এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-তবুও এগিয়ে যেতেই হবে

প্রক্রিয়াধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক যানজট নিরসন নয়, বরং বৃদ্ধি করবে_ বহুল প্রত্যাশিত স্থাপনাটি সম্পর্কে বুয়েটের একটি গোলটেবিলে এই সতর্কতা এমন সময় উচ্চারিত হলো যখন খোদ প্রকল্পটি নতুন জটিলতায় পড়েছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার ও উন্নয়ন অগ্রাধিকার এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এক দফা পিছিয়ে জুলাইয়ে শুরুর কথা ছিল।
কিন্তু এর দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার কমানোয় এখন নকশা, আর্থিক সম্ভাব্যতা, কারিগরি ও যান চলাচল সম্পর্কিত সমীক্ষাসহ অনেক কিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন সিদ্ধান্তে প্রাক্কলিত ব্যয় অন্তত এক হাজার কোটি টাকা কমলেও বেড়ে গেল জটিলতা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে উড়াল সড়কটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ শুরুর তারিখই এখন অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে গোলটেবিলে যে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হলো, তা সচেতন নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করবে সন্দেহ নেই। আলোচকরা দাবি করছেন, ২০০৬ সালেই এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। তারপরও কেন তা আমলে নেওয়া হয়নি বোধগম্য নয়। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিলম্বে হলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। নির্মাণ কাজ যেহেতু এখনও শুরু হয়নি, সময়ের এক ফোঁড় দিয়ে অসময়ের দশ ফোঁড়ের বিড়ম্বনা এড়ানো সহজ হবে। প্রয়োজনে গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তাতে করে বিপুল অর্থঘন প্রকল্পটি নিয়ে সন্দেহ ও ঝুঁকি কমবে। তবে গোলটেবিলে যেভাবে এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারের ঢালাও বিরোধিতা করা হয়েছে, তা আমাদের কাছে খানিকটা চরমপন্থা বলেই বিবেচিত হয়। দেড় কোটি জনসংখ্যার একটি নগরীর যান চলাচল জটমুক্ত করতে হলে উড়াল সড়কের মতো ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ব্যাংককসহ বিশ্বের অনেক স্থানেই এর সাফল্য প্রমাণিত। বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক প্রভাব থাকে; সেগুলোকে যথাসম্ভব মোকাবেলা করাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। সরকারি ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সহযোগিতা ও সমন্বয় থাকলে সেই চ্যালেঞ্জ জয় করা কঠিন নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পর প্রকল্পটি থেকে পিছিয়ে আসার অবকাশ নেই। উচিতও হবে না। ঢাকার স্থানগত সীমাবদ্ধতাও মনে রাখা জরুরি। যেভাবে এখানে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, যেভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন মুখ নাগরিকের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে; সামনের দিনগুলোতে যান চলাচলের সংকট আরও প্রকট হবে। বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এখনই কঠিন; এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে সামনের দিনগুলোতে ভূগর্ভস্থ ও উড়াল পথ ছাড়া যান্ত্রিক যাতায়াত অসম্ভবই হয়ে পড়তে পারে। আমরা চাই, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল প্রকল্প ঠিক রেখে যানজটের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব হ্রাসে বরং চিন্তা-ভাবনা করুক সবাই। প্রথমবারের মতো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বড় ধরনের একটি প্রকল্প সম্পন্ন করতে গিয়ে আর্থিক জোগানের যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারেও সবার ভাবনাগত সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করা গেলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সবারই মনে রাখা জরুরি, গত চার দশকে স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। নগর ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। অবকাঠামোগত দিক থেকেও আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার প্রভৃতির মিশ্র বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গতানুগতিক বিরোধিতার বদলে গঠনমূলক সমালোচনাই সে ক্ষেত্রে হবে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা।

No comments

Powered by Blogger.