আল মাহমুদের কবিতা

খুব বেশি আবদার-অনুরোধ না থাকলে সাধারণত কবিতা লেখা হয়ে ওঠে না। আমার এই পড়ন্ত বেলায়ও কাব্যপ্রেম অক্ষুণ্ন থাকায় একটি ভালো কবিতা লিখতে পারলে ভীষণ পুলক বোধ করি। যেহেতু স্বচোখে দেখে হাতে লিখতে পারছি না, তাই ডিকটেশনে একটা অতৃপ্তি ও দ্বিধা থাকাটাই স্বাভাবিক।


আর এখনকার লেখা আমার গীতপ্রবণ কবিতাগুলোর প্রধানতম অনুষঙ্গ—‘ভালোবাসা’।
যাঁরা আমার কবিতা আগ্রহসহকারে পড়েন, তাঁদের জানাচ্ছি—নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আমাকে প্রতিনিয়ত কবিতা লিখতে হচ্ছে, যা যথাযথ কাব্যমর্যাদা পেলে ভালো। অবশ্য কাব্যই আমার একমাত্র কর্তব্য বলে বিবেচনা করি।

তোমার নামের ছোবল
মাঝে মাঝে ভাবি খেলা শেষ হলে বেলা শেষ তবে
একা আমি আর কত দূর পাড়ি দিতে পারি—
এই গোধূলিতে পায়ের ছাপ কি পড়েনি আমার?

যদি পড়ে তবে ধরে নিতে হবে এখনো চলছি
সামনে যাবার নেশায় আকুল দেহ থরথর—
ব্যথায় কাতর জানি না কোথায় যাওয়া হবে শেষ
পাওয়ার মতন আনন্দ এসে আমার আবেশ
আবেগে মিটবে খুব তাড়াতাড়ি—
এখনি কি বলো, তোমার ছোঁয়া, আমার শরীরে
লাগবে হে নারী!

আমি তো ছিলাম ভবিষ্যতের যাত্রী কেবল
এমন সময় তোমার নামটি আমাকে ছোবল
হানলো প্রবল—
দুই চোখে জল ভিজিয়ে কাজল নামছে শুধুই—
ভাসছে আমার ভুরুর নিচে যেন বা একটি
পাখি ডানা মেলে উড়ছে একাকী।

দুহাত বাড়িয়ে আমি ডাকি ওরে
‘পাখি আয় ফিরে—কবির বুকে’
কিন্তু ফেরে না পাখিটি আমার।
আমি চেয়ে থাকি আকাশের দিকে চোখে জল নিয়ে।

অশ্রু লুকানো অন্ধকারে
চলতে চলতে বলতে থাকি ভালোবাসার কল্পকথা
কী বারতা ছড়িয়ে দিলাম পথের ওপর পথ কি জানে?
কেবল ডাকে ইঙ্গিতে সে ভঙ্গিতে সে, আমার পানে।

গানে গানে সুর ভেসে যায়—মোড় পেরিয়ে।
দোর খোল গো প্রতিবেশী, এই বিদেশি
হাত বাড়ালো তোমার দিকে—
দাও কিছু দাও প্রেমের ছোঁয়া এই পথিকে।

আমার হাতে ডাল মেলেছে কত রেখা
হঠাৎ দেখি পথের মাঝে তোমার দেখা
পেলাম বড় অসময়ে তবু আমি ধরতে পারি
তোমার আঁচল—তোমার শাড়ি।

কাড়াকাড়ির খেলা তো নয় এ কেবলই প্রেমের লেখা
আছে আমার পথে, পাবো তোমার দেখা

ভালোবাসার গল্প তবু ফুরায় না তো
এবার আমার হাতটি ধরো—এসো প্রেমের গল্পে মাতো।
বিনিময়ের নেই কোনো শেষ—এটাই বুঝি ভালোবাসা
অন্ধকারে লুকিয়ে আছে অশ্রু কারও, প্রেমের ভাষা।


অদেখা, প্রকাশিত হও এসে
কেবলই ঝরার শব্দ উঠছে চারদিকে প্রতিদিন
কান পেতে শুনি ঝরে যায় কিছু
আঙুলে আমার গুনি,
এক দুই তিন, ধ্বনিতে বিলীন কার যেন পরমায়ু।

আয়ু কেঁপে ওঠে বায়ুর প্রভাবে; আয়ুর পতনে দেহ—
ছোঁয়া দিয়ে যায় কার ভালোবাসা (?)
কার মায়া-প্রেম-স্নেহ!

আমি বলি একা কে তুমি অদেখা, প্রকাশিত হও এসে,
খুব দূরে যেন কারও পদপাত দাঁড়ায় সম্মুখে—হেসে।

তার চলাচল শাড়ির আঁচল লাগে অহরহ মুখে
শুধায় আমারে—কেন বারে বারে প্রশ্ন করছ এমন
আমি অনন্ত দিনের অন্ত—বারবার আসে ফিরে,
আমার কথা তো শুনতে পাও না আমি নিশিদিন বলি—
হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করো এ বিদায়ের অঞ্জলি।

প্রশ্ন করো না কোথায় চলেছ, কোথায় বিরাম
কী তোমার নাম, কোথায় যাচ্ছ,
কবে শেষ হবে এই চলাচল—
ছলছল করে চোখের অশ্রু চোখের কাজল।
মলিন ফোঁটায় ঝরে যায় জল, ছলছল করে আঁখি,
কুলায় পাখিরা ফিরে আসে সব এখন নীরব রাত—
আমাকে স্পর্শ করার জন্য বাড়াও জাদুর হাত।

No comments

Powered by Blogger.