পৌরসভাগুলোয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে পাইপ নেটওয়ার্ক- মাঠ পর্যায়ে নিরাপদ পানি নিশ্চিত হবে ॥ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ৫৩ লাখ by হামিদ-উজ-জামান মামুন

 দেশের পৌরসভাগুলোকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে পাইপ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে মাঠ পর্যায়ে জনসাধারণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।
এছাড়া ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ হ্রাস পাবে, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা ধারণক্ষম করার জন্য পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণ উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন এন্ড ওয়াটার সাপ্লাই ইউথ পাইপ নেটওয়ার্ক ইন থানা সদর এ্যান্ড গ্রোথ সেন্টার পৌরসভা (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প উঠছে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।
এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। অনুমোদন পেলে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)।
সূত্র জানায়, নিরাপদ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। জনগণের যে অংশ নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে, তাদের জন্য মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এ (এমডিজি) বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে গ্রামের মফস্বলের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল জনগোষ্ঠী নাগরিক সুবিধাসহ সুন্দর জীবনযাপনের জন্য বড় শহরগুলোতে আবাস গড়ছে। অপরপক্ষে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রজনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত বড় শহরগুলোতে চলে আসছে। ফলে সেখানকার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি ও পরিবেশ দূষণ ঘটছে।
এরকম পরিস্থিতিতে দেশের থানা ও গ্রোথ সেন্টার পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভাগুলোতে নাগরিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করলে বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যার চাপ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নাগরিক সুবিধাদির অন্যতম উপাদান হচ্ছে চলমান পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নিরাপদ পানি প্রাপ্তির মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পৌরবাসীকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। চলমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সকল কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহারে উৎসাহিত করে না এবং পানিবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে খুববেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। পানি আহরণ অপক্ষোকৃত কষ্টসাধ্য হওয়ায় অধিকাংশ জনগণ সকল কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করে না। যার পরিণতিতে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপুল অর্থের অপচয় হয়। ভাল স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে জনগণের কাছে সুপেয় পানি সহজলভ্যকরণ, এনভায়রনমেন্টাল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন, পানিবাহিত রোগের প্রকোপ হ্রাসকরণ তথা সুষ্ঠু বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সার্বিক জীবন মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বলা হয়েছে নগরায়নের ফলে পৌরসভাগুলোতেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা মোটানো জরুরী। তাই নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ এবং সুষ্ঠু পয়নিষ্কাশনের সুবিধাদি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অধিকন্তু পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে ধারণক্ষম করার জন্য সংশ্লিস্ট স্টেকহোল্ডারদের দক্ষতা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অধিকাংশ পৌরসভাই পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে আনসেভড এবং আন্ডারসার্ভড এলাকার। তাই এ সকল এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) এবং ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর এক্সসিলারেট পর্ভাটি রিডাকশন-টু এর সঙ্গে যুক্ত।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১ জুন ৮৩টি পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিবেচ্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হয়। এ সময় ওই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রথম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ৩৮টি পৌরসভাকে বাদ দিয়ে বাকি ৪৫টি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত করে থানা সদর ও গ্রোথ সেন্টারে অবস্থিত পৌরসভাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে তা আবার আগামী একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.