সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল বাজারের প্রাক্তন সৈনিক বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডিপিএসের নামে গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই টাকা ফেরতের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বিক্ষোভ করছেন।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাক্তন সৈনিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড জোনাইল বাজারে কার্যক্রম শুরু করে। এতে সাবেক সেনাসদস্য ছাড়াও সাধারণ মানুষকেও এই সমিতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রত্যেক সদস্য সঞ্চয়ী হিসাব খুলে এখানে যেকোনো পরিমাণ টাকা জমা রাখতে পারতেন। এককালীন জমা রাখলে প্রতি সাত বছরে জমানো টাকার দ্বিগুণ ফেরত দেওয়া হতো। এ ছাড়া সমিতি থেকে নির্ধারিত হারে সুদ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করা যেত। এভাবে এ পর্যন্ত সমিতিতে ৪০০ সদস্য ডিপিএস খোলেন।
এ হিসাবে সমিতিতে গ্রাহকদের লাভসহ এক কোটি ২৮ লাখ ৩৬০ টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন সমিতির ব্যাংক হিসাবে মাত্র দুই হাজার টাকা ও গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ দেওয়া বাবদ ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬১ টাকা জমা রয়েছে। মূলধনের ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৬ টাকা সভাপতির কাছে জমা আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশিষ্ট এক কোটি সাত লাখ দুই হাজার ২৯৯ টাকার কোনো হদিস মিলছে না। গ্রাহকদের অভিযোগ, এই টাকা সমিতির কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেছেন।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, সাবেক সৈনিক সমবায় সমিতিকে শুধু তাঁদের সদস্যদের নিয়ে কাজ করার জন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে অন্যায় করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ দেখা যায়। ওই সময় সমিতির শতাধিক গ্রাহক কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে তাঁদের পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁদেরই একজন জহুরুল ইসলাম জানান, সাত মাস ধরে সমিতির কার্যালয় বন্ধ। কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা টাকা দেব-দিচ্ছি বলে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টি বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানানো হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, এ ধরনের আর্থিক লেনদেন করার কোনো এখতিয়ার সমবায় সমিতির নেই। তাই পুরো বিষয়টি সরকারি উদ্যোগে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন জানান, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যাংকের পরিবর্তে টাকা নিজের কাছে রেখেছেন। তাঁরা সমিতির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিচ্ছেন না বলেই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
সভাপতি হজরত আলী টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘পুরো টাকাই গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ দেওয়া আছে। অবশিষ্ট টাকা সমিতির পরিচালকদের কাছে আছে। আমরা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ অবৈধ আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আইন আমার জানা নেই।’

No comments

Powered by Blogger.