আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ।।গণরায় মেনে নেব- ভাল লাগলে জনগণ আমাদের ভোট দেবে ্রতত্ত্বাবধায়ক পুনর্প্রবর্তনের কোন সুযোগ নেই ্রসুযোগ সন্ধানীদের নির্বাচনের আগে দলে ভিড়তে দেবেন না ্রযুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে দেশকে- কলুষমুক্ত করা হবে

 প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির যে ধারা আমরা রাখছি, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণের ভাল লাগলে আমাদের ভোট দেবে, না হলে তারা যে রায় দেবেÑ সেটা আমরা মাথা পেতে নেব।
কিন্তু মানুষের ভোট ও সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। পৃথিবীর সব সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদের দেশেও সেভাবেই হবে। প্রায় ৫০ হাজার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পারলে কেন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারব না। অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে আমরা দেশকে আর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারি না।
অতীতে যারা দেশকে সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী ও দুর্নীতিবাজের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল তাদের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বার বার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে, যারা খুনীদের মদদ দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে, জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে, সেই বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষের কল্যাণ চায় না, চাইতেও পারে না। জনগণও তাদের চায় না। এদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনী রশিদ-ফারুকদের নিয়ে সংসদে মধ্যরাতে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাস করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়। তত্ত্বাবধায়কের পরিণতি ওয়ান ইলেভেনে দেশবাসী দেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আবারও ওই ধরনের ঘটনার শিকার হোক আমরা তা চাই না। খুনীদের নিয়ে পাস করা ওই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল বলেই ওয়ান ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় এসে আর যেতে চায়নি। তত্ত্বাবধায়কের নামে তারা নিজেদের টেককেয়ার করেছে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। দেশের জনগণ আর অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় না। অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেশকে আবারও আমরা পিছিয়ে দিতে পারি না।
আগামী নির্বাচনের আগে সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে সজাগ থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে। কিন্তু জনগণের সামনা-সামনি দাঁড়ানোর সাহস নেই। রাজনৈতিক দল করে জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যাবারও সাহস নেই। তাই তারা অলিগলি ও অন্ধকারের চোরাপথ দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারাই জনগণকে বিভ্রান্ত করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আমরা আর কাউকে কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।
সরকারের চার বছরের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে, নিতে নয়। মানুষ যখনই নৌকায় ভোট দিয়েছে, তখনই কিছু পেয়েছে। স্বাধীনতা, মাতৃভাষা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য চিকিৎসাসহ মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা চাই এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক।
নির্বাচনের এক বছর আগে সুযোগসন্ধানীদের দলে না ভেড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলে কাউকে স্থান দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু লোক আছে তারা সব সময়ই ‘সরকারী দল।’ এখন যেহেতু আমরা ক্ষমতায় আছি, অনেকেই খোলস বদলে দলে এসে অপকর্ম করে আমাদের নামে বদনাম দেয়ার চেষ্টা করবে। এদের দলে নেবেন না। যে আস্থা-বিশ্বাস জনগণ আমাদের ওপর রেখেছে, সেটাকে অটুট রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।
‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনবদলের প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’Ñ এই সেøাগানে শনিবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য ও মনোলোভ জাতীয় সম্মেলন করে শাসক দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১টায় সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে বিপুল করতালি ও ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের মাধ্যম তাঁকে স্বাগত জানান সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। এ সময় শেখ হাসিনা জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শেখ হাসিনা শান্তির প্রতীক পায়রা ও রঙ-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়করাও একই সময় নিজ নিজ পতাকা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও কবুতর উড়ান।
উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতেই ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই তিনটি গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর বান্দরবানের নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা নৃত্যসহযোগে বাংলাসহ পার্বত্যাঞ্চলের ১২টি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির গান’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেন নৃত্যের মাধ্যমে।
পরে মহাজোট সরকারের চার বছরের উন্নয়ন কর্মকা-ের মধ্যে ‘নৌপথের নাব্যতা অর্জন’ ও ‘বদলে যাওয়া ঢাকার চিত্র’ শীর্ষক দুটি প্রামাণ্যচিত্র পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে দেখানো হয়। এরপর পবিত্র কোরান, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এরপরে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ও বরেণ্য ব্যক্তিসহ আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর মৃত্যুতে ৪৩ পৃষ্ঠার শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুর মান্নান খান। এ সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শোক প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হয়।
স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ১২০ ফুট দীর্ঘ নৌকার আদলে তৈরি সুসজ্জিত মঞ্চে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা বসেন। মঞ্চের দু’ধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা দুটি বিশাল প্রতিকৃতি ছাড়াও বামপাশে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শামসুল হক এবং মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এবং ডান পাশে জাতীয় চার নেতার বিশাল বিশাল ছবি শোভা পায়। মঞ্চে ব্যাকস্ক্রিন ছিল গণতন্ত্রের সূতিকাগার জাতীয় সংসদের ছবি তার মাঝে বিশাল ডিজিটাল টেলিভিশন স্ক্রিন। মঞ্চের সামনের বিশাল সামিয়ানার নিচে কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিলসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা ছিলেন দর্শকসারিতে।
