তারুণ্যে নিরুদ্দেশ মোসলেম ফিরে এলেন ২৩ বছর পর- নিখোঁজ রহস্য উদ্ঘাটন

সবাই নিশ্চিত ছিলেন তিনি আর জীবিত নেই। টানা দুই যুগ নিরুদ্দেশ থাকার পর হঠাৎ তাঁর আগমন যেন স্বপ্নদর্শন। এমনই এক অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিলেন মোসলেম। তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে। ফিরলেন ২৩ বছর পর পৌঢ়ত্বের ছোঁয়া নিয়ে।


অবাক করা এমন কা- দেখা গেল মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তিনি যখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান, তখন তাঁর মুখভর্তি কাঁচা-পাকা লম্বা দাড়িগোঁফ, মাথায় বড় চুল, দীর্ঘদিনের কারাবাসে শীর্ণ তাঁর দেহ। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হলেও পুনর্মিলনের আনন্দে হাসছিল মোসলেমউদ্দিনের চোখ-মুখ। এখন তাঁর বয়স ৫২, তাঁকে চেনা দায়।
আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বিমানবন্দরে তাঁকে নিতে এসেছিলেন তাঁর ভাই সেকেন্দার আলী। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আমার ভাই মরে গেছে। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা যে তাঁকে ফিরে পাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। রেডক্রসের সহযোগিতায় চলতি সপ্তাহেই পাকিস্তানের করাচীর একটি কারাগার থেকে ছাড়া পান মোসলেমউদ্দিন।
সেকেন্দার আরও বললেন, চট্টগ্রামের একটি জাহাজ কারখানার শ্রমিক মোসলেমউদ্দিন ১৯৮৯ সালের কোন এক সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেন। এরপর আর খোঁজখবর না পেয়ে মোসলেমউদ্দিনের কর্মস্থলে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি আর কাজে যোগ দেননি। বহু বছর কেটে যাওয়ার পর এক দেড় মাস আগে এক অপরিচিত লোক আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে ফোন করে আমার ভাইয়ের খোঁজ জানার জন্য একটা ফোন নম্বর দেন। কিন্তু সেই নম্বরে বার বার ফোন করেও আমরা ফোন বন্ধ পাই। এরপর উপায়ান্তর না দেখে আমরা আমাদের এলাকার সাংবাদিক জুলহাস আলমের কাছে সাহায্যের জন্য যাই। তিনি তখন রেডক্রসের সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দেন।
মোসলেমের নিখোঁজ রহস্য সম্পর্কে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের ট্রেসিং অফিসার রোকসানা জাহান বলেন, মোসলেমউদ্দিনের পরিবার গত ১০ জুন আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য এলে আমরা দেখলাম, যে নম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে ফোন গিয়েছিল, সেটা ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের। আমরা সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারি, ময়মনসিংহের আব্দুল আজিজ সরকারের ছেলে মোসলেমউদ্দিন গত ১৫ বছর ধরে করাচীর একটি জেলে বন্দী আছেন। তাঁর পরিবার যদি তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার খরচ বহন করতে পারে তাহলে তাঁকে ছাড়িয়ে আনা যাবে।
জানা যায়, মোসলেমের নিখোঁজ রহস্য উদ্্ঘাটনে রেডক্রসের ‘পারিবারিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার প্রকল্প’-এর আওতায় পাকিস্তানের রেডক্রস কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবিরাম যোগাযোগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ফিরিয়ে আনা হয় মোসলেসউদ্দিনকে।
মোসলেমউদ্দিন বিমানবন্দরে জানান, ১৯৮৯ সালে তিনি ভারত সীমান্ত পার হয়ে অসম ও মেঘালয়ে কয়েক মাস কাটিয়ে দিল্লীতে পৌঁছেন। সেখানে বিয়েও করেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানে প্রবেশের সময় তিনি ধরা পড়ে যান। এরপর করাচীর একটি কারাগারে ১৫ বছর তাঁর বন্দী জীবন কাটে।
মোসলেমউদ্দিনের ভাই সেকেন্দার আলী বলেন, এটা এক অবিশ্বাস্য কাহিনীর মতোই। এই মুহূর্তে তিনি খুবই দুর্বল আর অসুস্থ। কথা বলার মতো অবস্থাও নেই। তবে আমার ভাই ফিরে আসায় পরিবারসহ গোটা গ্রামের মানুষ খুব খুশি। আমরা চাই বাকি জীবন মোসলেম যেন আমাদের মাঝেই থাকে।

No comments

Powered by Blogger.