পোশাকশ্রমিক হত্যার অন্য রকম প্রতিবাদ

কোনো বক্তৃতা নয়, মিছিল নয়, স্লোগান নয়, নিজেকে কাফনে মুড়িয়ে মানুষগুলো শুয়ে ছিলেন। তাঁরা এসেছিলেন ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুনে পুড়ে ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। তাঁরা এসেছিলেন এভাবে মানুষ হত্যা বন্ধ করার দাবি নিয়ে।
তাঁরা এ কর্মসূচির নাম দিয়েছিলেন ‘শবসমাবেশ’।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যতিক্রমী এ শবসমাবেশের আয়োজন করে ম্যাজিক মুভমেন্ট নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সামাজিক সংগঠন।
পূর্বনির্ধারিত সময় বেলা তিনটায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। ম্যাজিক মুভমেন্টের সদস্যরা ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ, সাংস্কৃতিককর্মী, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মীসহ শতাধিক মানুষ এসে শুয়ে পড়েন বিজিএমইএর কার্যালয়ের সামনে। এরপর তাঁরা নিজেকে কাফনে মুড়িয়ে নেন। তাঁরা হয়ে যান একেকটি নম্বর।
প্রতীকী মরদেহের পেছনে নানা স্লোগান লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়ান ম্যাজিক মুভমেন্টের সদস্যরা। পোস্টারগুলোয় লেখা ছিল: ‘ব্যবসা মানে মুনাফা নয়’, ‘নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসের ভবনে থাকা ২৫ জন শিশু কোথায় গেল’, ‘মাসে ৪০ ডলারের চাইতে একটি প্রাণের মূল্য অনেক বেশি’ প্রভৃতি।
আয়োজকেরা জানান, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাকশিল্প। কিন্তু যাঁদের শ্রমে গড়ে উঠেছে এই শিল্প খাত, সেই লাখ লাখ শ্রমিক রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। গত ২৪ নভেম্বর রাতে নিশ্চিন্তপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেছে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের। সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১১১। ভবিষ্যতে আর কখনো যেন এ ঘটনা না ঘটে, সে কারণেই মাটিতে শুয়ে, গায়ে কাফন জড়িয়ে পোশাকশ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিজিএমইএর সদর দরজায় এ কর্মসূচি। আয়োজকেরা মনে করেন, সরকার ও বিজিএমইএ চাইলেই এমন ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
পোশাক কারখানার শ্রমিকদের এভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনাকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে ম্যাজিক মুভমেন্টের সদস্যরা বলেন, ‘আমরা কেবল নিশ্চিন্তপুর নয়, পোশাক কারখানায় এ নৃশংস প্রাণ হারানোর ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি চাই না।’

No comments

Powered by Blogger.