ক্ষোভে উত্তাল মুসলিম বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভে গতকাল শুক্রবার উত্তাল ছিল মুসলিম বিশ্ব। ইয়েমেনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং জলকামান ব্যবহার করে। মিসর, ফিলিস্তিন ও পাকিস্তানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।


সুদানে জার্মান ও ব্রিটিশ দূতাবাসে এবং ভারতের চেন্নাইয়ে মার্কিন কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালানো হয়েছে।
এ ছাড়া ইরান, ইরাক, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বে মার্কিন দুতাবাসগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ইনোসেন্স অব মুসলিমস চলচ্চিত্রে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে কটাক্ষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার থেকে মার্কিনবিরোধী এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ‘চলচ্চিত্রটিতে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’ গত বৃহস্পতিবার মরক্কোয় সফররত হিলারি বলেন, ‘আমি জানি, কিছু মানুষকে এটা বোঝানো কঠিন যে, যুক্তরাষ্ট্র কেন এমন ভিডিওচিত্র প্রকাশ বন্ধ রাখতে পারে না। আজকের বিশ্ব আজকের প্রযুক্তিতে চলে। এখন ভিডিওচিত্র প্রকাশ বন্ধ করা অসম্ভব। তবে আমাদের সংবিধান ও আইনে কোনো নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও হরণ করা যায় না।’ হিলারি বলেন, ‘এই ভিডিওচিত্রটি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বিরক্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড। একটি মহান ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করা হয়েছে।’
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় গতকাল বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাসের দিকে যেতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘মার্কিন দূতাবাস চাই না’, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত চাই না’, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়। তারা কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে।
মিসরের রাজধানী কায়রোতে গতকাল অন্তত ৫০০ বিক্ষোভকারী মার্কিন দূতাবাসের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে। তারা কায়রোর তাহরির স্কয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। মিসরে ক্ষমতাসীন মুসলিম ব্রাদারহুড বিক্ষোভের ঘোষণা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে। দেশটির বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন ‘লাখো মানুষের সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিলেও তাদের কয়েকটি সংগঠন গতকাল সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফা শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা হামাস ও ইসলামিক জিহাদ আন্দোলনের পতাকা বহন করে। তারা ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেয় এবং মার্কিন পতাকা পোড়ায়। জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
পাকিস্তানে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ বের হলে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সুদানের রাজধানী খার্তুমে জার্মান ও ব্রিটিশ দূতাবাসে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ভারতের চেন্নাইয়ে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন লক্ষ্য করে পাথর ও জুতা ছুড়ে মারে বিক্ষোভকারীরা। এতে জানালার কাচ ভেঙে যায়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে মার্কিন দূতাবাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইনোসেন্স অব মুসলিমস নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ মিলিশিয়াদের হামলায় লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ চারজন নিহত হন। হামলা হয় মিসর ও ইয়েমেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসেও। এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.