মহানবী (সা.)-এর অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সমাবেশ

যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ইসলামবিরোধী একটি চলচ্চিত্রে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে। কয়েকটি ইসলামি দল ও সংগঠন এই বিক্ষোভকরেবিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মার্কিন সরকার ওই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া। সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররম থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কে মিছিল নিয়ে কয়েকবার প্রদক্ষিণ করে। প্রেসক্লাবের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়। এ সময় পল্টন থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়।
প্রেসক্লাবের সামনে ইসলামী ঐক্যজোটের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে যদি যুক্তরাষ্ট্র ওই চলচ্চিত্রকারকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির মুখোমুখি না করে, তা হলে আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে দলটির আমির চরমোনাইর পীর সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, ওই চলচ্চিত্রকারকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসি না দিলে মুসলমানদের ক্ষোভের আগুন নিভবে না। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মিছিলের কথা ঘোষণা করলেও মালিবাগ টুইন টাওয়ার্সের সামনে পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দেয়।
জুমার নামাজের খুতবায় বায়তুল মোকাররমের খতিব মো. সালাহউদ্দীন বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা পৃথিবীর কোনো মুসলমান সহ্য করবেন না। আমরাও বরদাশত করব না।’ তিনিও ওই মার্কিন চলচ্চিত্রকারের শাস্তির দাবি করেন।
এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় মার্কিন ওই চলচ্চিত্রে মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ও নির্মাতার শাস্তি দাবি করা হয়।
চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ: চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন আবুল কাশেম মাতব্বর, মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মুহাম্মদ আল-ইকবাল, ইসমাইল হোসাইন জিহাদী প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসলাম ও মহানবী (সা.)-কে অবমাননা বিশ্বের মুসলমানেরা মেনে নেবেন না। সমাবেশ থেকে লিবিয়ায় অস্ত্রধারীদের হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পরে একটি বিশাল মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশের সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জামায়াতে ইসলামীর নিন্দা: গতকাল এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ করে মহানবী (সা.)-এর চরিত্রে কালিমা লেপনের অপচেষ্টা চালিয়ে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে অপমানিত করা হয়েছে। বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই একজন ইহুদি এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এর প্রতিবাদে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।’
বিবৃতিতে মকবুল আহমাদ বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিবিয়ায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তা কারও কাম্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। তিনি চলচ্চিত্রটি বেআইনি ঘোষণা করে এর প্রদর্শন বন্ধ করা এবং নির্মাতাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও ক্ষোভ: এ ছাড়া এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি দাবি করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এক বিবৃতিতে ছারছিনার পীর শাহ মো. মুহিবুল্লাহ অবমাননাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। এ ছাড়া ইসলামি ও সমমনা ১২ দল, দেওয়ানবাগ শরিফ, বাংলাদেশ তাহফিজে হারামাইন পরিষদ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.