সোহরাব হোসেন-আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা

কে বলে তিনি নেই...! সঙ্গীতসাধক সোহরাব হোসেন। মৃত্যুর পরও মনে হয় তিনি এখনও বেঁচে আছেন। আমাদের সবার মাঝে, আগামী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তিনি বেঁচে থাকবেন তার অপূর্ব গায়কিতে, নজরুল সঙ্গীতের অপূর্ব সুর মূর্ছনায়, তার সঙ্গীত শিক্ষা ও সাধনায়।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে এই ক্ষণজন্মা শিল্পী শারীরিকভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও বারবার বলতে ইচ্ছে করে_ যেতে নাহি দিব তোমায়! তার মৃত্যুতে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই সঙ্গীতগুরুর অমর কীর্তির চেয়ে অকিঞ্চিৎকর হবে জানি; তারপরও হে সঙ্গীতপ্রেমী, তোমাকে বিদায় বেলায় হাজারো সালাম। ১৯২২ সালের ৯ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় জন্ম নেওয়া সোহরাব হোসেন পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছেন। তৎকালীন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের রক্ষণশীলতা তার বালক মনকে সুরের জগৎ থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারেনি। এজন্য পরিবার তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার পরও তিনি দমে যাননি। এভাবেই তিনি আজীবন সব প্রতিকূলতা জয় করে সুরকেই জীবনের সঙ্গে এক সুতোয় গেঁথে নিয়েছিলেন। নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে তিনি আজীবন নজরুল সঙ্গীতকে ভালোবেসে এর সাধনায় নিমগ্ন থেকেছেন। হাজারো জনকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তার কণ্ঠের ভরাট উচ্চারণ সুরস্রষ্টা, বিদ্রোহী, মানবপ্রেমিক নজরুলকে নানাভাবে, নানারূপে উপস্থাপন করত অনায়াসে। তিনি তার সহজাত সঙ্গীত প্রতিভাকে সংগ্রাম ও সাধনার সঙ্গে যুক্ত করে নজরুল সঙ্গীতকে মানুষের প্রাণের স্পন্দনের সঙ্গে মিলাতে পেরেছিলেন। এখানেই নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও সাধক হিসেবে সোহরাব হোসেনের অনন্যতা। চিরকাল অমায়িক, সদালাপী ও প্রগতিশীলতাকে তিনি চিত্তে ধারণ করেছিলেন। সেজন্যই তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে আনন্দের হিল্লোলধারায় সিক্ত হয়েছেন। অনেককেই তিনি গান শিখিয়েছেন। ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট তার সুর-ছোঁয়ায় ধন্য। তার মৃত্যু আমাদের সঙ্গীত জগতের জন্য নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি। তবে, তিনি তার গাওয়া ও অগণিত শিল্পীর গাওয়া গানের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। তার ভরাট, মধুর কণ্ঠ গানের ভুবনে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা মানুষকে মাঝেমধ্যেই টেনে নেবে।

No comments

Powered by Blogger.