মহাজোটভূক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছিলেন জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, গণআজাদী লীগের সভাপতি হাজী আবদুস সামাদ, জাসদের নাজমুল হক প্রধান ও সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স। তবে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোন নেতাকে সম্মেলনস্থলে দেখা যায়নি। বড় ডিজিটাল পর্দার সাহায্যে উ™ে^াধনী অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরোটাই দেখানো হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ছাড়াও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় আড়াই হাজার স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি এসএসএফ, পিজিআর, র‌্যাব ও পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। ৬টি গেট দিয়ে সম্মেলনে আগতদের কঠোর তল্লাশীর পর ভেতরে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়। সম্মেলনস্থলের আশপাশেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।
সকাল ১১টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাউন্সিলর, ডেলিগেট এবং আমন্ত্রিত অতিথিরাসহ দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্মেলনস্থল পরিণত হয় জনারণ্যে। মূল প্যান্ডেল ছাপিয়ে পুরো সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানই লোকে-লোকারণ্যে পরিণত হয়। এ সময় সেখানে ছিল উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন রকম সেøাগানে মুখরিত ছিল সম্মেলনস্থল। এবারের সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৬ হাজার ৩০০ কাউন্সিলর ও প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ডেলিগেট যোগ দেন।
সম্মেলন অনুষ্ঠানকে বর্ণাঢ্য ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তোরণ নির্মাণ ও ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। সম্মেলনস্থলেও বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতির পাশাপাশি রংবেরংয়ের বেলুন, ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড দিয়ে মনোরম সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জলাধারে হাঁস ও বকসহ বিভিন্ন পাখির দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতিও সবার দৃষ্টি কেড়েছে।
৩০ মিনিটের উ™ে^াধনী ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সব শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শামসুল হক এবং মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশসহ প্রয়াত নেতাদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন কেবল নিয়মরক্ষার সম্মেলন নয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করা হবে। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি ও মানুষের দল। এ দলের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতাসহ অর্থনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এসেছে। আমরা এখন দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ সবসময়ই জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক ও জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে বিশ^াস করে। রাজনীতি করতে গিয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আগামীতে মানুষের অধিকার আদায়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হবে।
শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে বাংলাদেশকে কলুষমুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করে বলেন, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, নানা হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি কথা স্পষ্ট বলতে চাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। যারা তাদের বাঁচাতে চান, তাদের বলব, এ চিন্তা থেকে দূরে সরে যান। একাত্তরে গণহত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করবেন না, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তাঁকে দলের সভানেত্রী করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এ দলের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা এসেছে, দল ভেঙ্গেছে। তারপরও আপনাদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুসংগঠিত দল।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থাশীল। আমাদের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের আয় বাড়িয়েছি। গণতন্ত্র সুসংহত ও মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন রেকর্ড নেই যে, একটি সরকার ক্ষমতায় থাকে আর মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ডেকে দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে সে স্বাধীনতাও দিয়েছি। বর্তমান সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত ৪৯ হাজার ৯৮টি নির্বাচনের একটিতেও সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ কোন কথা বলতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনকেও আমরা আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছি।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সর্বক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। এই শুভযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণ আগামী নির্বাচনে যে রায় দেবে তা মাথা পেতে নেব। কিন্তু জনগণের ভাগ্য ও ভোটের অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।
স্বাগত ভাষণে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী যে কোন পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চক্রান্ত চলছে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় আনার। ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালেরও ষড়যন্ত্র চলছে। এসব কিছু মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে বিশে^র কাছে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পেরেছে। হাওয়া ভবনের টালমাটাল হাওয়া জনগণ বর্জন করেছে। তিনি দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে কলঙ্কমুক্ত হতে চান, নাকি স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখতে চান? সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিচার চলছে। আশাকরি ন্যায়বিচার পাব। এ বিচারে যে রায় হবে, তা বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হবেই। পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই, এ বিচার বানচাল করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস। বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। আজকের এ সম্মেলন হবে আগামী দিনের ইতিহাসের অংশ। সরকারের আগামী এক বছরে নির্বাচনী সব প্রতিশ্রুতি একে একে বাস্তবায়ন হবে।
এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই জনগণকে ধোঁকা দেয় না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস প্রতিশ্রুতি রক্ষার ইতিহাস। আমরা ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধন করে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করেছি। বাংলার মাটিতে অবৈধ অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখলের কোন স্থান নেই। তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও জিততে দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে আগামী দু’মাসের মধ্যে সব জেলায় সম্মেলন করার তাগিদ দিয়ে বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের বিকল্প নেই। দল শক্তিশালী অবস্থায় থাকলে আগামী নির্বাচনে জয় লাভ সহজ হবে। এতে আওয়ামী লীগ আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.