থ্রিজি সংযোগ পেতে নতুন পদ্ধতির ঘোষণা দিয়েছে টেলিটক কর্তৃপক্ষ-ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে by ফিরোজ মান্না

থ্রিজির সংযোগ পেতে প্রিপেইড গ্রাহকদের জন্য নতুন পদ্ধতির ঘোষণা দিয়েছে টেলিটক কর্তৃপক্ষ। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রিপেইড গ্রাহকরা নিবন্ধিত হতে পারবেন। থ্রিজির (তৃতীয় প্রজম্ম) গ্রাহক হতে আগে নিবন্ধিত হবে। নিবন্ধন ফি প্রথম মাসে ৫শ’ টাকা হবে। ৫ শ’ টাকা দিলে প্রাথমিক গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন একজন গ্রাহক।


এরপর পরবর্তী দুই মাস আরও ৫ শ’ করে এক হাজার টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত গ্রাহক হতে হবে। এরপরেই একজন গ্রাহক থ্রিজির সংযোগ পাবেন। তার আগে এই সেবার সুযোগ পাবেন না। প্রাথমিকভাবে থ্রিজির সংযোগ ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কক্সবাজার শহরের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
টেলিটক সূত্র জানিয়েছে, টেলিটকের থ্রিজি সেবাভুক্ত হতে প্রথমে মোবাইলে ৫শ’ টাকা ব্যালেন্স নিশ্চিত করে (এৎধারঃু) লিখে ৬৬৬ নম্বরে এসএমএস (চার্জ প্রযোজ্য নয়) পাঠাতে হবে। এরপর নিবন্ধিত টেলিটক গ্রাহক গ্রাভিটি ক্লাবের সদস্য হবেন। এরপর পরবর্তী আরও দুই মাসে দুই কিস্তিতে ৫শ’ টাকা করে ১ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে। সব মিলিয়ে তিন মাসে দেড় হাজার টাকার নিবন্ধন ফি দিলেই থ্রিজি সেবার সুযোগ মিলবে। তবে গ্রাভিটি ক্লাবের সদস্য হয়ে নিবন্ধিত হলে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। থাকবে প্রতিসেকেন্ডে পালস সুবিধা। সর্বমোট ৬ শ’ মিনিট টকটাইম সুবিধা। এ প্যাকেজে ৩শ’ মিনিট অননেট আর ৩শ’ মিনিট অফনেট টকটাইম প্রযোজ্য। বোনাস অফারে থাকছে থ্রিজি গ্রাভিটি গ্রাহক। এভাবে নিবন্ধিত হলে
সর্বোচ্চ রিচার্জকারীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে থ্রিজি সংযোগ দেয়া হবে। আর গ্রাভিটি নিবন্ধিত প্রতিটি সদস্যই পাবেন ১ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। ইন্টারনেটের মেয়াদ থাকবে এক মাস।
সম্প্রতি টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজি উদ্দিন রাজু বলেছেন, থ্রিজি (তৃতীয় প্রজম্মের মোবাইল) প্রথম পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলা ও চট্টগ্রাম ও সিলেটে চালু করা হবে। তিন লাখের বেশি গ্রাহককে থ্রিজি মোবাইল ফোন সেবা দেয়ার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক। আগামী সেপ্টেম্বরে থ্রিজি সেবা বাজারে আসবে। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌছে দিতে বদ্ধপরিকর। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে টেলিকম সেক্টরের উন্নয়ন করতেই হবে। এই খাতে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে এবং গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
টেলিটক সূত্র জানিয়েছে, থ্রিজির জন্য সারাদেশে ৭শ’ বিটিএস (বেজ স্টেশন) স্থাপন করার কাজ চলছে। রাজধানীর বিটিএস স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। অপারেটিং সিস্টেম নিয়েও কাজ চলছে। সারাদেশে এক যোগে থ্রিজি চালু করার কথা থাকলেও প্রথম দিকে দু’টি বিভাগীয় শহরে এই সুবিধা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে থ্রিজি চালু করা হবে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে থ্রিজির আরও ৪টি লাইসেন্স দেয়া হবে। এই লাইসেন্স উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) জিয়া আহমেদ জনকন্ঠকে জানান, থ্রিজির খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালায় কিভাবে থ্রিজি সার্ভিস চালু করা হবে-তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালাটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নীতিমালাটি মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে এলে আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী জুলাই মাসের প্রথম দিকে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার কাজ শেষ করা হবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বিটিআরসি। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটক মোবাইল অপারেটরসহ নতুন আরও চারটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ওই নীতিমালায়। তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) লাইসেন্স দেয়ার সময় পরবর্তী চতুর্থ প্রজন্ম (ফোরজি) এবং লং টার্ম ইভাল্যুয়েশন (এলটিই) প্রযুক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত নীতিমালা এ সপ্তাহেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেলুলার মোবাইল ফোন সার্ভিস (থ্রিজি, ফোরজি ও এলটিই) রেগুলেটরি লাইসেন্স গাইডলাইন ২০১২ নামে এ খসড়া নীতিমালায় চারটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারী পাঁচ মোবাইল অপারেটরের মধ্যে দুটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হতে পারে। বাকি দু’টি নতুন অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হবে।
খসড়া নীতিমালায় সব ধরনের তরঙ্গের (স্পেক্ট্রাম) প্রতি মেগাহার্টজের ফি ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। থ্রিজি লাইসেন্স নিলামে প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য ‘ফ্লোর প্রাইস’ থাকবে দেড় হাজার কোটি টাকা। তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল সার্ভিস (থ্রিজি) লাইসেন্স থেকে আনুমানিক ৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোন অপারেটর থ্রিজি লাইসেন্স নেয়ার পর বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক ফোরজি বা এলটিইতে উন্নীত করতে পারবেন। এতে অতিরিক্ত কোন অর্থ না নেয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির এই ফোনে একজন অন্যজনকে দেখে কথা বলতে পারবেন। এমনকি ভিডিও কনফারেন্সও করা যাবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটে ব্রাউজিং, মোবাইলে টিভি দেখা যাবে। থার্ড জেনারেশন (থ্রিজি) ফোন চালু হলে গ্রাহক বিশ্বকে পেয়ে যাবে হাতের মুঠোয়। থ্রিজি হচ্ছে তারবিহীন ইন্টারটে ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি। আধুনিক প্রযুক্তির মোবাইল থ্রিজি এখন পৃথিবীর অনেক দেশেই চালু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.