বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় গত ১৯ নবেম্বর ঘোষিত হয়। এরপর পাঁচ বিচারপতি গত ১৭ ডিসেম্বর সে ঐতিহাসিক রায়ে স্বার করেন। রায়টির পূর্ণ বিবরণ এখানে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো_(পূর্ব প্রকাশের পর)


তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক অবশ্য আপীলকারী মহিউদ্দীন (আর্টিলারি), আসামী ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ওরফে মোসলেহউদ্দীনকে দণ্ডবিধির ১২০খ/৩০২ এবং ৩৪ ধারায় আনীত অভিযোগের ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় প্রদত্ত তাদের মৃতু্যদণ্ড বহাল রাখেন এবং তদানুযায়ী এদের সঙ্গে সম্পর্কিত ডেথ্ রেফারেন্স গ্রহণ করেন এবং আসামী লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) পেশকৃত ১৯৯৮ সালের ২৬১৭নং ফৌজদারি আপীল নাকচ করেন। ঢাকার বিজ্ঞ দায়রা জজ ১৯৯৭ সালের ৩১৯নং দায়রা মামলায় আসামী ক্যাপ্টেন মোঃ কিসমত হাশেম, মেজর আহমদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যে দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক তা বাতিল করে দেন এবং বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তাদেরকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন এবং তদানুযায়ী ক্যাপ্টেন মোঃ কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার ও মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত ডেথ্ রেফারেন্সটি প্রত্যাখ্যা হয়।
মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) দেশের বাইরে ফেরার থাকার কারণে অনুপস্থিতিতেই বিচার করের তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরবতর্ীকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে গ্রেফতার করে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে দেশে ফেরত আনা হয় এবং জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সে ২০০৭ সালের ৯ নং জেল পিটিশন দাখিল করে। পরবতর্ী পর্যায়ে সে বিলম্ব মওকুফের (উমভঢমভর্টধমভ মত ঢণফটহ) একটি আবেদন পেশ করে তাতে উল্লেখ করেন যে, এই মামলা এবং তাতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়ার রায় সম্পর্কে সে কিছুই জানতে না। রাষ্ট্র একটি এফিডেভিট দাখিল করে এর বিরোধিতা করে। দু'পরে বক্তব্য শুনানির পর বিলম্ব মওকুফ হওয়ায় ২০০৭ সালের ৩৪৩ নং আপীলের জন্য অনুমতির ফৌজদারি পিটিশন পেশ করে। পিটিশনের উপর শুনানি ২০০১ সালের আপীলের জন্য অনুমতির ৯৫, ৯৬, ৯৭ ও ৯৮ নং ফৌজদারি পিটিশনের সঙ্গে একত্রে সদৃশ্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
আপীলের অনুমতির জন্য উপরিলি্লখিত সকল পিটিশনে আইনের একই প্রশ্ন ও তথ্য উত্থাপিত হওয়ায় সেগুলো অনুমতি মঞ্জুরের একটি আদেশ বলে অনুমতি মঞ্জুর করে নিন্মেুাক্তভাবে নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি করা হয় :
"(ক) ডেথ রেফারেন্স ও তৎসম্পর্কিত ফৌজদারি আপীলসমূহ বিবেচনায় নিয়োজিত হাইকোর্ট ডিভিশনের ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকরা দু'টি পৃথক ও সমান্তরাল রায় দিয়েছেন এবং নিজ নিজ রায়ে স্বার করেছেন। পৃথকভাবে স্বারিত এই দুই আলাদা আলাদা রায়কে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় বলে গণ্য করা যায় না। এ থেকে দেখা যায় বিজ্ঞ বিচারকরা ভিন্নমত সূচক রায় দিয়েছেন এবং এটা বিজ্ঞ বিচারকদের ১৪. ১২.২০০০ তারিখে দেয়া আদেশ থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে। ঐ আদেশে বলা আছে যে, ১৯৯৮ সালের ৩০ নং ডেথ রেফারেন্সে তাদের দেয়া রায়টি হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত রায়। তদানুযায়ী বিজ্ঞ বিচারকরা প্রয়োজনীয় আদেশ/নির্দেশের জন্য বিষয়টি বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি ডেথ রেফারেন্সটি সামগ্রিকভাবে নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি অর্থাৎ ১৫ জন আসামীর মামলাটি নি্#৬৩৭৪৩;ত্তির জন্য ১৫.১.২০০১ তারিখে এক আদেশ বলে বিচারপতি মোহম্মদ ফজলুল করিমকে তৃতীয় বিচারক হিসেবে নিয়োগ করেন। বিষয়টির এই পটভূমিতে বিজ্ঞ কেঁৗসুলিরা দৃঢ় অভিমত পোষণ করেছেন যে, ডেথ রেফারেন্স কেসটি সামগ্রিকভাবে নি্#৬৩৭৪৩;ত্তির জন্য তৃতীয় বিচারকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কাজেই বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক শুধু ৬ জন আসামির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আইনঘটিত ভুল করেছেন এবং এর মাধ্যমে ন্যায়বিচারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
(খ) ঘটনাটি ঘটেছিল ১৫.৮.১৯৭৫ তারিখে ভোরবেলায়। অথচ তথ্যদাতা রাষ্ট্রপরে ১ নং সাী এএফএম মহিতুল ইসলাম ঘটনা সংঘটিত হবার পর বরাবর ঢাকায় ছিলেন এবং ঘটনার পর ১৯৭৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গভবনে রিসেপশনিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবং দীর্ঘ ২১ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পর ২.১০. ১৯৯৬ তারিখে এফআইআর দায়ের করার আগ পর্যন্ত চাকরিরত ছিলেন। এফআইআর দায়েরে এই অযৌক্তিক বিলম্ব থেকে বাদীপরে এই অসদুদ্দেশ্য ও দুরভিসুন্ধি ফুটে ওঠে যে তারা দোষী সাব্যস্ত আবেদনকারীদেরকে বানোয়াট ও সাজানো সা্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অন্যায়ভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে তাদের তির কারণ ঘটিয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগসহ নিম্ন আদালতগুলো দোষী সাব্যস্ত আবেদনকারীদের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বিচারকালে এবং তাদের দোষী সাব্যস্ত করে মৃতু্যদণ্ড দেয়ার েেত্রও এই দিকটি বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়ে ভ্রান্তির পরিচয় দিয়েছে।
(গ) রেকর্ডকৃত সা্যপ্রমাণ ও উপকরণাদি থেকে যদিও দেখা যায় যে, ব্যাপারটা সাধারণ কোন হত্যাকাণ্ড ছিল না বরং তা ছিল একটা বিদ্রোহ যার পরিণতিতে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর ও তাঁর পরিবার- পরিজনকে হত্যা করা হয়েছিল। তথাপি দোষী সাব্যস্ত পিটিশনকারীসহ দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের সাধারণ হত্যা মামলার মতো সাধারণ ফৌজদারি আদালতে বিচার করা ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কাজে কাজেই বিচারটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
(ঘ) রেকর্ডকৃত সা্যপ্রমাণ ও উপকরণাদি থেকে শুধু এটাই দেখা যাবে যে, এখানে হত্যার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কোন ঘটনা ছিল না, তবে সেটা ছিল তদানীন্তন মুজিব সরকার পরিবর্তনের ল্যে বিদ্রোহ সংঘটনের একটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। কাজেই দোষী সাব্যস্ত পিটিশনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা ও দণ্ড দেয়ার বিষয়টি বাতিলযোগ্য। (ক্রমশ)

No comments

Powered by Blogger.