অক্টোবরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা-ইমার্জেন্সি কেন, হাসিনার প্রশ্ন

সরকার দেশে ইমার্জেন্সি আনার পাঁয়তারা চালাচ্ছে- বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেছেন, 'ইমার্জেন্সি কেন দেব? দেশে এমন কী অবস্থা হয়েছে যে ইমার্জেন্সি দিতে হবে? এটা বলে উনি (খালেদা জিয়া) ইমার্জেন্সির পাঁয়তারা করছেন কি না সেটা আমার প্রশ্ন।
' গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, আগাম নয়, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে আগামী অক্টোবরে।
সংসদে গতকাল ৩৫ মিনিটব্যাপী সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের শক্তির উৎস জনগণ। জনগণের ক্ষমতায়নে আমরা বিশ্বাস করি। সেখানে ইমার্জেন্সির প্রশ্ন আসে কোত্থেকে? ইয়াজউদ্দিন তাঁর লোক ছিলেন। উনি ইমার্জেন্সি দিয়েছিলেন। উনি কি আবার একই রকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান? আরেকটা ওয়ান-ইলেভেন এলে উনি ফল পাবেন না। যাঁদের জন্য ফল আনবেন তাঁরা খাবেন। ওনাকে ভাগ দেবেন না। এরশাদ সাহেবও দেননি।'
বিরোধী দলের নেত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'উনি যতই চেষ্টা করুন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের রক্ষা করতে পারবেন না। তাদের বিচার হবেই।' খালেদা জিয়াকে সব দাবি সংসদে এসে বলার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, দেশকে আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবেন না। দেশের মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। জনগণের ওপর ভরসা রাখুন। তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। দেশের মানুষ যাকে ভোট দেয় দেবে। যে ফল হয় মাথা পেতে নেব। এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম।'
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা) তো দাবি করেন তাঁর স্বামী নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে তিনি কোন হিসাবে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় এই মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন?
সংসদীয় দলের বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেন, আগাম কোনো নির্বাচন নয়, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে আগামী অক্টোবরে।
জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারদলীয় সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠকে মূলত আগামী নির্বাচন, সংসদ সদস্যদের চাওয়া-পাওয়া, টিআর ও কাবিখা বরাদ্দ, সাংগঠনিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দলীয় এমপিদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দেন। এমপিদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, 'সবার সব তথ্য আমার কাছে আছে। শুধু গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনই নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংসদীয় আসনগুলোতে জরিপ করা হয়েছে দুইবার। আরো একবার জরিপ চলছে।' তিনি আরো বলেন, 'তৃণমূলের পছন্দের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সুতরাং আপনারা এলাকায় যান।'
বৈঠকে সংসদ সদস্যরা তাঁদের জন্য টিআর, কাবিখাসহ সব বরাদ্দ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা জেলা-উপজেলায় সরকারি বরাদ্দগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসকদের মাধ্যমে বিতরণ না করে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণের দাবি তোলেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জেলায় বরাদ্দগুলো প্রশাসকদেরই দেওয়া হবে।
বৈঠকে নির্বাচনের আগে রাস্তাঘাট মেরামতের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন সংসদ সদস্যরা। বৈঠকে আতিউর রহমান আতিক, আবদুল মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধন সরকার, মাহবুব আরা গিনি, কাজী কেরামত আলীসহ বেশ কয়েকজন সদস্য বক্তৃতা করেন।

No comments

Powered by Blogger.