‘সাঈদীর কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ by আবদুল মান্নান

অনেকের কাছে এটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে যে দেশে যখন ুমানবতাবিরোধী আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার চলছে তখন একাত্তরের ঘাতকদের দল জামায়াতে ইসলামীর নতুন প্রজন্মের বাচ্চা আল বদররা প্রকাশ্যে সেøাগান তুলতে পারে:‘সাঈদীর কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ অথবা ‘ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করো’।
এই সেই সাঈদী যিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছিলেন, নিজে প্রত্যক্ষভাবে নিরীহ মানুষ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধশেষে পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়ার বদান্যতায় দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া আল্লামার পদবি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ ও তফসিরের নামে পবিত্র কোরানের অপব্যাখ্যা করে বেড়িয়েছেন এবং এক সময় জামায়াতের নায়েবে আমির হয়েছেন এবং জামায়াতের সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের পবিত্র জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছেন। তিনি এবং তার গুরুরা মনে করেছিলেন, তাদের জীবনটা এভাবেই বেশ আনন্দ-ফুর্তিতে কেটে যাবে, তাদের কেউ কেউ মন্ত্রী হবেন এবং দেশকে পর্যায়ক্রমে একটি তালেবানি রাষ্ট্র বানাবেন। কিন্তু বাদ সাধল ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয়। নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছিল সরকার গঠন করতে পারলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। দেরিতে হলেও তারা সেই বিচার শুরু করেছিল। যেহেতু এ রকম একটা বিচার সম্পর্কে বাংলাদেশের কোন পূর্ব ধারণা ছিল না সেহেতু শুরুতে কিছুটা সমস্যা তো হয়েছিলই।
বিচার শুরুর প্রথম থেকেই জামায়াত তো এই বিচারেরর বিরুদ্ধাচরণ করছেই; একই সঙ্গে তারা সঙ্গে পেয়েছে তাদের অন্যতম বৃহত্তম মিত্রদল বিএনপিকে। শুরুটা করেছিলেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনÑ যখন তিনি বললেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে সে সব অপরাধের বিচার বাংলাদেশের সাধারণ ফৌজদারি আদালতেই করা সম্ভব। বেগম জিয়া বললেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে। তিনি ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার এক জনসভায় অভিযুক্ত গোলাম আযম-নিজামী গংকে রাজবন্দী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের মুক্তি দাবি করেন। এতে জামায়াত আরও একটু বেশি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই বিচার ব্যবস্থাকে বানচাল করার জন্য বর্তমানে অনেক বেশি সক্রিয়। দেশের বাইরে তো কোটি কোটি ডলার খরচ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেই, দেশের ভেতরেও তারা কিছু সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও মিডিয়াকে ক্রয় করে নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। একদিন তো একজন পেশাদার টকশো বিশারদ অবলীলায় বলেই ফেললেনÑসাঈদী সঠিক অর্থে কোন যুদ্ধাপরাধী নন। প্রথম পর্যায়ে তার বিচার না করলেও চলত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে যেসব আইনজীবী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আদালতে মামলা লড়েছিলেন পরবর্তীকালে তাদেরও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। বাংলাদেশেও এখন দাবি তোলা যেতে পারেÑ যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেন আগামীতে তাদেরও বিচার করতে হবে। মতলববাজরা কথায় কথায় বলেন, আগে আওয়ামী লীগের ভেতরের যুদ্ধাপরাধী যারা আছেন তাদের বিচার করতে হবে। তাদের মনে রাখা ভাল, কেউ কখনও বলেনি যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোন যুদ্ধাপরাধী থাকে তাদের বিচার করা যাবে না। এখন একজন যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধী যে দলেরই হোক সে যুদ্ধাপরাধী। এখানে বর্তমানে কে কোন্ দল করল তা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক।
