স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি by আবদুল্লাহ আল আনসারী

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬ হাজার ৬০০-এর অধিক স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করছেন। এ সংখ্যা সরকারি স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত মোট জনবলের ৩১ শতাংশ।


তাদের কাজ সপ্তাহে ৬ দিন (সরকারি ছুটি ব্যতীত)_ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্তকরণ, গর্ভবতী, গর্ভ-পূর্ব এবং গর্ভোত্তর সেবা, নবজাতকের সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে ৩ দিন বিভিন্ন প্রকার রোগ শনাক্ত করে রোগীদের মধ্যে সরকার প্রদত্ত ২৮ ধরনের ওষুধ বিতরণ করা। এ ছাড়া রয়েছে কফ পরীক্ষার জন্য কফ কেন্দ্রে রোগী প্রেরণ ও ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ওষুধ খাওয়ানো, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া, পোলিও নির্মূল, স্যানিটেশনসহ ১৫-৪৯ বছর বয়সের সব নারীর পাঁচ ডোজ টিটি টিকা দেওয়া এবং শিশুদের এক বছরের মধ্যে ৮টি প্রতিষেধক টিকা দেওয়া। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এসব টিকা দেওয়ার নির্ধারিত দিনের আগে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ইপিআই কার্যক্রমের সফলতা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে পরিচিত ও প্রশংসনীয় করে তুলেছে। গত বছর শিশু মৃত্যু রোধে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেয়েছেন। এসব কাজের তৃণমূল পর্যায়ে এ ২৬ হাজার ৬০০ মাঠকর্মীর নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পরপর পদোন্নতি পান। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও পদোন্নতি ভাগ্যে জুটে না। তারপর স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে আরও কমপক্ষে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান, যখন চাকরির বয়স থাকে ৬-৭ মাস। তা ছাড়া পদোন্নতির সময় বেতনও বাড়ে না। তার ওপর বদলি করা হয় অন্য উপজেলায়। ফলে পদোন্নতির প্রতি প্রচণ্ড অনীহা জন্মায়।
দীর্ঘদিন থেকে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রায় ২৬ হাজার ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মী তাদের পাঁচ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তাদের দাবিগুলো হলো_ ফিডার পদের স্বাস্থ্য পরিদর্শক থেকে স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতিসহ ১৯৮৫ সালের ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বিধি সংশোধন, বেতন স্কেল সংশোধন করে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা দেওয়া, স্বাস্থ্য সহকারীদের কারিগরি পদমর্যাদা দেওয়া এবং সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাঠকর্মীদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে আরও কার্যকর করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পৃক্ত করাসহ অন্য বিভাগে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য দূর করে সমতা প্রদান।
প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা গণমুখী করার লক্ষ্যে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছাতে হলে এই ২৬ হাজার ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মীর পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে নতুবা তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
য় সদস্য, কার্যকরী কমিটি বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাঠ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট
 

No comments

Powered by Blogger.