ত্রিশের দশকেও ছিল ‘ইন্টারনেট’!

এখন আপনার হাতের কাছে আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ আছে, যে প্রদীপটার নাম ইন্টারনেট। তাতে আছে দৈত্যও, যে দৈত্যের নাম গুগল। আলাদিনের প্রদীপে ঘষা দিতে হতো। আপনিও এক রকম তা-ই করেন: খুটখুট করে টাইপ। জোরসে ঘষাটা মারেন এন্টার বোতামটায়। ওমনি হুহুহাহা করে হাজির গুগল দৈত্য।
কী চান তার কাছে? নিমেষেই, চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই, সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ সময়ে আপনার আকাঙ্ক্ষিত জিনিস এসে হাজির। অবশ্য সেটা তথ্যের মোড়কে। আর আপনি নিশ্চয়ই দ্বিমত করবেন না, এই যুগে তথ্যটাই আসলে আসল।
মূল বিষয়ে ঢোকার আগে আপনাদের একটু নিয়ে যাব ১৯৬৯ সালে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই বছরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরেই মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে মানবসভ্যতা দুটো বিরাট উল্লম্ফন দিয়েছিল। জুলাইয়ে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। আর অক্টোবরে জন্ম নিয়েছিল ‘ইন্টারনেট’; যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এআরপিএনেট ব্যবহার করে যখন পাশাপাশি রাখা দুটো কম্পিউটারে আদান-প্রদান হয়েছিল বার্তার।
এবার আপনি সোজা চলে যান গত শতকের ত্রিশের দশকে; যখন টেলিফোন, টেলিভিশন কিংবা বেতার কেবলই প্রাথমিক যুগে। সেই সময়টাতেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তথ্য খোঁজার কথা ভেবেছিলেন একজন। বেলজিয়ান এক বিজ্ঞানী। নাম তাঁর পল ওটলেট।
১৯৩৪ সালেই তিনি এমন একটা প্রযুক্তির নকশা করেন, যেটা এখনকার অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট প্রযুক্তির ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। আর তাই কিছুদিন আগে নিউইয়র্কে হয়ে যাওয়া বিশ্ব বিজ্ঞান উৎসবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা ‘ডব্লুডব্লুডব্লু’র অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উঠে এসেছে ওটলেটের নাম।
কম্পিউটার ব্যবহার করার উপায় ওটলেটের ছিল না। কারণ, আশ্চর্য এই জাদুর বাক্স এসেছে তারও অনেক পরে। তবে একটি টেলিফোনকে টিভি পর্দার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তথ্যের এক ‘সুপারহাইওয়ে’ বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। তথ্য বিজ্ঞানের জনক হিসেবে স্বীকৃত এই বিজ্ঞানী তাঁর ভাবনাগুলো প্রকাশ করেছিলেন ট্রিটিজ অন ডকুমেন্টেশন নামের বইতে। সেই বইতেই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন দিন আসবে, যেদিন আর তথ্য জানতে গাদা গাদা বইয়ের চাপে পিষ্ট হতে হবে না কাউকেই।
নতুন ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের এক ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন ওটলেট। আধা-ভার্চুয়াল একটা লাইব্রেরির কথা বলেছিলেন, যে লাইব্রেরির নাম দিয়েছিলেন ‘র‌্যাডিয়েটেড লাইব্রেরি’। তাঁর ভাবনা ছিল এমন, কোনো ব্যক্তি বা পাঠক তাঁর প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে বিশেষায়িত গ্রন্থাগারে টেলিফোনের সাহায্যে ফোন করবেন। গ্রন্থাগারের কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে সেই তথ্য খুঁজে বের করে টেলিভিশন সংকেত হিসেবে পাঠিয়ে দেবেন সেই ব্যক্তির কাছে; যেটাকে ওটলেট নাম দিয়েছিলেন ‘টেলিভাইজড বুক’।
তিনি এমনও ধারণা দিয়েছিলেন, টিভি পর্দা ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিভক্ত থাকবে। একেকটি অংশে থাকবে একেক ধরনের বই। যে ধারণার সঙ্গে মিলে যায় এ কালের ব্রাউজারের ট্যাব বা উইন্ডোর ধারণা!
ওটলেটকে ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা বলতেই হবে। কারণ, হাল আমলে টেলিফোনের উত্তরসূরি মুঠোফোন দিয়েই তো এখন খোঁজা হচ্ছে সব তথ্য! সবচেয়ে বড় কথা, ইন্টারনেট নামের সেবাটি আপনি হয় টেলিফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, নয়তো স্যাটেলাইট টিভির সংযোগদাতার কাছ থেকেই তো নিচ্ছেন। টেলিফোন আর টিভি—এই দুই দিয়েই তো তথ্য খোঁজার কথা বলেছিলেন মহামতি ওটলেট!
রাজীব হাসান
তথ্য: এবিসি নিউজ, ডেইলি মেইল

No comments

Powered by Blogger.