চরাচর-ডিএমসি ডে by ডা. মুনতাসীর মারুফ

আগামীকাল ডিএমসি ডে- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস। ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের প্রথম ও ঐতিহ্যবাহী এ মেডিক্যাল কলেজটির। তদানীন্তন ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার সময় পশ্চিমবঙ্গে ১৮৫৩ সালে মেডিক্যাল কলেজ (কলকাতা) চালু হলেও পূর্ববঙ্গ এ ব্যাপারে অবহেলিত থেকে যায় আরো


প্রায় শ খানেক বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল ব্রিটিশ সরকারকে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রস্তাব পেশ করে ১৯৩৯ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে চাপা পড়ে যাওয়া এ প্রস্তাবটি পুনরায় আলোচনায় আসে যুদ্ধ শেষে। ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মেজর ডাব্লিউ জে ভারজিন এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে গড়া কমিটির প্রস্তাবনা অনুসারে মেডিক্যাল কলেজটি চালু হয় ১৯৪৬ সালের এই দিনে।
শুরুতে ঢাকা মেডিক্যালের নিজস্ব কোনো কলেজ ভবন ছিল না। যে ভবনে প্রথম কলেজটি চালু হয়, তা ১৯০৪ সালে স্থাপিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সচিবালয় হিসেবে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলাও শুরু হয় এ ভবন থেকেই। একটি মাত্র ভবন নিয়ে যাত্রা শুরু করা ঢাকা মেডিক্যালে বর্তমানে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা; কলেজ ও হাসপাতাল ভবন ছাড়াও রয়েছে নিজস্ব পৃথক মিলনায়তন, পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য আলাদা ভবন, চার তলাবিশিষ্ট পৃথক বার্ন ইউনিট ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল ইত্যাদি। প্রতিবছর ১৮০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হন এমবিবিএস কোর্সে। বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স (এমডি ও এমএস) চালু করা হয়েছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কার্যকর অবদান রেখেছেন এ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী ও চিকিৎসকরা। আটচলি্লশে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদ করে আরো অনেকের সঙ্গে কারাবরণ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র এম আই চৌধুরী, আবু সিদ্দিক, আলী আসগর, জসিমুল হক প্রমুখ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের নির্বিচার গুলিতে নিহত সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথম শহীদ মিনারটি তৈরি করেছিলেন ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্র-চিকিৎসকরাই। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত নানা রাজনৈতিক শলাপরামর্শ, সভা আর নেতাদের আত্মগোপনের অন্যতম ঘাঁটি ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেন ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রী-চিকিৎসকরা। শহীদ হয়েছেন ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, ডা. সামসুদ্দিনসহ অসংখ্য চিকিৎসক, সিরাজুল ইসলাম-হুমায়ুন ফরিদীর মতো ছাত্র, নিপা লাহিড়ীর মতো ছাত্রীরা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র, কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের তৎকালীন প্রভাষক ডা. শামসুল আলম খান মিলন। এমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সঙ্গী করে পথচলা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের। আজ পালিত হচ্ছে এর ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গৌরবকে সমুন্নত রাখা, মানবসেবায় নিজেদের অনন্য করে তোলার অঙ্গীকারে দীপ্ত হোক কলেজের শিক্ষার্থীরা- এটাই প্রত্যাশা। শুভ জন্মদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ।
ডা. মুনতাসীর মারুফ

No comments

Powered by Blogger.