বেদখল

দখলদাররা জনজীবনে রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। তারা শুধু বেআইনিভাবে দেশের কৃষিজমি, বনভূমি ও জলাশয় দখল করছে না; একইসঙ্গে তারা নির্বিচারে সরকারী সম্পত্তিও দখল করছে। অথচ এই সরকারী সম্পত্তির ওপর দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে।


বেআইনী দখলদাররা সরকারী সম্পত্তি দখলের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করছে। একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, রাজধানীতে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৮১৫ দশমিক শূন্য ৫৬৯ একর সরকারী জমি বেহাত হয়ে গেছে। জানা গেছে, বেহাত সম্পত্তি উদ্ধারের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ সরকারী জমি বেদখল হয়েছে তার প্রমাণও পেয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। কেবল রাজধানী ঢাকাতে যদি এত বিপুল পরিমাণ সরকারী জমি দখলদারদের কবলে চলে যায়; তাহলে সারাদেশে বেদখল সরকারী জমির পরিমাণ কত? এই সহজ প্রশ্নটি এখন অনেকের মনেই জেগেছে। সেই সঙ্গে জনগণ ভাবতে শুরু করেছে। কাদের কারণে এই বিপুল পরিমাণ জমি এভাবে বেদখল হল? কারণ বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এখানে প্রতি ইঞ্চি জমি যাতে জনকল্যাণে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়Ñসে কথা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের বদলে যদি সরকারী জমি বেদখল হয়ে যায়, তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? উল্লেখ্য, দখলদারদের কবল থেকে রাজধানীর বেহাত সরকারী জমি উদ্ধারের লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অনুসন্ধানে রাজধানীর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সরকারী জমি বেদখল হওয়ার কথা জানা গেছে। এর দাম প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা।
জমি রেকর্ডের সময় অনেক ভুল হয়। তাই বলে লাখো কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জমি সুকৌশলে বেহাত হয়ে যাবে? এ অবশ্যই শাস্তিমূলক অপরাধ। বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারী জমি অবিলম্বে উদ্ধার করতে হবে; এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কাক্সিক্ষত নয়। স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এসব সম্পত্তির প্রকৃত মালিক জনগণ। তাই সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বেদখল হওয়া সরকারী সম্পত্তির বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে হবে। কিছু ভূমিদস্যু ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার কারণে সরকারী সম্পত্তি বেহাত হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ যাতে নাজেহাল না হয়Ñ সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বেহাত জমি পুনর্দখলের উদ্যোগ নেয়া দরকার। রাজধানীর সরকারী জমি সম্পূর্ণভাবে সরকারী প্রয়োজন ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.