সৌদি আরব- তরুণ প্রজন্মের পদধ্বনি?

তেলসম্পদে সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে ঐতিহ্যগত রক্ষণশীলতার কারণে সংস্কারের গতি ধীর। তার পরও মাঝেমধ্যে একেকটি ঘটনায় অচলায়তন নড়ে ওঠে। সে রকমই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি।
সৌদি আরবের ক্ষমতাধর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে ৫ নভেম্বর আকস্মিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন রাজবংশের তরুণতর সদস্য ৫৩ বছর বয়সী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ।
আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও এই পরিবর্তনকে সৌদি আরবে আরও বড় কোনো পরিবর্তনের পূর্বাভাস বলে ধারণা করা হচ্ছে। এত অল্প বয়সে (সৌদি মান অনুযায়ী) এ রকম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় প্রিন্স মোহাম্মদকে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। তিনি কি দেশটির সিংহাসনের উত্তরসূরি হতে চলেছেন?
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের বাবা প্রিন্স মোহাম্মদ নায়েফ আমৃত্যু টানা ৩৭ বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ছেলে মোহাম্মদ দীর্ঘদিন পিতার প্রধান সহকারী ছিলেন। তবে প্রিন্স মোহাম্মদ নায়েফের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে। মাত্র গত জুন মাসে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ পূর্বসূরি প্রিন্স নায়েফের সৎভাই। আহমেদের বয়স এখন ৭২।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর বয়স এখন ৮৯। সদ্য একটি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। সম্ভাব্য উত্তরসূরি প্রিন্স সালমানের বয়সও নেহাত কম নয়—৭৬। তিনি ক্রমশ খেয়ালি ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যহীন হয়ে পড়ছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সাম্প্রতিককালে যে দুজন সরে গেছেন, তাঁদের মতোই এ দুজনও আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদের ছেলে। ৪৫ ছেলের জনক আবদুল আজিজ ১৯৫৩ সালে মারা যান। তাঁর নামেই সৌদি আরবের নামকরণ হয়েছে।
আবদুল আজিজ আল সৌদের ছেলেদের মধ্যে যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের কাউকেই পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে না। সৌদি আরবে সবারই এখন ধারণা, আগামী প্রজন্মের প্রিন্সদের মধ্য থেকেই কোনো একজনকে সিংহাসনে বসাতে হবে। তবে এত দিন পর্যন্ত তাঁদের হাতে খুব কমই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রিন্স মোহাম্মদের পদোন্নতি বেশ জল্পনা-কল্পনার সঞ্চার করেছে। বলা হয়, সৌদি প্রিন্সদের মধ্যে সাধারণত দুর্লভ এমন বিভিন্ন গুণ আছে মোহাম্মদের। তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড জঙ্গি ইসলামপন্থীদের সহিংসতা মোকাবিলায় সাফল্য পেয়েছে। ২০০৩ সালে সৌদি আরবে ওই ‘জিহাদিরা’ আকস্মিকভাবে সহিংসতা শুরু করে। প্রিন্স নিজেও একটি হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। আল-কায়েদা একটি সাজানো সমঝোতা বৈঠকে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
সৌদি মানবাধিকারকর্মী ও সম্ভাব্য সংস্কারপন্থীদের একটি অংশ অবশ্য প্রিন্স মোহাম্মদকে নিয়ে সন্দিহান। কারাগারে বিশৃঙ্খলার জন্য তাঁকে দায়ী করেন ওই সমালোচকেরা। তাঁদের দৃষ্টিতে, মোহাম্মদ বিন নায়েফ স্বেচ্ছাচারী ও কঠোর শাসক। তবে তাঁর প্রজন্মের অন্যদের তুলনায় প্রিন্স মোহাম্মদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো অভিযোগ কমই আছে।
 মাহফুজার রহমান সূত্র: দি ইকোনমিস্ট

No comments

Powered by Blogger.