টাঙ্গন খননে অনিয়ম, বালু বিক্রি করছেন ঠিকাদার

শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ ধরে রেখে মৎস্য অভয়াশ্রম সৃষ্টির জন্য ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন নদ খননকাজ শুরু থেকেই যেনতেনভাবে করার অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এখন নদের আশপাশের জমির মালিকের কাছে বালু বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, নদ যে অবস্থায় আছে তা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় দরপত্র অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে না। সাত মাসে ২০ ভাগ কাজও করা হয়নি। তাই বিল ছাড় না করতে পাউবোকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে দেশের মরা নদ-নদী খননে সরকার প্রকল্প হাতে নেয়। তারই অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে সদর উপজেলার টাঙ্গন নদের এক হাজার ১৫০ মিটার খননের প্রকল্প নেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮০ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঐশী এন্টারপ্রাইজ এই কাজ করছে। গত ১৯ এপ্রিল শহরের রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয়ের পেছন থেকে মুন্সিপাড়া কবরস্থান পর্যন্ত পাউবোর তত্ত্বাবধানে খনন শুরু হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ১০টি খননযন্ত্রের মাধ্যমে খননকাজ শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশ যন্ত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন মাত্র তিনটি যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ চললেও বেশির ভাগ সময় সেগুলো সচল থাকে না।
দরপত্র অনুযায়ী, তলদেশ ১০ মিটার প্রস্থ, ওপরে ২৫ মিটার প্রস্থ ও তিন মিটার গভীর করে কাটার কথা থাকলেও বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, এক মিটার সমপরিমাণ গভীর, তলদেশে সাত থেকে আট মিটার প্রস্থ এবং ওপরে ১২ থেকে ১৫ মিটার প্রস্থ করে খনন করা হচ্ছে। বালু কাটতে দুটি ড্রেজার বসানো হয়েছে টাঙ্গন নদের পাকা সেতুর দুই ধারে। আরেকটি বসানো হয়েছে জেলা কারাগারের পশ্চিম দিকে।
জেলা কারাগারের পশ্চিম দিকের ড্রেজারের বালু ফেলা হচ্ছে ৪০০ গজ দূরের রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তির জমিতে। অথচ নদের পাশে পাকা সড়ক ও ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেই জমির সামনে আফজাল হোসেন, শামসুল হক, আবদুল মজিদ, আবুল হোসেন, জাকির হোসেন, মোশাররফ হোসেনসহ আরও ২৫-৩০ জনের নিচু জমি নদের বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য তাঁদের কাছ থেকে ঠিকাদারের লোকজন পাঁচ-ছয় টাকা করে নিয়েছেন।
রফিকুল ইসলাম নামে ওই এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, নদের ৩০ গজের মধ্যে তাঁর পাঁচ শতক জমিতে বালু ভরে দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে ঠিকাদারের লোকজন। টাকা দিতে না চাইলে তারা এখন ওই জমির ২৫০ গজ দূরে অন্যদের জমিতে বালু ভরাট করছে।
অবশ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খননের তদারকে থাকা রাজিউর রহমান দাবি করেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। নদের পাশের জমির মালিকেরা জমিতে বালু ফেলতে নিষেধ করায় দূরে বালু ফেলতে হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে জমিতে বালু ফেলার অভিযোগ ঠিক নয়।

No comments

Powered by Blogger.