অনেক বিএনপি সমর্থক এটি অস্বীকার করবেন যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াত বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়েছে এবং সম্প্রতি বিএনপি অনেকটা জামায়াতের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। জামায়াতের প্রায় সকল শীর্ষ নেতাই বর্তমানে হয় বিচারের মুখোমুখি অথবা পলাতক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহার দেখে তারা এটা বুঝে গিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলে তাদের দলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এটি জেনেই তারা বিএনপির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। বর্তমান বিএনপি বা আঠারো দলীয় ব্যানারে যত সভা-সমবেশ হয় সেসব সমাবেশে অধিকাংশ লোক-সমাবেশের দায়িত্ব নেয় জামায়াত এবং এই সব সমাবেশের সকল ব্যয়ভারও তারা বহন করে তারাই। বাংলাদেশে অন্য সব দলের কার্য পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহে সমস্যা থাকলেও জামায়াতের সেই সমস্যা কখনও ছিল না। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণে যে সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আছে তা থেকে তারা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। দেশের বাইরে আছে তাদের অনেক সুহৃদ, যারা দুহাত উজাড় করে তাদের অর্থ সাহায্য করে। বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচারকে বানচাল করতে দেশের বাইরে কমপক্ষে ২২৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে । তারা তাদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট নেতা ইহুদী আইনজীবী টোবি ক্যাডমেনকে প্রতি ছয়মাসে বাংলাদেশী টাকায় এক শ’ নব্বই কোটি টাকা পরিশোধ করে। তিনি পূর্ব লন্ডনের জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মসজিদে বাংলাদেশে জামায়াতী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিকবার ফতোয়া দিয়েছেন। ক্যাডমেন নিজামীর ছেলে নাকিবুর রহমান নিজামীকে নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় তদবির করে বেড়াচ্ছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রশ্নবিব্ধ করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। অনেকে প্রশ্ন করবেনÑ ইকোনমিস্ট, ওয়ালস্ট্রীট জার্নাল অথবা নিউইয়র্ক টাইমসকে কি অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত করা যায় ? উত্তর হচ্ছে, সেটি অনেকাংশে নির্ভর করবে অর্থের পরিমাণ কত এবং লবিস্টের যোগ্যতার ওপর। বর্তমানে বাস্তবে জামায়াত যত না একটি রাজনৈতিক দল তার চাইতে বেশি একটি এনজিও হিসেবে কাজ করছে।
বিএনপি বর্তমানে অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে। আর জামায়াত ছাড়া অন্য যে দলগুলো আছে সেগুলো অনেকটা হোন্ডা, মানে ওয়ানম্যান পার্টি। এই দাবি আদায়ের জন্য যখনই বিএনপি সভা-সমাবেশ আহ্বান করে তখন আগে থেকেই মাঠ দখল করে রাখে জামায়াত-শিবির। প্রথম প্রথম তারা যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তি দাবি করে সেøাগান দিত। তারপর তারা এই দাবি সংবলিত লিফলেট বিলি করা শুরু করে। বর্তমানে তারা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হওয়া শুরু করেছে এবং তথাকথিত আঠারো দলীয় নেতাদের দিয়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য উত্থাপন করার এবং এর জন্য তারা অঢেল অর্থ ব্যয় করে বলে জনশ্রুতি আছে। এই কাজটি প্রথমে শুরু করেছিলেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তারপর তারা তা বিএনপি চেয়্যারপারসন বেগম জিয়াকে দিয়ে বলিয়েছেন। গত ২৪ তারিখের পথসভায় জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান তার এক বক্তৃতায় তারা ক্ষমতায় গেলে গোলাম আযম-নিজামীকে মুক্ত করে তাদের পরিবর্তে শেখ হাসিনাকে কারাগারে ঢোকানো হবে বলে ঘোষণা করেন। ঔদ্ধত্যের একটা সীমা থাকা উচিত। কে এই শফিউল আলম প্রধান? এক সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে মুহসিন হলে সেভেন মার্ডার কেসে অভিযুক্ত হলে তাকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করে এবং যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের সকল কারাগার হতে দ-প্রাপ্ত অথবা বিচারাধীন সকল আলবদর, রাজাকার, চোর, ডাকাত, বাটপাড়কে মুক্ত করে দেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এদের সহায়তা ছাড়া তার কোন রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই। এদের সঙ্গেই শফিউল আলম প্রধানরা ছাড়া পেয়ে বর্তমানে তিনি বেগম জিয়ার ছায়াসঙ্গী এবং জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। সব চাইতে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন নায়ক এবং বঙ্গবন্ধুর একান্ত স্নেহধন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমও মাঝে মাঝে বেগম জিয়ার ভাষায় যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেন; যদিও তিনি ঘোষণা করেছিলেনÑবিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা হতে উৎখাত করার জন্য বেগম জিয়ার পতাকাতলে সমবেত হবেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তার কেন এত ক্ষোভ তা বোঝা যায় না। শেখ হাসিনাকে কখনও কিন্তু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে শোনা যায় না।
