পাট সম্পদ-ফাঁস নয়, মণিহারই হতে পারে

কয়েক বছর উৎসাহব্যঞ্জক বাজারমূল্যের পর দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল পাট যে ফের 'কৃষকের গলার ফাঁস' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে_ তা এখন অজানা নয়। উত্তরাঞ্চল ও বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে উৎপাদিত সোনালি আঁশ কীভাবে বিবর্ণ বোঝায় পরিণত হয়েছে, শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট।


আশঙ্কা করা যায়, আলোচ্য প্রতিবেদনে স্থান না পেলেও বৃহত্তর ফরিদপুরসহ অন্যান্য পাট উৎপাদক অঞ্চলের চিত্রও অভিন্ন। বস্তুত পাটের দাম পড়ে যাওয়া, ফড়িয়া ও আড়তদারদের মূলধন বিজেএমসির বকেয়া হিসেবে আটকে থাকা, মিল ও ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ প্রভৃতি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আর এ সংকট বিশ্লেষণে কর্তারা যে কারণ ব্যাখ্যা করে থাকেন, তাও গৎবাঁধা_ বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক এবং ইউরোপে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। তারপর? ওই দুই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় কি এখন হাত-পা গুটিয়ে আমরা বসে থাকব? সংশ্লিষ্টদের তৎপরতায় অন্তত তেমন চিন্তারই ছাপ! অথচ প্রাকৃতিক তন্তুর এই সুবর্ণ সময়ে বিকল্প বাজার পাওয়া কঠিন নয়। সরকার থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল বলে আমরা জানি। কিন্তু পরিস্থিতি তাতে মোটেও বদলায়নি। কেবল কাঁচা পাট ও চট নয়; পাটজাত সুতা, বস্ত্র ও ফ্যাশন পণ্যের যে বিপুল চাহিদা বিশ্বজুড়ে রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগানো ছাড়া অর্থকরী ফসলটির উৎপাদন অর্থপূর্ণ করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে রফতানিমুখী ফ্যাশন হাউসগুলোর পরামর্শ নিতে পারে কর্তৃপক্ষ। বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনকে সক্রিয় করার পাশাপাশি পাট ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে বলব আমরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি দেখিয়েছিল, কেবল সরকারি কাজেই প্রতি বছর ৮০ কোটি পাটের বস্তা প্রয়োজন হয়। ব্যবহার হয় মাত্র ৯০ হাজার বস্তা! সরকারিভাবেই যদি পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়, তাহলেই পাট খাত ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে_ এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ নেই। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটপণ্যকে জনপ্রিয় করা গেলেও হাতের কাছে মেলে ষোলো কোটি মানুষের বিরাট বাজার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের কর্তারা হাতির মতো ক্ষুদ্র চোখ দিয়ে কেবল বাইরের বিশ্বই দেখেন। নিজের বিশাল অবয়বে নজর পড়ে না। এখন সময় হয়েছে একই সঙ্গে দৃষ্টি প্রসারিত ও তীক্ষষ্ট করার। কাছে ও দূরে পাট ও পাটজাত পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগালে আজকের গলার ফাঁস আগামীকাল মণিহার হিসেবে আমাদের শ্রী ও সমৃদ্ধি দুই-ই বৃদ্ধি করতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.