ভাড়া করা সড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত

ভাড়া করা সড়ক দিয়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ১১ গ্রামের শিশুদের জন্য ওই একটিমাত্র বিদ্যালয়।
নাম সাহাব্দীপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সড়কের ভাড়া নবায়ন করতে না পারলে এই জানুয়ারিতে তাদের আলপথে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের বিল এলাকার সাহাব্দীপুর, ভাটা, মোলাইন, জোতজয়রামপুর, আয়নাপুর, রসুলপুর, লালখা, কালুখা, সারং, বেলপুকুর ও তালপকুর গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই দেখে এলাকার লোকজন ২০০১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। গ্রামগুলোর ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। শুরুতে বিদ্যালয়টির পাকা ভবন ছিল না। একটি ভাঙা ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। আর বাড়ি ফিরতে হতো আলপথে। তখন বিদ্যালয়টির নিবন্ধনও ছিল না। এই দুরবস্থা নিয়ে ২০০৭ সালে প্রথম আলোয় ‘১১ গ্রামের এক বিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিদ্যালয়টির নিবন্ধনের ব্যবস্থা হয়। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর করে দেয়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন কক্ষের অপর একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম বলেন, এলাকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে তাঁরা বিদ্যালয় স্থাপনের জমির ব্যবস্থা করতে পারলেও বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তার জমি জোগাড় করতে পারেননি। এ জন্য শুরু থেকেই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলপথে বিদ্যালয়ে ঢুকতে হতো। গত এক বছরের জন্য তাঁরা রাস্তার জমিটুকু ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন। এই ভাড়ার টাকা নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদার দিয়েছেন। তাঁদের পক্ষে টাকা দিয়ে আর ভাড়ার মেয়াদ নবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। জমির মালিক কিছুতেই রাস্তার জন্য জমি ছাড়তে রাজি হননি। তিনি বলেন, বিক্রি করলেও তাঁরা গোটা গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে রাস্তার জমিটুকু কিনে নিতে পারেন। মালিক তাতেও রাজি নন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবাইদুল হক জানান, এই বিদ্যালয়টি হওয়ার আগে গ্রামগুলোর দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ শিশু দূরের বিদ্যালয়ে না গিয়ে খেতের কাজ করত। এখন তারা এই বিদ্যালয়ে আসে। চার বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপানী পরীক্ষায় শতভাগ পাস করছে। তিনি জানান, জমির আলের ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসার সময় প্রথম শ্রেণীর ছোট ছোট শিশু প্রায়ই নিচে পড়ে গিয়ে কাদা-জলে ভিজে বাড়িতে ফিরে যায়। বৃষ্টি হলে বড় বাচ্চাদেরও এ সমস্যা হয়। তিনি জানান, এক থেকে দেড় হাজার বর্গমিটার জমি পেলেই তাঁরা সরকারি রাস্তায় উঠতে পারবেন।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এখনো ভাড়ার রাস্তাই ব্যবহার করছে। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইথুন বাবু বলে, ‘রাস্তাটার ব্যবস্থা না করলে আমহারকে আবার আগের সেই কষ্ট করতে হবে।’
গোদাগাড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহাম্মেদ জানান, বিদ্যালয়টির রাস্তার সমস্যার বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে জমির মালিককে বোঝাতে না পারলে তাঁরা কিছু করতে পারছেন না।

No comments

Powered by Blogger.