বন্ধুবেশী অপহরণকারীর ফাঁদে ২ কলেজছাত্রী by নূরুজ্জামান

বন্ধুবেশী অপহরণকারীর ফাঁদে পড়েছিল দুই কলেজছাত্রী। বেড়াতে গিয়ে বন্দি ছিল প্রায় ৯৬ ঘণ্টা। অপহরণকারী মুক্তিপণ দাবি করেছিল ৬০ লাখ টাকা। অবশেষে র‌্যাবের কৌশলী অভিযানে গত বুধবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে রাজধানীর উইমেন সেন্ট্রাল কলেজের দুই ছাত্রী শারমিন আক্তার শান্তা ও ঐশী আহমেদ দীপাকে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সিনিয়র বন্ধু এবং আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মামুনকে।
মুগদা থানা পুলিশ মামুনকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, অপহরণকারী মাহমুদুল হাসান মামুন ও অপহৃত দুই কলেজছাত্রী একই কোচিং সেন্টারের একই শিক্ষকের কাছে পাঠ নিতো। থাকতো একই এলাকায়। এ সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
গত ৯ই সেপ্টেম্বর দুপুরে শান্তা ও ঐশী কলেজে যাচ্ছিল। পথে দেখা হয় মামুনের সঙ্গে। মামুন তাদের কলেজ বাদ দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব করে। সঙ্গে সঙ্গে তারা রাজি হয়ে যায়। তিনজনে মিলে চলে যায় রাজধানীর বাইরে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে তাজমহল দর্শন করে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে মামুন কৌশলে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফার্মগেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দুই ছাত্রীকে পশ্চিম তেজতুরী বাজারের ৬৪/খ নম্বর জনৈক শহিদুল ইসলামের বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। আগে থেকেই ওই ফ্ল্যাটে থাকতো মামুনের এক বান্ধবী। তার হেফাজতে রেখে মামুন বাইরে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে কৌশলে শান্তা ও দীপার মোবাইল ফোন সেট থেকে সিম দুটো খুলে নেয়। পরে ওই দুটি সিম অন্য মোবাইল ফোনে ব্যবহার করে শান্তা ও দীপার আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। শান্তার বাবা শামসুদ্দিনের মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে, আপনার মেয়ে আমার হাতে বন্দি। তাকে জীবিত পেতে চাইলে ৪০ লাখ টাকা দিতে হবে। একইভাবে দীপার মামার ফোনে দাবি করে ২০ লাখ টাকা। র‌্যাব-৩ এর এএসপি এসএম তারেক রহমান বলেন, অপহৃত দুই ছাত্রীর মুক্তিপণ দাবি করার পরপরই মেয়ে দুটির অভিভাবকরা মুগদা থানায় অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল তাদের উদ্ধার তৎপরতা চালায়। একপর্যায়ে রাজধানীর শেখের বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়ক থেকে অপহরণকারী মাহমুদুল হাসান মামুনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী দুই ছাত্রীকে পশ্চিম তেজতুরি পাড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে ভিকটিমসহ গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে মুগদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মুগদা থানার এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, মামুন অপহরণের কথা স্বীকার করেছে। তার দাবি- সে অভাবগ্রস্ত। মূলত টাকার জন্যই পরিচিত শান্তা ও দীপাকে ফুসলিয়ে অপহরণ করেছে। কিন্তু এভাবে সে ধরা পড়বে তা বুঝতে পারেনি। ওদিকে শান্তা ও দীপা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মামুনের যে বান্ধবীর কাছে তাদের রাখা হয়েছিল ওই মেয়েটি তাদের সঙ্গে কোন দুর্ব্যবহার করেনি। বিভিন্ন খাবার খাইয়ে ইমশোনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে। বলেছে- মামুনের টাকার দরকার। সংগ্রহ করতে গেছে। আসলেই তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে। তবে কোথায় আমাদের আটক করা হয়েছে তাও বুঝতে দেয়নি। তদন্ত সূত্র জানায়, পশ্চিম তেজতুরি বাজারের ৬৪/খ নম্বর জনৈক শহিদুল ইসলামের বাড়ির তিনটি রুমে ৬ জন মহিলা ভাড়া থাকতো। ওই তিন রুমের একটিতেই তাদের আটক রাখা হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তার ধারণা- অপহরণকারী মামুনের সঙ্গে তার বান্ধবীর যোগসূত্র আছে। এছাড়া অপহৃত শান্তা ও দীপার দুই বয়ফ্রেন্ড এ ঘটনার সঙ্গে কোনভাবে জড়িত কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। র‌্যাব জানায়, সমপ্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ অপহরণকারী দলের সদস্যরা বিভিন্ন পেশার চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, নারী ও শিশুদের বিভিন্ন কৌশল ও প্রতারণার মাধ্যমে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তাদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে। এসব ঘটনায় র‌্যাব বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি অপারেশন দল নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার মো. সামসুদ্দিনের মেয়ে এবং তার বান্ধবীকে অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে। অপহরণকারীরা অর্থের বিনিময়ে ভিকটিমদের মুক্তির শর্তে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে খিলগাঁও থানাধীন শেখের বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়ক থেকে অপহরণকারী মো. মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তেজগাঁও থানাধীন ৬৪/খ পশ্চিম তেজতুরী বাজারের শহিদুল ইসলামের বাড়ির ২য় তলার পূর্বপাশের ফ্ল্যাট থেকে শান্তা ও দীপাকে উদ্ধার করা হয়। শান্তা তার পরিবারের সঙ্গে মুগদা থানার উত্তর মুগদাপাড়ার ১০৭/বি নম্বর বাড়িতে থাকে। অন্যদিকে একই থানার ওয়াসা রোডের ১/২৬/৪সি নম্বর নাজমা হাউজে থাকে দীপা। তার পিতার নাম আজহার মেহমুদ। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার থানাপাড়া গ্রামে।

No comments

Powered by Blogger.