বেতন পেলেন অর্ধলক্ষ শিক্ষক-নন-এমপিওভুক্তদের কথাও ভাবতে হবে

দীর্ঘ দেনদরবার ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পেতে যাচ্ছেন। ২০১১ সালের মে মাস থেকে এসব শিক্ষক-কর্মচারী বেতনের সরকারি অংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
এই দেড় বছর তাঁদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পেছনে অর্থসংকটের বিষয়টি বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এই বক্তব্য সাযুজ্যপূর্ণ নয় বলে মনে করি। কারণ যেসব শিক্ষক-কর্মচারী ইতিপূর্বে বিএড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন কিংবা যাঁদের টাইম স্কেল পাওনা হয়েছে, তাঁদের হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে না থাকার কথা নয়। প্রতিবছরই এ ধরনের বাড়তি খরচ সংযুক্ত হচ্ছে। এটাও সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সবশেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দড়ি টানাটানিতে দেড় বছর কেটে গেছে- এমনটা মন্তব্য করা এখন স্বাভাবিক বলে মনে করি।
যে পরিবর্তনের কারণে ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে এত দিন বঞ্চিত ছিলেন, তা নতুন কিছু নয়। সেই পরিবর্তনগুলো চলমান হওয়ার কারণে এখন থেকেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকশূন্যতা সৃষ্টি হলে সেখানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে, অথচ সেই শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন না। আবার অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর কিংবা টাইম স্কেল পাওনা হওয়ার পরও একজন শিক্ষক-কর্মচারী পাওনা পাবেন না, এটা বৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কেউ সুবিধা পাবেন, কেউ পাবেন না- এটা মানসিক যন্ত্রণারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজনের বিষয়টি তো আছেই, যা পাঠদানের ক্ষেত্রেও পরোক্ষভাবে বাধা প্রদান করবে।
তার পরও আশার কথা, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সব শিক্ষক-কর্মচারীই বেতন পেয়ে যাবেন। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে প্রত্যাশা সংগত।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত জাতীয় স্বার্থে। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দ্রুতই তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কয়েক মাস চলে যাওয়ার পরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের বিষয়টি এখনো ঝুলে রয়েছে। ফলে আবারও যে আন্দোলন হবে না তা বলা যায় না। আর সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যদি ক্লাসের পরিবর্তে রাস্তায় নেমে আসতে হয়, তাহলে শিক্ষাদানে ব্যাঘাত ঘটবে, এটাও নিশ্চিত। তাই বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেমন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তেমনি অন্য সমস্যাগুলোরও যেন দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.