শিক্ষাবৃত্তি ও ডাচ-বাংলার প্রতারণা by সাইদ আরমান

শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার নামে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে ব্যক্তি মালিকানার ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। এমনকি বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকৃত দরিদ্র ও মেধাবীদের বৃত্তি না দিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের এলাকার  এবং কাছের শিক্ষার্থীদের তা দেওয়া হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সবশেষ চলতি বছর ব্যাংকটি ৮৫৭ জনকে যে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে তার মধ্যে ৫০০ জনকেই এমন স্বজনপ্রীতি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে প্রচার চালানো হয়, ১০২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তির কথা। নির্দিষ্ট এবং চিহ্নিত দু’একটি দৈনিক ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং লিফলেট, ব্যানার, বিল বোর্ড ছড়িয়ে  প্রচার চালাচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে গিয়ে মোট বৃত্তির পরিমাণ দাঁড়াবে ১০২ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষা বৃত্তি ২৫ কোটি টাকার নিচে।

তথ্যমতে, সারা বছরজুড়েই ১০২ কোটি টাকার শিক্ষা বৃত্তির কথা বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। মূলত সাধারণ মানুষকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতেই এটি করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।

প্রচার করা হয়, ১০২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু সবশেষ এবছর তারা ৮৫৭ জন শিক্ষার্থীকে নতুন করে বৃত্তি দিয়েছে। যাদের প্রত্যেকে পাবেন আড়াই হাজার টাকা।

তথ্যমতে, বছরের তারা ১৭ কোটি টাকার নিচে বৃত্তি দিচ্ছে।  

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, কৌশল করে এমনটি করা হচ্ছে। আমরাও জানি বিষয়টি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। সাধারণ মানুষের ধারণা আমরা প্রতি বছর ১০২ কোটি টাকা শিক্ষা বৃত্তি দিচ্ছি। কিন্তু আসলে তা নয়। মানুষের কাছে ব্যাংকিং ব্যবসায় গ্রহণযোগ্য হতে এবং এভাবে টিকে থাকতে এমনটি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ১০২ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে জেনে মানুষের ব্যাংকের প্রতি একটি ভালো ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর  এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ছেলে মেয়েকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। আর এজন্য করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ থেকে ব্যয় করেছে ২৫ কোটি টাকা। প্রতি শিক্ষার্থীকে তারা শিক্ষা জীবনের পুরো সময় আড়াই হাজার করে টাকা দিয়ে থাকে।

এদিকে ব্যাংকের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, শুধু মিথ্যা প্রচার নয়। শিক্ষাবৃত্তি কাদের দেওয়া হবে তা নিয়েও অনিয়ম করে কর্তৃপক্ষ। বৃত্তি দেওয়া হবে বলে সারা দেশ থেকে সাধারণ ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। কিন্তু বাছাই করা হয় ভিন্ন ভাবে।

সূত্র মতে, মেধাবী ও দরিদ্রদের থেকে পরিচালকদের এলাকা, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আত্মীয় স্বজন এমন শিক্ষার্থীরাই বিবেচিত হচ্ছেন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবেদুর রহমান খান, পরিচালক সায়েম আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ তাদের নিজেদের এলাকার শিক্ষার্থীদের বেছে নেন। অথচ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কষ্ট দিচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, ৯০ শতাংশ গ্রামের ছেলে মেয়ে বৃত্তি পাচ্ছে। 

জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এমন প্রতারণামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঐ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মিথ্যা প্রচার শুরু করে তারা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক সিএসআর নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। আবার অনেকে যে পরিমাণ প্রকৃত সিএসআর করে তার থেকে বেশি আনুষ্ঠানিক খাতে খরচ করে।এটি বন্ধ করতে আমরা নীতিমালা তৈরি করছি।

এ বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন কথা বলতে রাজি হননি। এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. বসুনিয়াকে টেলিফোন করলে তিনি বলেন, `এটি লেখার বিষয় না।

No comments

Powered by Blogger.