পবিত্র কোরআনের আলো-নবী মনোনীত করেন আল্লাহ জিবরাইল নন

৯৬. ওয়ালা তাজিদান্নাহুম আহ্রাছ্বান না-ছি আ'লা-হাইয়া-তিন; ওয়ামিনাল্লাযি-না আশরাকু-; ইয়াওয়াদ্দু আহাদুহুম লাও ইউআ'ম্মারু আলফা ছানাতিন; ওয়ামা-হুয়া বিমুযাহ্যিহিহি-মিনাল আ'যা-বি আইঁয়্যু'আম্মারা; ওয়াল্লা-হু বাছি্ব-রুম্ বিমা- ইয়া'মালু-না।


৯৭. ক্বুল মান কা-না আ'দুওয়্যাল লিজিবরি-লা ফাইন্নাহু- নায্যালাহু- আ'লা- ক্বালবিকা বিইযনিল্লা-হি মুসাদ্দিক্বাল্ লিমা- বাইনা ইয়াদাইহি ওয়াহুদাওঁ ওয়া বুশরা- লিলমু'মিনি-ন।
৯৮. মান কা-না আ'দুওয়্যাল লিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহি- ওয়া রুসুলিহি ওয়া জিবরি-লা ওয়ামি-কা-লা ফাইন্নাল্লা-হা আদু'উয়্যুল লিল কা-ফিরি-না।
৯৯. ওয়ালাক্বাদ আনযালনা- ইলাইকা আ-ইয়া-তিম বায়্যিনা-তিন; ওয়ামা- ইয়াকফুরু- বিহা- ইল্লাল ফা-সিক্বু-না।
১০০. আওয়া কুল্লামা- আ'-হাদু- আ'হদান্ নাবাযাহু- ফারিক্বুম মিনহুম; বাল আকছারুহুম লা-ইউ'মিনু-ন। (সুরা বাকারা : আয়াত ৯৬-১০০)

অনুবাদ : ৯৬. তাদেরকেই বরং আপনি দেখতে পাবেন বেঁচে থাকার ব্যাপারে বেশি লোভী। আল্লাহর সঙ্গে যারা শিরক করে অর্থাৎ কোরাইশরা, আর বনি ইসরাইলের লোকরা তাদের চেয়েও বেশি অগ্রসর; এদের প্রত্যেকেই হাজার বছর জীবিত থাকতে চায়। কিন্তু যত দীর্ঘ জীবনই তাদের দেওয়া হোক না কেন তা কখনোই আজাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না; আল্লাহ এদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছেন।
৯৭. (হে নবী) আপনি বলে দিন, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাইলের শত্রু হতে পারে? সে তো আল্লাহর আদেশে বাণীসমূহ আপনার অন্তঃকরণে পৌঁছে দেয়, যা তাদের হাতের কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে আর এ হচ্ছে মুমিনদের জন্য সুসংবাদ।
৯৮. যারা আল্লাহর শত্রু, আর শত্রু তার ফেরেশতার, রাসুলের, জিবরাইলের ও মিকাইলের; স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সব কাফেরের শত্রু।
৯৯. অবশ্যই আমি আপনার কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন পাঠিয়েছি; পাপী ব্যক্তিরা ছাড়া এ সব কেউই অস্বীকার করতে পারবে না।
১০০. কিংবা যখনই তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো ওয়াদা করেছে, তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করেছে; বরং তাদের অধিকাংশই ইমানদার ছিল না।

ব্যাখ্যা : ৯৬ নম্বর আয়াতটি পূর্ববর্তী অর্থাৎ গত সংখ্যায় বর্ণিত প্রসঙ্গের ধারাবাহিকতায় অবতীর্ণ হয়েছে। ৯৭-১০০ নম্বর আয়াতের শানে-নুজুল হলো, ইহুদিরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাদের শত্রু। কারণ জিবরাইলই আল্লাহর কাছ থেকে ওহি নিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসেন। তাদের কেউ কেউ এমনও বিশ্বাস করত যে জিবরাইল আল্লাহর কাছ থেকে ওহি নিয়ে এসে বনি ইসরাইলের কাউকে নবী হিসেবে বাছাই না করে কোরাইশ বংশীয় মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে চলে গেছে ইচ্ছা করে। এভাবে বেগুনাহ ফেরেশতা জিবরাইল সম্পর্কে তাদের মনে শত্রুতার ধারণা সৃষ্টি হয়। এই আয়াতের মাধ্যমে তাদের এ ভুল ধারণা খণ্ডন করা হয়েছে। ফেরেশতার কোনো স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নেই; আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কোনো ক্ষমতা বা প্রকৃতিই যে তার নেই, এ কথা এখানে বলা হয়েছে। এই আয়াতে ইহুদিদের আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে নাজিলকৃত কোরআন তাদের কিতাব তাওরাতকে স্বীকৃতি দেয়। ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়; বরং আল্লাহ প্রেরিত আগের ধর্মগুলোরই সংশোধিত রূপ। ইহুদিদের উচিত অহমিকা পরিত্যাগ করে আল্লাহর নবী, তাঁর কোরআন ও ইসলামকে স্বীকার করে নেওয়া। ৯৮-১০০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত ইহুদিদের সত্য উপলব্ধি করানোর আরো চেষ্টা করা হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইহুদিদের মধ্য থেকেও মদিনায় কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে ইহুদি সম্প্রদায়ের বেশ গণ্যমান্য ব্যক্তিও ছিলেন। মদিনা চুক্তি লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে ইহুদিদের যে বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এতে রাসুলের নির্দেশে প্রধান বিচারপতি নিয়োজিত হয়েছিলেন বনি ইসরাইল বংশোদ্ভূত একজন মুসলমান। ১০০ নম্বর আয়াতে যেমন বলা হয়েছে, 'এদের একদল ওয়াদা ভঙ্গ করেছে'। আসলে ইহুদিরা জাতিগতভাবেই বিভ্রান্ত হয়েছে এমন বলা যায় না, তাদের মধ্যে সুপথগামী লোকও ছিল। ৯৭ নম্বর আয়াতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলা হয়েছে যে জিবরাইল আল্লাহর আদেশে বাণীসমূহ নবীর অন্তঃকরণে পৌঁছে দেন। এর মানে রাসুল (সা.) কেবল শোনা কথা বলেছেন এমন নয়। কোরআন আল্লাহর নির্দেশে রাসুল (সা.)-এর অন্তঃকরণ থেকে নিঃসৃত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.