কবিতা- মৃত্যুশয্যায় আমি একা by মাহবুব তালুকদার

একটু আগে স্বজনেরা আমাকে নিয়ে এলেন হাসপাতালে
ইমারজেন্সি পার হয়ে আইসিইউতে
চারপাশে ডাক্তার নার্স ওষুধ আর ইনজেকশন
তারপর ঘরভর্তি কেমন সুনসান নীরবতা
কেবল হাসপাতালের করিডরে পরিবার-পরিজনদের আবেগায়িত প্রার্থনা
কারও কারও মোবাইলে শারীরিক অসুস্থতার খবর আদান-প্রদান।

সুস্থতার কোনো খবর নেই, থাকার কথাও নয়
আমি আছি কি নেই, এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া অর্থহীন
এ মুহূর্তে হয়তো আছি, পরের মুহূর্তে হয়তো নেই, তাহলে উত্তরটা কী?
ডাক্তার নতমুখে জানালেন, ‘ছিয়ানব্বই ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না’
তার আগে কিছু ঘটতে পারে, নাও ঘটতে পারে, ব্যাপারটা কি তাই?
ছিয়ানব্বই ঘণ্টা কত মিনিটে হয়, কিংবা কত সেকেন্ডে
উল্টো হিসাব করলে পুরো চারটা দিন।

প্রথমেই বলা হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে
লাইফ সাপোর্ট কাকে বলে?
সম্ভবত মানুষকে সম্পূর্ণ যন্ত্রনির্ভর করা হলে লাইভ সাপোর্ট দেওয়া বলে
নাকি মানুষের অস্তিত্বহীনতার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকার নাম লাইফ সাপোর্ট!
এখন লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার পর চারদিকে নিকষ কালো আঁধার ছাড়া কিছু নেই
সেই অন্ধকারের অতলে আমি ডুবে আছি
আলোর চেয়ে অন্ধকারই বেশি নিরাপদ ও নিশ্চিত আশ্রয়স্থল।

কদিন পর একজন ডাক্তার, সম্ভবত কবিতাও লেখেন
আমার মুখের ওপর অত্যন্ত ঝুঁকে পড়ে বললেন, ‘চোখের পলক পড়েছে’
মুহূর্তে তা গুঞ্জরিত হয়ে গেল চারপাশে
আবার ডাক্তার, নার্স, অপেক্ষমাণ স্বজন, তাদের চোখে অশ্রু
আমার ঘরে বা বাইরে হাসপাতালে যাঁরা যাঁরা আছেন
এখন তাঁদের কার কী ভূমিকা আমার জানা নেই
আমি আবার নিঃসাড় নিথর, ওষুধ ও ইনজেকশনের কাছে সমর্পিত প্রাণ।

কবিতার শিরোনামে লিখেছিলাম, ‘মৃত্যুশয্যায় আমি একা’
আসলে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনো শয্যাই মৃত্যুশয্যা নয়
সময়ের অলঙ্ঘ্য নিয়মে একদিন পূর্ণতা পাবে এই শিরোনাম।
স্কয়ার হাসপাতাল, ১২ নভেম্বর ২০১২

No comments

Powered by Blogger.