সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে যুক্তরাষ্ট্র!

সিরিয়া ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। তারা মনে করছে, সিরিয়া সঙ্কট টার্নিং পয়েন্টে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়) এসে পৌঁছেছে।
ফলে সেখানকার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গভীরভাবে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে ওবামার প্রশাসন থেকে। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
তাদের উদ্ধৃত করে অনলাইন দি নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর দিয়েছে। তবে কি ধরনের হস্তক্ষেপ হবে সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। এক্ষেত্রে ওবামা প্রশাসন বেশ কিছু বিকল্প বিবেচনা করছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিরোধীদের সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ দেয়া। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহে জরুরি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে ন্যাটো কি তুরস্কে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে কিনা। এর মাধ্যমে সিরিয়া থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে তুরস্ককে রক্ষা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, সিরিয়া থেকে তুরস্কে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে তার সঙ্গে থাকতে পারে রাসায়নিক অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বুধবার বলেছেন, তাদের প্যাট্রিয়টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তুরস্ক সীমান্তের ভিতরেই থাকবে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাটারি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা ভেবে সিরিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটরা ভীত হতে পারেন বলে মনে করেন কোন কোন প্রযুক্তিবিদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। যদি তা-ই হয় তাহলে সিরীয় সরকারের সেনারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে বোমা হামলা চালাতে ভয় পাবে। এই অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহীরা। এরই মধ্যে তুরস্কে ন্যাটোর একটি জরিপ দল এসব এলাকা সফর করেছেন। এক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন পথ খোঁজা হচ্ছে। তবে এখনই সিরিয়ায় সিআইএ কর্মকর্তা বা গোয়েন্দাদের প্রবেশ করিয়ে বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়া হবে ঝুঁকির কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই এসব পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা নতুন করে নির্বাচিত হয়েছেন। এতে তার ঝুঁকি নেয়ার সুযোগ বেড়ে গেছে। বিদ্রোহীরা সমপ্রতি কৌশলগত সফলতা পেয়েছে। তাই প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এসব ঘটনা সিরিয়া ইস্যুতে নতুন করে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি চলে এসেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, তবে কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এটুকু বলা যায়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আরব বসন্তে হস্তক্ষেপ করেছেন খুব সাবধানতার সঙ্গে। যখন তিনি লিবিয়ায় যোগ দেন তখন তিনি মানবিক সহায়তার কথা বলে সেখানে গিয়েছিলেন। মার্কিন সেনাদের তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করার বিষয় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু সিরিয়া পরিস্থিতি তার চেয়েও জটিল। সেখানে হস্তক্ষেপের বিষয়ে অনেক কর্মকর্তা এখনও ভীত শঙ্কিত। তারা মনে করেন, সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করলে তাতে মার্কিনিদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং লড়াই ছড়িয়ে পড়বে।
সরকারি বিমান ভূপাতিত: সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠ জারামানা এলাকায় এক গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৫৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১২০ জনের বেশি। নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ও ন্যাশনাল অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বোমা হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর সন্ত্রাসী হামলা বলে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন পর তুরস্ক সীমান্তে বিদ্রোহীরা একটি সরকারি জেট বিমান ভূপাতিত করেছে। মিসাইলের আঘাতে বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়। বিমানে আঘাত লাগার পর এর দু’জন পাইলট প্যারাসুট নিয়ে জাম্প দেন। তাদের একজনকে আটক করেছে বিদ্রোহীরা। আটক পাইলটের ভিডিও ইউটিউবে পোস্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বৃটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

No comments

Powered by Blogger.