে না পারেন তা হলে তখন সেটা আমাদের  বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের আগের মতো আবারও জনগণের ঘরেঘরে গিয়ে জনমত গঠন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন ড. কামাল।
তিনি বলেন, ষাটের দশকের তরুণদের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর আচরণ গা-সওয়া হয়নি বলেই তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন। তাই এখন আমাদের গা-সওয়া হলে চলবে না। আমাদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে।
রাজনীতিতে পুলিশ বাহিনীকে নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মত দিয়ে ড. কামাল বলেন, পুলিশকে রুগ্ন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তাদের জনগণের বন্ধু করতে হবে।
নিরপেক্ষ, দলীয়করণমুক্ত কোনো দল আমরা দেখতে পাইনি।
সুপ্রিমকোর্ট আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সুযোগ রেখেছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছিলেন কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনেই সরকার মাত্র ১০ মিনিটে একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাতিল করেছে। যা হতে পারে না--- অভিমত ড. কামালের।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘নতুন বছরের প্রাক্কালে-বিজয়ের মাসের শেষে আমরা একটা পরিবর্তন চাই। যেখানে নাগরিকদের ভ‍ূমিকা থাকবে। রুগ্ন রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবের বদলে একটি সুস্থ রাজনীতি হবে। যে রাজনীতির জন্য আমরা অতীতে বহির্বিশ্বে অনেক সম্মান পেয়েছি।’’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ গরীব ছিলো। তারপরও বিদেশে গিয়ে অনেক সম্মান পেয়েছি। তারা আমাদের বলেছে, তোমরা স্বাধীনতার জন্য, ন্যায় ও সত্যের জন্য প্রাণ দিয়েছ।’’
ড. কামাল বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না সরকারপ্রধান রাতে ভালো ঘুমান। কারণ একজন প্রধানমন্ত্রী সফল হলে ১৬ কোটি মানুষ সফল হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে যারা থাকেন তারা তাকে ভালো করতে দেন না।’’
‘১৫ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা জীবন দিয়ে গেছেন তারা কিসের জন্য দিয়েছেন? সেটা  আমাদের বুঝতে হবে। দীর্ঘ সময় আমরা পরাধীনতার গ্লানি ভোগ করেছি। এখনো আমরা সেই গ্লানি থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
‘বর্তমান সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিলো কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি’ বলে উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘‘বিএনপিতেও মুক্তিযোদ্ধা আছে এটা আমি স্বীকার করি। দেশের স্বাধীনতার জন্য মূল যে রাজনৈতিক শক্তি কাজ করেছে সেই দল (আওয়ামী লীগ) যখন এবার জনগণের সমর্থন অর্জন করে তখন কি আশা ছিলো আর কি আনন্দ পেয়েছিলাম তা বোঝানো যাবে না। আশা ছিলো, দেশে সুশাসন ফিরে আসবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’’dr-kamal
‘১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন’—তাকে ইঙ্গিত করে করা এহেন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আমি জার্মানির বনে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ভুমিকা কি ছিলো তা শেখ হাসিনাই বলুন। আমি মনে করি সেই ঘটনা (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড) দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো কেবিনেট বৈঠক ডেকেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মুসলিম রিপাবলিক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।’’
’৭৫-র পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘৭২’র সংবিধানকে ফিরিয়ে আনতেও কম জীবন দিতে হয়নি। কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীরই ৮০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে জেলবন্দি করা হয়। জেলে বিনা বিচারে ও গোপন বিচারের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ভুলে গেলে চলবে না।’’
জাতির জনকের সান্নিধ্য পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, জীবনে অনেক খ্যাতি-অর্থ অর্জন করতে পারবে কিন্তু জনগণের সেবা করার চেয়ে বেশি গৌরব আর কিছুতে নেই। হাজার কোটি টাকাও তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।’’
পাকিস্তান আমলের অপশাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৬ সনের ভোটে বাঙালিরা পাকিস্তানকে ৫০ ভাগ ভোট দিয়েছিলাম, আশা ছিলো আমাদের অধিকার পাবো। কিন্তু যখনই আমাদের ভাষার উপর আঘাত এলো, অশ্রদ্ধা দেখালো-আমরা একবাক্যে ‘নো’ বলার শক্তি দেখিয়েছি। এ শক্তি প্রদর্শন করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করি।’’
