অপচিকিৎসার বলি-বৈদ্যের লাগানো আগুনে জ্বলে শেষ রুশনী

চিকিৎসার নামে কথিত বৈদ্যের লাগিয়ে দেওয়া আগুনের যন্ত্রণায় চার দিন ভুগে অবশেষে মারা গেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী তানজিনা জাহান রুশনী (১৬)। গত মঙ্গলবার আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার এয়াকুবদণ্ডী এলাকার স্থানীয় এয়াকুবদণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আগামী বছর তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের আবু জাফরের মেয়ে রুশনী প্রায় এক মাস আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এ সময় তার পরিবার তাকে পড়া পানি, ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসা করায়। এতে সে সুস্থ না হওয়ায় ফুফু শেকু আকতারের পরামর্শে তাকে স্থানীয় মনসুর বৈদ্য নামের এক ব্যক্তির কাছে নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার সকালে ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে রুশনীর চিকিৎসা শুরু করে মনসুর বৈদ্য। এতে রুশনীর অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় সে একটি নির্জন ঘরে মোমবাতি, আগরবাতি, আমপাতা, জবা ফুল ইত্যাদি দিয়ে একটি আসন তৈরি করে। একটি শাড়ি পরিয়ে জ্বলন্ত মোমবাতির সামনে রুশনীকে বসিয়ে দেয় ওই বৈদ্য। এরপর সেই মোমবাতি রুশনীর শরীরের চারপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাতাসহ আমের ডাল দিয়ে তাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে মোমবাতির আগুন রুশনীর শাড়িতে লেগে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রুশনীর আর্তচিৎকারে বাইরের লোকজন ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলেও বৈদ্যের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস তাদের ঢুকতে দেয়নি। সে বলতে থাকে, 'ঘরে ঢোকা যাবে না। এখন জিন চলে যাচ্ছে। সে জন্যই রুশনী চিৎকার করছে।' এরই এক ফাঁকে কেটে পড়ে বৈদ্য দম্পতি। আশপাশের লোকজন তখন ঘরে ঢুকে রুশনীকে উদ্ধার করে পানি দিয়ে আগুন নেভায়। ততক্ষণে পা থেকে গলা পর্যন্ত ঝলসে গেছে রুশনীর। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে বোয়ালখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন আগুন-যন্ত্রণার পর গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মারা যায় রুশনী। ময়নাতদন্তের পর রুশনীর লাশ গতকাল বিকেল ৩টায় পটিয়ার গ্রামের বাড়ি আনা হয়। বিকেল ৫টায় স্থানীয় মোগলপাড়া জামে মসজিদে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রুশনী ছিল তৃতীয়। এ ব্যাপারে তার বাবা আনোয়ারা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর বাদী হয়ে মনসুর বৈদ্য ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
রুশনীর বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার রুশনীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার মেয়ের মতো হাতুড়ে বৈদ্যের হাতে আর যেন এভাবে কেউ না মরে।'
এয়াকুবদণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'রুশনী লেখাপড়ায় খুবই ভালো ছিল। অপচিকিৎসার কারণে আমরা তাকে অকালে হারালাম।'
বোয়ালখালী থানার ওসি জহিরুল হক সবুজ জানান, আসামি ভুয়া বৈদ্য দম্পতিকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.