প্রভুর সমাধি পাহারায় ছয় বছর!

চরম প্রভুভক্ত এক কুকুর। তার প্রভু মারা গেছেন ছয় বছর আগে। কিন্তু এখনও কুকুরটি পাহারা দিচ্ছে তার সমাধি। এ ছয় বছর কুকুরটি প্রভুর সমাধির পাশ থেকে খুব বেশি নড়েনি। দিনরাত সেখানে অবস্থান করে প্রভুভক্তির চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়ে চলেছে কুকুরটি।

‘ক্যাপিটান’ নামের জার্মান শেফার্ড কুকুরটির মালিক আর্জেন্টিনার মিগুয়েল গুজমান ২০০৬ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পরপরই হঠাৎ একদিন হারিয়ে যায় ক্যাপিটান।
তবে মিগুয়েলের মৃত্যুর পরের রোববার তার পরিবারের সদস্যরা সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে ক্যাপিটানকে দেখতে পায়।

সেই থেকে গত ছয় বছর টানা মিগুয়েলের সমাধির পাশে অবস্থান করছে ক্যাপিটান। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে খুব কম সময়ই কুকুরটিকে সমাধি ছেড়ে যেতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘লা ভোজ.কমের’ কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে গুজমানের বিধবা স্ত্রী ভেরোনিকা বলেন, “গুজমানের মৃত্যুর পর ক্যাপিটানকে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি। হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যায় কুকুরটি। কোথাও খুঁজে না পেয়ে আমরা তাকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু পরের সপ্তাহে আমরা যখন সমাধিক্ষেত্রে যাই, তখন আমার ছেলে ডেমিয়েন ক্যাপিটানকে চিনতে পারে। আমাদের দেখে কাছে আসে কুকুরটি। এ সময় করুণ স্বরে বিলাপ করছিলো ক্যাপিটান, মনে হচ্ছিলো যেন কাঁদছে।”

ভেরোনিকা জানান, তাদের পরিবার ক্যাপিটানকে আগে কখনই সমাধিক্ষেত্রে আনেনি, এমনকি গুজমানকে সমাধিস্থ করার সময়ও নয়। কুকুরটি একাই সমাধিক্ষেত্র খুঁজে বের করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সমাধিক্ষেত্রের পরিচালক হেক্টর বেসেজা ও তার কর্মীরা ক্যাপিটানকে খাওয়ানোসহ ও এর দেখাশোনা করছে।

হেক্টর বেসেজা বলেন, “গুজমানের শেষকৃত্য হওয়ার কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন সমাধিক্ষেত্রে এসে হাজির হয় ক্যাপিটান। এরপর পুরো সমাধিক্ষেত্র ঘুরে প্রত্যেক কবরের গা শুঁকে সে প্রভুর কবর খুঁজতে থাকে। অবশেষে খুঁজে পেয়ে সমাধির পাশে বসে বিলাপ শুরু করে।”

বতর্মানে সমাধিক্ষেত্রে জীবিত স্থায়ী বাসিন্দাদের একজন হয়ে যাওয়া ক্যাপিটান দিনের বেলা পুরো সমাধিক্ষেত্রই ঘুরে বেরিয়ে মাঝে মাঝে প্রভুর সমাধির কাছে এসে বিশ্রাম নেয়। তবে দিন শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় ঠিকই প্রভুর সমাধিতে এসে শুয়ে পড়ে, সারারাত সেখানেই থাকে।

গুজমানের পরিবার কিন্তু ক্যাপিটানকে ভুলে যায়নি। গুজমানের ছেলে ডেমিয়েন জানান, ক্যাপিটানকে এরপর বেশ কয়েকবারই বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। তবে প্রত্যেকবারই সে সমাধিতে ফিরে আসে।

“আমি মনে করি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ক্যাপিটান আমার বাবার সমাধির পাশেই অবস্থান করবে ক্যাপিটান।” বলেন ডেমিয়েন।

No comments

Powered by Blogger.