রাজধানীতে ৪০-৫০ ভাগ মানুষের বাসস্থান নেই, মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁইন  নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘যারা দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে-তারা কি এটা চেয়েছিলো? রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বস্তি উচ্ছেদ করার পর আমি সেখানে গেলে এক প্রবীণা নারী আমাকে বলেন, আমার স্বামী বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত করে আনতে সংগ্রাম করেছে। আর  আওয়ামী লীগের লোকজনই আমাদের উচ্ছেদ করে। এটা কি আমরা চেয়েছিলাম?’’ 
নাগরিকদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, “কোনো দলের ৭৫ ভাগ মেজরিটি থাকলেই কি সেই ক্ষমতাসীন দলের সমলোচনা করা যাবে না? যে সমালোচনা করবে তাকেই দেশদ্রোহী বলা শুরু করবে তারা। এটা যেন রাজা-রাণীর দেশ! সামন্তপ্রভুর রাজত্বে এমনটা ঘটে, গণতন্ত্রে তো এটা চলতে পারে না! জনগণই এ দেশের ক্ষমতার মালিক। সরকারের কাজের, অন্যায়ের, ভুলের সমালোচনা করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। যারা নাক উঁচু করে জানতে চান, ‘নাগরিক সমাজ কারা?’, তাদের বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল জনপ্রতিনিধি জনগণের সেবক। আর এটা বলা যদি দেশদ্রোহিতা হয় তাহলে আমি এ কথা বলে গর্ববোধ করি।’
‘দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না বা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই সব’-১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত প্রকৃত গণতন্ত্র কিনা বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহারের এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘‘এ প্রশ্নটি আমার জীবনের বড় পুরস্কার। কারণ এ প্রশ্নেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়েছি। আমি দীর্ঘ চিঠি লিখে সেই সময়ে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম।”
সমসাময়িক প্রসঙ্গ টেনে ড. কামাল বলেন, ‘‘দেশে উপর তলায় যারা আছেন, তারাই দেশের সম্পদ পাচার করছেন। আর প্রবাসীরা মাথার ঘাম ফেলে টাকা উপার্জন করছেন তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।’’
শেয়ারবাজার থেকে লাখো সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি, হলমার্কসহ সাম্প্রতিক অর্থকেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘এতো সব ঘটনা ঘটছে-কিন্তু এসবের তদন্ত হচ্ছে না কেনো? আর এসব ঘটনায় কত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয় গা সওয়া হয়ে গেছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে গা সওয়া হয়নি। আর তাই ২০১৪-তে একটি পরিবর্তন এনে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণ সে পরিবর্তন আনবে।”
“সামনে ১২ মাস আছে। এ সময়ের মধ্যে অন্তত নয় মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ২০ জন লোক কি আমরা বের করতে পারবো না?’’ প্রশ্ন ড. কামালের।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘গত নির্বাচনে আমি যাকে ভোট দিয়েছি, তাকে আর আমি ভোট দেবো না। যাকে বিশ্বস্ত মনে করতে পারি তাকে ভোট দেবো। আর এ প্রক্রিয়া তিন মাস আগে শুরু করলে হবে না। আজ থেকেই শুরু করতে হবে।‘’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা ও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর জয়ের উদাহরণ টেনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের বিপরীতে ওবামার বিজয় কিংবা নারায়ণগঞ্জে আইভীর জয় কেউ ভাবতেও পারেনি। তবে আমি মনে করি ৭০-এর নির্বাচনেও এমনি সাফল্য এসেছিলো। ২০১৪ সালের এমন একটি পরিবর্তন আসতে পারে।”
তিনি বলেন, “৭০-এ বঙ্গবন্ধু আমাকে চিফ ইলেকশন ইনচার্জ করেছিলেন। হাজার খানেক ভলান্টিয়ার আর কাগজ-কাঠপেন্সিল নিয়ে কার্বন পেপার দিয়ে কপি করে ভোটার তালিকার কপি হাতে নিয়ে প্রচারণ‍া শুরু করেছিলাম। রাজধানীতে এমন কোনো বাড়ি ছিলো না যেখানে যাইনি। মানুষের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সাড়া এসেছিলো। যার ফল আমরা নির্বাচনে পেয়েছিলাম।’’
“আজ বাঁচতে হলে দেশকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে,’’ মত ড. কামালের।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের পরে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বিদায় দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি সুযোগ পেয়ে যা করেছেন, সেজন্য সুযোগ হারিয়েছেন।’’
