ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব- গণিত দিয়েই বিশ্বজয়ের অঙ্গীকার by আবু তাহের

মা কষ্ট পায়—এমন কাজ না করা আর গণিত দিয়েই বিশ্বজয়ের অঙ্গীকার করল খুদে গণিতবিদেরা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফেনী অঞ্চলের গণিত উৎসব-২০১৩-এ গতকাল শনিবার ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ওই অঙ্গীকার করে।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় এ উৎসব হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে উৎসবের শুরু হয়। উদ্বোধন ঘোষণা করেন ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. খালেদ রহিম।
কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা অদম্য গণিতপ্রেমীদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর থেকে ভোর পাঁচটায় বের হয়ে উৎসবে যোগ দেয় লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইশতিয়াক কামাল। পথে তিনবার বাস পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকে। প্রতিজ্ঞা—গণিতকে জয় করতেই হবে। ফলও হয়েছে তা-ই। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পেরেছে। ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী গণিত উৎসবে অংশ নেয়। সকাল ১০টা থেকে সোয়া ঘণ্টা চলে গণিত অলিম্পিয়াড। বিকেল তিনটায় প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে ১১ জন, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ১২ জন, মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে ১৫ জন, উচ্চমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে ১২ জনসহ মোট ৫০ জনকে জাতীয় অলিম্পিয়াডের জন্য মনোনীত করে তাদের ক্রেস্ট, সনদ ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। বিজয়ীরা আগামী ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় উৎসবে যোগ দেবে। অনুষ্ঠানে চারটি ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফেনী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাফায়েত উল্লাহ। সে উচ্চমাধ্যমিক ক্যাটাগরির। প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে নোয়াখালী জিলা স্কুলের আবরার জামিল, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফেনীর ছাগলনাইয়া একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবরার আবদুল্লাহ এবং মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসাদুজ্জমান তানজিম। খাতা মূল্যায়নের ফাঁকে চলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা কত, ৬৪-কে সুপার পারপেক্ট নম্বর বলা হয় কেন, পৃথিবীতে কখন-কোথায় পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হয় ইত্যাদি।
খুদে গণিতবিদেরা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। দীর্ঘ সময় তারা প্রিয় স্যারকে ঘিরে রেখে সনদপত্রে, প্রবেশপত্রে এমনকি টি-শার্টের বুকে-পিঠে অটোগ্রাফ আদায় করে। চলে ছবি তোলার হিড়িক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মো. খালেদ রহিম বলেন, গণিত উৎসবে খুদে গণিতবিদদের সমাবেশ ও উৎসাহ দেখে আনন্দ লাগছে। তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘গতকাল (আজ শনিবার) আমার লেখা কাজলের দিনরাত্রি ছবির প্রিমিয়ার শো প্রদর্শিত হয়েছে। আমি তাতে যোগ না দিয়ে তোমাদের কাছে ছুটে এসেছি। তোমাদের দেখে আমার আনন্দ হয়। তোমরা হচ্ছ সঠিক, আমরা ভেজাল। তোমরা আমাদের দেশের দায়িত্ব নেবে।’
ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, ‘এ ধরনের উৎসবের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পেরে আনন্দবোধ করছি। এতে লাভ দুটি। একটি হচ্ছে আমরা আনন্দ উপভোগ করছি, অন্যটি হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণিত সম্পর্কে জানা-বোঝার সুযোগ পাচ্ছে।’
আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক হাম্মাদ আলী, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, ফেনী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আফতাব উদ্দিন, প্রথম আলো ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের, ফেনী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ জহির উদ্দিন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর তামিম শাহরিয়ার। পুরো উৎসবে সহযোগিতা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা, ফেনীর সদস্যরা।

No comments

Powered by Blogger.