পড়াশোনায় অনলাইন ভিডিও by সুব্রত দেবনাথ

পড়ালেখা এখন আর শুধু শ্রেণীকক্ষ বা পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়। পড়ালেখায় এখন লেগেছেইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া।প্রচলিত শ্রেণীকক্ষের জায়গায় আসছে ডিজিটাল ক্লাসরুম বা ভিডিও সম্মেলন (কনফারেন্সিং), পাঠ্যপুস্তকের জায়গায় আসছে ডিজিটাল বই বা পিডিএফ এবং ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা।
বাইরের বিশ্ব ইতিমধ্যেই এসবে বেশ এগিয়ে গেছে। বিখ্যাত খান একাডেমির কথা তো সবারই জানা। শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে হাজার হাজার ভিডিও উপস্থাপনা আছে খান একাডেমির ডিজিটাল সংগ্রহশালায়। এ ছাড়া অনেকে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষার নানান উপকরণ ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শুরুতেই বলে রাখি, এখন কিন্তু একমুখীর পাশাপাশি দ্বিমুখী শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। অর্থাৎ শুধু ডিজিটাল নোট বা বই সংগ্রহই করবে না বা ভিডিও দেখবে না, সেগুলো দেখে বা পড়ে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া ও যাচাইয়ের ব্যবস্থাও থাকছে।
বাংলাতেও তৈরি হচ্ছে শিক্ষার এ রকম নানান উপকরণ। নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে, ব্লগের মাধ্যমে বা ইউটিউব ব্যবহার করে মাতৃভাষায় শিক্ষার নানান উপকরণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবাই। এর মধ্যে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য উপযোগী উপকরণ থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন পাঠক্রমও আছে। খান একাডেমির ভিডিওগুলোর বাংলায় রূপান্তরের কাজ অনেকটাই শেষের দিকে (www.khanacademybangla.com) । অনেক শিক্ষকও আজকাল ক্লাসে দিচ্ছেন অনলাইন নোট বা বাড়ির কাজ। সব মিলিয়ে বাংলা ভাষায় ও বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষার শুরুটা মন্দ নয়।
সত্যি কথা বলতে কি, বাংলা ভাষায় ডিজিটাল শিক্ষার চর্চা কিছুদিন ধরে ব্যাপক গতি লাভ করেছে। প্রচুর পরিমাণ উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো শিক্ষক ডট (www.shikkhok.com) ও যন্ত্রগণক (www.jontrogonok.com)। যন্ত্রগণক ওয়েবসাইটটি কম্পিউটার শিক্ষা, বিশেষত কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ে শেখায়। অন্যদিকে শিক্ষক ডট কম এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি দ্বিমুখী কোর্সের সংগ্রহশালা। গত মাসে চালু হওয়া এই ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কেমিকৌশল, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস), ক্যালকুলাস, বায়োইনফরমেটিকসের ওপর কোর্স। শিগগিরই আরও কোর্স চালু হতে যাচ্ছে। শিক্ষকের কোর্সগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সবই ভিডিও কোর্স। নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞরা ভিডিও বক্তৃতা (লেকচার) দিয়েছেন। প্রতিটি ভিডিও শেষে মূল্যায়নের জন্য আছে কুইজ। সে তুলনায় যন্ত্রগণক কিন্তু বেশ আগে থেকেই চালু আছে। এটি শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। এ দুটো ওয়েবসাইটের নির্মাতা ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক রাগিব হাসান। তিনি জানান, বর্তমানে যন্ত্রগণকে ১২০০ জন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী রয়েছেন। ৫০০ থেকে ৬০০ জন প্রতিটি কুইজ পরীক্ষা দিচ্ছেন। রাগিব বললেন, ‘আমি কখনো এত বড় ক্লাসে শিক্ষকতা করিনি।’
এ ছাড়া ইউটিউবভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার পিএইচডি গবেষক এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর চমক হাসানের ‘গণিতের রঙ্গে’। এখানে চমক গণিতকে একটু ভিন্ন ঢঙে উপস্থাপন করার সুন্দর চেষ্টা চালিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১০টি পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওগুলোর দর্শকসংখ্যা লাখ পেরিয়ে গেছে। চমক হাসানের এই চ্যানেলটির ঠিকানা www.youtube.com/user/chamokhasan?feature=results^main।
এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে বাংলা ভাষার এবং আমাদের দেশের মানুষের উদ্যোগে। যেমন তামিম শাহরিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ছোটদের জন্য অনলাইন প্রোগ্রামিং শিক্ষার (www.facebook.com/computerprogrammingbook)। সিলেট আইটি একাডেমি তৈরি করেছে ওয়েবপেজ তৈরির নানান ভিডিও প্রশিক্ষণ কোর্স। এটা পরিচালনা করছেন বেসিস ফ্রিল্যান্সার অব দ্য ইয়ার ২০১১ পুরস্কার বিজয়ী মো. জাকারিয়া চৌধুরী (www.sylhetitacademy.com) এখানে পাবেন নয়টি পিএইচপি ভিডিও টিউটোরিয়াল কোর্স।
বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও আমাদের দেশে এই যাত্রা মাত্র শুরু হলো, তা-ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনভিত্তিক কোর্স চালু করলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন।পাশাপাশি সরকার আমাদের নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে পারে।এর মাধ্যমে আমাদের দেশের শিক্ষার মান অনেক বেড়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.