পাহাড়ে আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা কে দেবে?- ধর্ষিত ও উপেক্ষিত

দিল্লির সেই কন্যাসাহসিকা মারা গেছেন, এই খবর আমরা জানি। কিন্তু খবর কি রেখেছি, প্রায় একই সময়ে এক পার্বত্য কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল! দিল্লি থেকে ঢাকা, সমতল থেকে পাহাড়—সবখানেই ধর্ষণের সংস্কৃতি।
এর মধ্যে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের বর্তমান অবস্থা সমতলের থেকেও বেশি বিপন্ন।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোরী তুমা চিং মারমা বাড়ির কাছেই ধর্ষিত ও নিহত হয়। মা তাকে বিকালবেলা পালিত গরুগুলো আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে আর ফেরেনি। ঘটনাটা ২১ ডিসেম্বরের। অথচ এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এর কয়েক মাস আগে, লংগদু উপজেলার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুজাতা চাকমাও একইভাবে গরু আনতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। অভিযুক্ত স্থানীয় যুবক মো. ইবরাহিম একই এলাকার অন্য এক পাহাড়ি শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আট মাস জেলে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় ২২টি, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ১৭টি করে নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার শুনানি হয়েছে বান্দরবানে দুটি এবং রাঙামাটিতে চারটি। বান্দরবান ও রাঙামাটিতে দুটি করে মামলার রায় হলেও কোনো দোষী ব্যক্তির সাজা হয়নি। অন্য একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২১ জন। ২০১১ সালে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন। সংখ্যাটি কেবল বাড়ছে, কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পরিসংখ্যান হতাশাজনক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঙালি যুবকদেরই আদিবাসী নারী ও শিশুদের ধর্ষক হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। বাঙালি বনাম পাহাড়ি সংঘাত ও রেষারেষির শিকার এসব নারী। যে আদিবাসী সমাজে ধর্ষণ শব্দটির অস্তিত্ব নেই, যেখানে পাহাড়ি পুরুষদের আদিবাসী বা বাঙালি কোনো নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার রেকর্ড প্রায় শূন্য, সেখানে এ রকম হারে আদিবাসী নারীদের ধর্ষিত ও নিহত হওয়া দুঃখজনক। ধর্ষণের পুরুষালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ভারত আজ উত্তাল, দেরি হওয়ার আগেই আমাদেরও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.