ইতোমধ্যে জামায়াত-শিবির তাদের সকল কর্মকা-ে বিএনপির সকল নৈতিক সমর্থন পেয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের শহরকেন্দ্রিক গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তাদের প্রথম টার্গেট পুলিশ এবং এর পরে হয়ত হবে রাজনীতিবিদ অথবা সুশীল সমাজের ওই সব ব্যক্তি যারা জামায়াতের রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি নৈতিক অবস্থান নিয়েছেন। গত ২৬ তারিখে বেগম জিয়ার ঢাকার পথসভায় বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তারা সেøাগান তুলেছে ‘সাঈদীর কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ ‘ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও হবে’। তারা এসব সেøাগান তুলে বেগম জিয়ার উপস্থিতিতেই। রাতের বিভিন্ন টকশোতে যখন বিএনপিপন্থী একাধিক বুদ্ধিজীবী অথবা নেতাকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তারা অনেকটা লাজবাব হয়ে যান অথবা এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গত বছর অক্টোবর মাসে ঢাকায় বিএনপি তথা নয়া পল্টনের ১৮ দলীয় জনসভায় যখন প্রথমবারের মতো জামায়াত-শিবির তাদের নেতাদের মুক্তি দাবি করে প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয় এবং পরে তারা মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের বিরাট উপস্থিতি ঘোষণা করে। সেই রাতের একটি টিভি টকশোতে এক বিএনপি নেতার কাছে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল । জবাবে তিনি বলেছিলেন, সভায় কোন প্ল্যাকার্ড ছিল না। জামায়াত-শিবির শুধু কিছু লিফলেট বিলি করেছিল । এখন সেই নেতাকে কোন এক টিভি চ্যানেল ডাকলে তখন তিনি কি বলেন তা দেখার বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে, যদিও বিএনপি বলছে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে। আসলে তাদের সেই আন্দোলন অনেকটা ছিনতাই হয়ে গেছে জামায়াতের কাছে। এই যে ঘরে ঘরে আগুন জা¡লানোর কথা জামায়াত বলছে, আগামীতে যখন সত্যি সত্যি তারা শুধু ঘরে ঘরে নয়, দেশে আগুন লাগাতে আসবে তখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে সে আগুন লাগানোর কর্মকা-ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা যতই তাদের দলের পক্ষে সাফাই গাক, বাস্তবতা হচ্ছেÑজামায়াত বর্তমানে যে অপ্রতিরোধ্য অবস্থানে এসেছে তাদের সে সুযোগ করে দিয়েছে বিএনপি, যে দলটিতেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন।
বর্তমানে জামায়াত যে এতদূর আসতে পেরেছে তার জন্য সরকারকেও কিছু দায়দায়িত্ব নিতে হবে । যে জামাই আদরে গোলাম আযম-নিজামী গংকে কারাগারে রাখা হয়েছে সেটি কখনও উচিত ছিল না। বিশ্বের কোন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামিদের এত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না। ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিরুদ্ধে অপরাধীদের আপীল করার সুযোগ দেয়া হয়েছেÑ এটিও একটি বিরল ঘটনা । সেদিন তুরস্ক হতে এসে জামায়াতের মাতৃসংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের ১৪ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে ঢুকে বিচারকার্য দেখতে এবং শুনতে দেয়া হয়েছে; তারা আসামি ও তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, লোক দেখানোর জন্য আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। অথচ তারা এদেশে এসেছেন অন এ্যারাইভেল পর্যটন ভিসা নিয়ে। ট্রাইব্যুনাল কোন পর্যটন কেন্দ্র নয়। তাদের কোন পূর্বানুমতি ছাড়া ট্রাইব্যুনালে কেন ঢুকতে দেয়া হলো তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন। যারা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন তারা কার কর্মচারী বা কাদের স্বার্থ রক্ষা করেনÑ প্রজাতন্ত্রের না জামায়াতের? ট্রাইব্যুনালের এই শিথিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে একদিন যদি কয়েক আত্মাঘাতী জামায়াত কর্মী ট্রাইব্যুনালে ঢুকে পড়ে তখন কি হবে? এসবের তো একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।
জামায়াত স্বাভাবিক কারণেই যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবে। এতে তারা সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে বিএনপিকে। এই বিচার যত দ্রুত শেষ হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। আর অনেক সময় সরকারের কিছু কিছু মন্ত্রীর অতিকথন বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে। তেমনটি ঘটতে থাকলে তাহলে ব্যারিস্টার মওদুদের বক্তব্যই সঠিক প্রমাণিত হবে। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, সরকারের ভেতরই কিছু লোক বিচারকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। এই ব্যাপারে সরকারের কোন বক্তব্য থাকলে তা বলার জন্য সরকারের একজন মুখপাত্র থাকা একান্তভাবে বাঞ্ছনীয়।
সকল পাঠককে খ্রীস্টিয় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক। ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

No comments

Powered by Blogger.