পদ্মাসেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, ‘‘পদ্মাসেতুর কেলেঙ্কারির পর একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে কেন প্যাট্রিয়ট বলেছেন? এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে এজাহার হলো, তিনি গ্রেপ্তার হলেন। আমি তো মনে করি, সেক্রেটারির উপরে মন্ত্রী, তার উপরে আরও প্রধানরা যুক্ত থাকেন। এটা সংবিধানের কথা। তারা কেউ এ ঘটনায় দায় এড়াতে পারেন না।’’
পুলিশ বাহিনীর প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘‘১৮৬১ সালের পুলিশ আইন একবিংশ শতাব্দিতেও চলছে। এটি বদলাতে হবে। পুলিশকে টাকা দিয়ে পোস্টিং-পদোন্নতি নিতে হয়। পুরনো সরকারের সময়কার অনেক পুলিশ সদস্যকে বিদায় করে দেওয়া হয়। আমি নিজে এমন অনেককে আইনিভাবে পুনর্বহাল করেছি। তারা আমাকে বলেছে, কিভাবে মন্ত্রীরা ঘুষ নেন। পুলিশকে রাজনীতিবিদরা যারা কুকর্ম করে তাদের খুশি করতে বাধ্য করে। তাই পুলিশকে জনগণের বন্ধু করতে হবে। তাদের মুক্ত করতে হবে।’’
আগামি জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, ‘‘আমাদের বিবেক ও সংবিধান থেকে দিকনির্দেশনা নিতে চাই। দেশটা কোনো গোষ্ঠি বা পরিবারের নয়। সৎ ভাব নির্ভয়ে কাজ করবে, প্রয়োজনে ঝুঁকি নেবে-এমন লোক প্রয়োজন। সারা দেশে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় এমন লোক নিশ্চয়ই আছে।’’
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক শব্দ নিয়ে টানাটানি করতে চাই না। সবাই চাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর এ নিরপেক্ষ বলতে এক দলকে বোঝায় না। তবে নিরপেক্ষ না থাকার যে প্রবণতা দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই সেখান থেকে বের হতে পারেনি।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের প্রতি ইঙ্গিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের লেলিয়ে দেওয়ার মতো নির্দেশ যারা দেন আমি মনে করি এটা তাদের মানসিক অসুস্থতা। এমন ব্যক্তিদের মনোচিকিৎসা দেওয়া উচিৎ।’’
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আর ২ দিন পর নতুন বছর আসছে। শহীদরা যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে। যদি বর্তমান সরকারের ঘোষিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয় তবে দেশে শান্তি আসবে না।’’
সমাধানের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সদিচ্ছা থাকলে সংকটের সমাধান করা ৫ মিনিটের ব্যাপার।”
“চলমান রাজনীতি অস্ত্র, টাকা ‍আর পেশিশক্তি, হত্যা, রেষারেষি ও একটি রুগ্ন রাজনীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জে আইভী আমাদের আলো দেখিয়েছেন। আমরা যদি এগুলো বলতে শুরু করি, তবে মানুষে মানুষে ঐক্যের একটি বন্ধন নিশ্চয়ই তৈরি হবে। ’৫২-তে, ’৫৪-তে, ৬৯-এ, ১৬-ডিসেম্বরে ও ৯০-এ আমরা যেমন জয়ী হয়েছি; ২০১৪ তেও ইনশাল্লাহ জয়ী হবো। আগামীতে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আর সে লক্ষ্যে যদি আমরা চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের অনেক মাশুল দিতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষদের অনেক বেশি মাশুল দিতে হবে।
মাইনাস টু নয় প্লাস ওয়ান প্রয়োজন: তুহিন মালিক
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তুহিন মালিক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বড় প্রতিপক্round-tableষই হচ্ছে সুশাসন, দেশের সংবিধান। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে দলগুলোর কারোই অগ্রাধিকার নয়।
গণতন্ত্র কেমন হওয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও কলাম লেখক ড. তুহিন মালিক বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা আসলে শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি হারিয়ে ফেলেছি। সে স্থান দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তায়ন। স্বাধীন দেশের মাটিতে গণতন্ত্রের যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিলো তা আজ উল্টে পথে হাটছে। এখানে শিষ্টের পালন না হয়ে দুষ্টের পালন হচ্ছে। আইন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কার্যত মনে হচ্ছে, দুষ্টলোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যখন দেখি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে বিকাশের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ভিআইপি মর্যাদায় নিয়ম লঙ্ঘন করে রাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আইজিপি, ডিআইজি, ৠাবের প্রধান কেউ জানেন না। অন্যদিকে, তুচ্ছ অপরাধে একজন সাধারণ মানুষ জেলে পচে মরতে হচ্ছে, তাকে উচ্চ মূল্য দিয়ে বিচার কিনতে হয়।’’

এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘তাহলে কি আইন লুটেরা-দুর্বৃত্তদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে না? এ যেনো এক মাকড়সার জ্বাল-ছোটরা আটকে যায় আর বড়রা জাল কেটে বেরিয়ে যায়।’’

বিদ্যমান এ গণতন্ত্রকে তিনি ‘কোরবানির হাটে’র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘‘রাজনীতির অবস্থা এমন যে পশুকে চড়ামূল্যে কিনে নেওয়ার মতো। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস যদি থাকে, তাহলে বিশ্বজিৎ কেনো সবার সামনে মরতে হলো? আর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বক্তব্য আমরা শুনছি, তাহলে কি বিশ্বজিৎ মুসলমান হলে তার মৃত্যু সঠিক ছিলো?’’

শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তির পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের গাড়ে বন্দুক রেখে গণতন্ত্রের চর্চা থেকে আমাদের বের হওয়া উচিৎ। ২০ দিন হয়ে গেলো বিকাশকে কেউ খুঁজছে না।’’

চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘চলমান রাজনীতি মূল পথে হাটছে না। প্রধান দু’দলেই (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) মূলের চেয়ে কাণ্ড বড় হয়ে যাচ্ছে। দু’দলকেই অশুভ শক্তি চালাচ্ছে। এরশাদ রাজনৈতিক দল করতে পারবেন, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।’’

বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএনপি নেতা শাহাজান সিরাজ, রাশেদ খান মেনন প্রমূখের সমালোচনা করে তুহিন মালিক বলেন, ‘‘আমরা যাদের নিয়ে গর্ব করি, তাদের যদি স্খলন হয়-তাহলে আমরা কাদের অনুসরণ করবো। বুঝা গেলো মন্ত্রীত্বই বড় জিনিস, আদর্শ নয়।’’

‘‘নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে কলঙ্কিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, অপরদিকে, রাষ্ট্রপতি খুনী অপরাধীদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন আর মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণের জন্য একজন কৃষককে কোমড়ে দড়ি  বাঁধা হয়।’’

তুহিন মালিক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘এ সংবিধান কার? যে সংবিধান নিয়ে কথা বললেই মৃত্যুদণ্ড হবে! যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য পাঠিয়েছি, তারা তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে।’’

‘‘বিএনপির সময়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি কেলেঙ্কারি হয়নি আর এখন তো ব্রীজই খেয়ে ফেলা হচ্ছে। আগে দেশে দুর্নীতির খ্যাতি জাতীয় পর্যায়ে ছিলো, এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়েছে।’’-যোগ করেন তুহিন মালিক।

দুইনেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘দুই নেত্রীই বড় সমস্যা। তারা গৌতম বুদ্ধের মতো পূজনীয় হতে চান। দেবীদের (দু’নেত্রী) এ অসুস্থতাই নাকি গণতন্ত্র? ব্যক্তি কি দলের চেয়ে বড়? রাষ্ট্রকে যারা যোগান দেবেন, তারাই যদি বড় হয়ে যান, তবে মৌলিক মানবাধিকারের স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়।’’

সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে যারা মাথা ফাটাফাটি করলেন, তারাই এখন আর এর মধ্যে নেই। তারা কিসের ভিত্তিতে এটা বাতিল করলেন?’’

সংবিধানকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ  ভাবে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন-এসব প্রতিষ্ঠানকে কেউ শক্তিশালী করবে না। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কেউ শক্তিশালী করবে না। প্রত্যেক দলের মহাসচিব সবসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হন। মূলতঃ এ মন্ত্রণালয় থেকে যে রেভিনিউ আসে তা ওই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়। তাই একে দুঃস্থ রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।’’

দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে আদালতে এটর্নি জেনারেলের দাঁড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘তাহলে উনার (সুরঞ্জিতের) নিখোঁজ ড্রাইভারের পক্ষে কে দাঁড়াবে। এটর্নি জেনারেলের তো রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা। তারা মনে করেন, যাদের জনগণ নির্বাচিত করে ক্ষমতায় পাঠান-তারাই সব সম্পাদ-সুবিধ‍া ভোগ করবেন।’’

