ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ অর্থনীতির সব সূচকেই অগ্রগতি- কৃষকরাও ঋণ রিসিডিউলের সুযোগ পাচ্ছেন ড. আতিউর by হাসান নাসির

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, কৃষিঋণ প্রদানসহ অর্থনীতির সকল সূচকেই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। হ্রাস পেয়েছে মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণ।


দৰিণ এশিয়ায় চীন ছাড়া বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশটি বিগত বছরে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি করতে সৰম হয়েছে। গ্যাস, বিদু্যতসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা গেলে খুব দ্রম্নতই দেশ এগিয়ে যাবে। আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একটি প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিয়ার রহমান রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখার মহাব্যবস্থাপক নওশাদ আলী চৌধুরীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার সম্মেলনকৰে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিডিয়ার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামকে পর্যটন শিল্পসমৃদ্ধ করতে সেখানে ৰুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি, এসএমই এবং নারী উদ্যোগে আমরা ঋণের প্রবাহ বাড়াতে চাই। তিনি জানান, অনেক কৃষকও ঋণখেলাপী হয়েছে। সহজ-সরল এ কৃষকের অনেকেই ব্যাংকে যাবার সাহস পায় না। আমরা সিদ্ধানত্ম নিয়েছি শুধু শিল্পপতি নয়, কৃষকরাও এখন নির্দিষ্ট হারে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ রিসিডিউল করার সুযোগ পাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবর্নর বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে জানান, ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে মূলস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার নেমে এসেছে ৫ দশমিক ১ শতাংশে। মূলধনী পণ্য আমদানি চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ। এর আগের বছরের একই সময়ে হ্রাস পেয়েছিল ১৭ শতাংশ। অক্টোবর মাসে রফতানি বেড়েছে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গত নবেম্বর মাসে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৪ মার্কিন ডলার, যা একমাসের হিসেবে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। তিনি জানান, ২৯ ডিসেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ হাজার ৩৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের বছরের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৫ হাজার ৮০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশী বিনিয়োগ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে বিদেশী বিনিয়োগ ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি। রাজস্ব আয় গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যনত্ম ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের টার্গেট ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিতরণ টার্গেটের ৩৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আর কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ৪১ শতাংশ। শিল্পঋণ বিতরণ ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আদায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ সামগ্রিক চিত্রই প্রমাণ করে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
ড. আতিয়ার রহমান বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হচ্ছে পর্যটন শিল্প। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ৰুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। ব্যক্তিপর্যায়ে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটক আকর্ষণীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য কেউ আগ্রহী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে গবর্নর বলেন পাহাড়ে আদা, রসুন, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা চাষ করে অনেক নারী স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করছে। অত্যনত্ম স্বল্পসুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পাশে দাঁড়াতে চায়। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার মহাব্যবস্থাপক নওশাদ আলী চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামে চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লৰ্যমাত্রা ২৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তন্মধ্যে লৰ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। কৃষিঋণ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তবে এগুলো শুধু এ বছরের নয়; দীর্ঘ সময়ের পুঞ্জীভূত।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আইইবির কনভেনশনে একটি সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিকেলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত অনুষ্ঠান ও ব্যাংক কাবের পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

No comments

Powered by Blogger.