বিদ্যমান এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভাবতে হবে এ পেশিশক্তি-কালোটাকার প্রভাবমুক্ত হওয়ার উপায় কি? এর জন্য প্যারাসিটামল দিলে হবে না। ব্যবচ্ছেদ(সার্জারি) করতে হবে। থ্রিজি (নতুন বিকল্প) কিংবা ‘এ’-‘বি’র বাইরে কে না চায়। বিকল্প বের করতেই হবে। এটা বলা ধৃষ্ঠতা হবে, তারপরও বলবো হাসিনা-খালেদার চেয়ে ভালো বিকল্প হতে হবে। যারা বিকল্প হিসেবে আসছেন তারা কার্টুন মার্কালোক। হাসিনা-খালেদার বিরুদ্ধে তাদের চেয়ে কম যোগ্যতার লোক দিলে হবে না। জনগণ ভালো জিনিস দিলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেবে। একটা পুরুষ লাগবে। আরব্যরজনীর মতো তেজস্বি পুরুষ। মাইনাস টু দিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। প্লাস ওয়ান দরকার। এ পরিবর্তনের জন্য দুই নেত্রীর চেয়ে বড় দেবতা হতে হবে।’’

রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘ফেসবুক-টুইটারের প্রতিক্রিয়া দেখলে বোঝা যায়। পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার। ভয়কে জয় করতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস বলতে কিছু একটা আছে। একজন নিশ্চিয়ই দাঁড়িয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর মতো। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
দেশে রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে: বদিউল আলম
বিশিষ্ট গবেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশে এখন রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে। দেশে ক্ষমতা আজ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে না। ব্যক্তি বা পরিবারের জন্যই চলছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
বদিউল আলম মজুমround-tableদার বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংসদীয় কমিটিগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না। এর কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
সংসদীয় কমিটি অনেকটা রাবার স্ট্যাম্প বডি’তে পরিণত হয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
বিরোধী দলের মধ্যে সংসদকে কার্যকর করার সদিচ্ছা নেই বলে তারা সংসদের বাইরে থাকছে। তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্বই হচ্ছে সংসদে যাওয়া, বলেন বদিউল আলম।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
গণতন্ত্র কি এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, ‘‘গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের সম্মতির শাসন। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সম্মতি লাগবে কেন? সংবিধানে তো বলাই আছে, জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। ভোটের মাধ্যমে কি আমরা সব সম্মতি দিয়ে দিচ্ছি। আমি মনে করি, ভোট দেওয়ার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের আমরা ক্ষমতার একটি ‍অংশ বিশেষ দেই। পাঁচ বছরের জন্য যা খুশি তাই করার ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়, এটা মনে করা ভুল।’’

গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কিছু রক্ষাকবচ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে রক্ষায় আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কিছু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে ক্ষমতা কুক্ষিতগত না হয়। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-জাতীয় সংসদ, আদালত, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও মানবাধিকার কমিশন। এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে ক্ষমতার যথেচ্ছাচার না হয়।’’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘সাংবিধানিক এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কিছু বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-মানবাধিকার কমিশন, দুদক ও তথ্য কমিশস ইত্যাদি। রাজনৈতিক দলও একটি প্রতিষ্ঠান-যা গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করে থাকে।’’

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আজ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে। তাদের দলের কেউ কী প্রশ্ন তুলবেন-দলীয় প্রধানের কাছে, গত ৪ বছরে নির্বাচনী সনদের কি কি বাস্তবায়ন করেছেন। দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান ভিন্ন হতে হবে, তাহলে সে রকম হয়তো কিছু দেখতে পেতাম। তাহলে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হতো। দলে যদি গণতন্ত্রের চর্চা না হয় তাহলে রাষ্ট্রেও গণতন্ত্রের চর্চা হবে না।’’

সিভিল সোসাইটি এখন ইভিল সোসাইটি হয়ে গেছে- মত দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘সিভিল সোসাইটি জনগণের স্বার্থে কথা বলবেন-এটাই প্রত্যাশা। যে দেশে নাগরিক সমাজ যতো শক্তিশালী সে দেশে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রথিষ্ঠার পথ ততো সুগম হয়। কিন্তু তা হচ্ছে কী?’’

বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঝুঁকি নিয়েই বলছি, এখন আদালতে বিএনপি বেঞ্চ, আওয়ামী লীগের বেঞ্চ শোনা যায়। বিচারকদের আচরণেরও যা দেখছি তা অত্যন্ত করুণ। একজন বিচারক বলেছিলেন, আদালতে প্রলয় ঘটে গেছে, এখন বলতে হবে- চার বছরে মহাপ্রলয় ঘটে গেছে- অনেক জল গড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা  ছিলো, যাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়। কিন্তু সংসদ স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে কাজ করলে ১০ দিনে কিভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হলো। সবার মতামতকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে পাশ করা হয়েছে এ সংশোধনী।’’

সংসদ সদস্যদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সংসদ আইন প্রণয়ন, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, নীতি-নির্ধারণী বিতর্ক ও আয়-ব্যয়ের বাজেট প্রণয়ণের প্রতিষ্ঠ‍ান হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সাংসদদের আইন প্রণয়নের আগ্রহ নেই। কোনো সংসদীয় কমিটিকে দেখলাম না সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সক্রিয় হতে। কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে। তাহলে এ কমিটি রেখে লাভ কি? সংসদে বিতর্কের নামে গালাগালি আর বন্দনা হয়। আমলা যে ড্রাফট তৈরি করে দেয়, তাই আইন পাশ হয়। অপরদিকে বিরোধী দল যে বাগাড়ম্বর করতে চায়-তারও কোনো যুক্তি নেই। যে কোনো অযুহাতে সংসদের বাইরে থাকার যুক্তি নেই।’’

‘‘সিভিল সোসাইটি এখন সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের স্পেস দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কাজ না করে তাহলে গণতন্ত্র হতে পারে না। নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র হতে পারে- যথেচ্ছাচার হতে পারে’’-যোগ করেন বদিউল আলম মজুমদার।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিসক্যাল ক্লিফ’র (খাদের প্রান্তে) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজনীতিও খাদের প্রান্তে অবস্থান করছে। যদি এর সমাধান না করি তবে সামনে বড় বিপর্যয়। ২০০৬ সালে ছোট ক্লিফ সৃষ্টি হয়েছিলো। তখন গণতন্ত্র ভেঙ্গে পড়েছিলো। তবে পঞ্চোদশ সংশোধনীরে প্রেক্ষাপটে আমরা এখন বড় খাদের প্রান্তে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতেই হবে।’’

সংকট নিসরন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সরকার পাতানো বিরোধী দল করে নির্বাচন করার চেষ্টা করলে তা টিকে থাকবে না-অনেকটা আন সাসটেইনেবল সিচুয়েশন বলা যায়। আমি মনেকরি, নাগরিকরা যদি সোচ্চার হই, মিডিয়াগুলো যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে, সর্বোপরি সবাই যদি নিজেদের করণীয়টুকু পালন করে তবে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া ঠেকানো যাবে। তবে উত্তরণ না ঘটানো গেলে বড় মাশুল দিতে হবে- বিশেষ করে ভবিষ্যত বংশধরদেরকে।’’

‘‘বহুদলীয় গণতন্ত্র হলে সংসদে থাকতে হবে। প্রশাসনকে দলীয়করণ, দলবাজি ও ফায়দাতনন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। dr-kamal

ইয়ারুল ইসলাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট

যারা নতুন শক্তি হিসেবে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন, তারাও বিষবৃক্ষ (চলমান দূষিত রাজনীতি অর্থে) থেকে আসছেন। সংকট উত্তরণে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনাও তারা দিতে পারছেন না। আমি মনে করি, সুশীল সমাজের যারা নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের নিজস্ব স্বাধীন অবস্থান থেকে নির্দেশনা দিতে হবে। বেতনভূক্ত গবেষক হয়ে নির্দেশনা দিলে হবে।

ব্যারিস্টার আল মামুন
গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন। স্বাধীনতার ৪২ বছরে এসেও আমরা গণতন্ত্রের প্রকৃত চেহারা দেখতে পাচ্ছি না। যোগ্য নেতৃত্ব দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্র থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে না।
পাঠকের মতামত ও প্রশ্ন
বাংলানিউজের এই সংলাপে অনলাইনে অংশ নেন কয়েক হাজার পাঠক। দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা বাংলানিউজের কাছে মতামত ও প্রশ্ন পাঠান। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রশ্ন এখানে তুলে ধরা হলো।
সোহেলুর রহমান, সরকার ও রাজনীতির সাবেক শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
দেশে গণতন্ত্র ও একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ‘গণতন্ত্র ও চলমান রাজনীতি’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে ধন্যবাদ।

প্রথম প্রশ্ন: শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। অথচ ময়লার গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিরোধী দলের মহাসচিবকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

সরকার  পুনরায় জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে তত্ত্বাবধায়ক বা এ ধরনের কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনে তাদের এত অনীহা।এসব কি পরিকল্পিত?

দ্বিতীয় প্রশ্ন: জামায়াতের যুদ্ধাপরাধসহ সব অপরাধের বিচার আমরা চাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সমর্থন, তার আগে একসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন নানা কারণে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের যখন সখ্য ছিল তখন কেন আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গটা সামনে আনেনি।

রফিকুল ইসলাম সোহাগ, ঢাকা:
আমার দেশের সংবিধান কেন বার বার পরিবতন করা হয়?
আমাদের দেশের আদালত কেন তার নিজের গতিতে চলছে না?
মাহমুদ, ঢাকা, বাংলাদেশ:
প্রথমে ধন্যবাদ বাংলানিউজকে এই রকম একটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংলাপ আয়োজন করার জন্য। আমার প্রশ্ন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেন স্যার এর কাছে: কিছু দিন আগে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাহেব একটি অনুষ্ঠানে বলেন "নির্বাচন না হওয়ার চেয়ে যেনতেন নির্বাচন হওয়াও ভাল" বিষয়টাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নূর, ঢাকা
জামায়াত শিবিরের রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে আপনার কি অভিমত?
Khalid, Orlando, Florida, USA
Mr. Hossain! Do you think both of leading parties have their reliable alternative in future leadership as of today?

কাজল কেয়া, ঢাকা
একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রাজনীতিকদের ভূমিকা কী? তারা কি সে অনুযায়ী দেশের জন্য কাজ করছেন?
মুস্তাফিজ,আলবার্টা, কানাডা
আমাদের নির্বাচিত সরকারগুলো  কেন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারতেছে না? জবাবদিহিতা ছাড়া গণতন্ত্র কতটুকু কার্যকর? বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র বলতে যা বোঝাচ্ছে হয় কাউকে শিকার করে বাঁচতে হয় অথবা শিকার হয়ে বাঁচতে হয়। কেন? এই ‘তন্ত্র’ থেকে মুক্তির উপায় কি?
মুস্তাফা মাইনুল হক তারেক, সিঙ্গাপুর
ড. কামাল হোসেনের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই কেয়ারটেকার সরকার এর বাইরে কোনো নির্বাচন হলে আপনি কি মনে করেন দেশের মানুষ মেনে নেবে?

আপনি কি মনে করেন দেশে এখন আইনের শাসন চলছে?

একটি গণতান্ত্রিক দেশ এ কি পুলিশ আইনের উর্ধে? যদি তা না ই হবে তবে পুলিশ কেন সারাদেশ এ ঘুষ এর রাজত্ব আর লুটপাট করছে?

সকল সমস্যা এক জায়গায় তথা যুদ্ধাপরাধী ইস্যু কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে নাকি ধ্বংস করবে?

রাসেল আহমেদ, সাংবাদিক, ঢাকা
দেশের চলমান রাজনীতির অবস্থা খুবই নাজুক, আর গণতন্ত্র তো ছাত্রলীগের
চাপাতির আঘাতে অনেকটাই বিলুপ্ত হবার পথে। বর্তমানে দেশের হানাহানির রাজনীতি বন্ধে প্রধান দুই দলের সংলাপ কতটা জরুরি?

লোকমান, মালয়েশিয়া
গোলাম আযমের বিচার করা হবে কী?

জাবেদুর রশীদ, ঢাকা
আমি  ড. কামাল  হোসেনকে  বলছি, দেশে  বর্তমানে  যে  ধরনের শাসন ব্যবস্থা  চলছে   এদেশের  সাধারণ  নাগরিকের   কাছে  তার  বিন্ধুমাত্র  গ্রহণযোগ্যতা নেই । দেশের  এই দুর্দিনে  আপনারা  কেন  কিছু  করছেন না ? কেন  আপনারা  নিরব? আপনারা না এদেশটার স্বাধীনতার  জন্য  যুদ্ধ  করেছিলেন? বলতে  পারেন  কেন  সাধারণ  জনগণ  স্বাধীনতার  স্বাদ  থেকে  বঞ্চিত? দেশটা কার  হাসিনা, খালেদার না ১৬ কোটি  মানুষের? আপনারা  যোদ্ধা শুনলে  আমাদের হাসি পায়, কারণ  এই দুর্দিনে  যারা  দেশের  জন্য  কিছু  করছে না  তারা আবার  যোদ্ধা হয় কিভাবে? দয়া করে  দেশের  জনগণের  মুক্তির  জন্য কিছু  করেন, দেশের অপশাসনকে  রোখার  জন্য  আবার  যুদ্ধ  করুন, আর  যদি  না পারেন  তাহলে  কখনো নিজেকে  একজন  মুক্তিযোদ্ধা  হিসেবে  পরিচয়  দেবেন না ।

ইয়াসমিন রত্মা
ড. কামাল হোসেনের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি কি  আমাদের গণতন্ত্রকে আরো সুসংগঠিত করছে নাকি অরাজকতা সৃষ্টি করছে? আমাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে যুগোপযোগী আইন প্রনয়ন হচ্ছে না কেন? আর হলেও প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? জনগণের মুক্তির পথ কি? 

শিহাব আল মাহমুদ, বাহরাইন
প্রথমেই বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানাই গণতন্ত্র ও চলমান রাজনীতি নিয়ে শীর্ষক অনলাইন সংলাপের আয়োজনের জন্য। আমার প্রশ্ন হল আজকের সংলাপে উপস্থিত সবার কাছে। আপনারা অবশ্যই জানেন যে, আমেরিকার নির্বাচনে প্রচারনা হিসাবে উভয় প্রার্থী দেশের উন্নয়নকে কিভাবে করবে মুখোমুখি আলোচনা করেছেন। আজ বাংলাদেশের তত্ত্ববধায়ক ইস্যু নিয়ে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দলীয় প্রধান মুখোমুখি আলোচনা করলে একটি সুষ্ট সমাধান আসবে কি?

কামাল শাহরিয়ার
সংবাদকর্মী, ঢাকা
আমি শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেন স্যারের কাছে জানতে চাই,,
১.দেশের বড় দুই দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি)’এর মধ্যে শুধু সংলাপ হলেই চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব?
২. দুই দলের মধ্যে আস্থার সঙ্কট কাটাতে বিশ্বাসের জায়গাটা বাড়ানো উচিত কি?
৩. জামায়াত প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান যৌক্তিক বলে আপনার মনে হয়? নাকি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত?
৪. আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহযোগ্য করতে শুধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই যোগ্য?
৫. এবি নেগেটিভ (এ-আ’লীগ, বি-বিএনপি) রাজনীতি থাবা থেকে বাঁচতে বাম বা তৃতীয় শক্তির উত্থানের কথা থাকলেও বামশক্তির প্রভাব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করাটা সম্ভব কিনা?

Muhammad Noman, Australia   
Both Parties have to understand the basic tone of it`s people. There are no ways to be back to pakistan/or to a concept of it and any suggestion of it will destroy the country.

On the same time, respect to the system and to understand that the leaderships are to serve the people not just the party will make a huge impact. It is the people of Bangladesh which are important, not  the party. A party is a mechanism to reach the people to serve in a greater way.

Ideologically, placing people with merit, knowledge and academic result into party’s leaderships will gradually decrease the flow of un-wanted people into politics to earn money by muscle. There is great deal of partisans who have no acceptable academic background that they can use in personal life if they are not into politics. To be involved in politics need to be a job now, just to implement economic transitions, not to be a great speech deliver.

পলাশ, বগুড়া
আমাদের বড় যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তারা নিজেরাই জানে না যে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। আসলে দেশের জন্য কেউই ভাবে না। যদি দেশটাকে তারা সবার উপরে রাখতো তাহলে আমাদের দেশটার আজ এই অবস্থা হতো না। আসলে আমাদের একটা ‘ফাটাকেষ্ট’ দরকার। ‘মারবো এখানে লাশ পড়বে শশ্মানে’।

বেলাল বিন আঃ কুদ্দুছ
মক্কা, সৌদি আরব
স্যার সালাম নিবেন। আমার প্রশ্ন হল অনির্বাচিতদের দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক করা যাবে না বলছে আদালত। অথচ আদালত এবং নির্বাচন কমিশন দুটোই অনির্বাচিতদের দ্বারা গঠিত। এটা কি স্ববিরোধিতা নয়? সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করতে হলে সাথে সাথে  বিরোধীদলেরও সমালোচনা করা বাধ্যতামুলক কিনা?
Obaidul Haque, Dhaka
Thanks sir for good comments. But I want to know how to avoid AL & BNP.   

No comments

Powered by Blogger.