এমসি কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ, ৪২ কক্ষে আগুন

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিবিরকর্মী-অধ্যুষিত তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হাতে ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় সন্ধ্যায় দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষে ১০ জন আহত হন।


এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হয়ে ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছাত্রাবাসের পাঁচটি ব্লকের মধ্যে তিনটি ব্লক পুড়ে গেছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। প্রতিটি ব্লকে ১৪টি করে কক্ষ রয়েছে।
ঘটনা জেনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ছয়টায় এমসি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-শিবিরের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের পাঁচ নম্বর ব্লকের কাছে ছাত্রলীগের কর্মী ও কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহামঞ্চদ উজ্জ্বল শিবিরের কর্মীদের পিটুনিতে আহত হন। তাঁকে রড ও রামদা দিয়ে আঘাত করা হয়। এ খবর শুনে বাইরে থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রথমে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে সারিবদ্ধ থাকা পাঁচটি ব্লকের মধ্যে তিনটিতে আগুন দিয়ে চলে যান।
ছাত্রাবাসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ব্লকে একসঙ্গে আগুন জ্বলে ওঠায় পুরো ছাত্রাবাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের খবর দেওয়া হলেও ছাত্রাবাসের আশপাশ এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ করায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। রাত প্রায় সাড়ে নয়টার পর ছাত্রাবাসের পেছন দিক থেকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। তবে রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুনে ক্ষয়ক্ষতির কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে শিবিরের কলেজ শাখার সভাপতি এস এম মনোয়ার জানান, ছাত্রাবাসে শিবিরের কর্মীরা থাকেন বলে তাঁদের তাড়াতে ছাত্রলীগই আগুন দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘ছাত্রাবাসে আগুন লেগেছে খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তবে এ আগুন কারা লাগিয়েছে—এ বিষয়ে তাঁরা অবহিত নন বলে জানান।
রাত সাড়ে নয়টায় যোগাযোগ করলে ঘটনাস্থলে অবস্থান করা সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ধীরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কারা আগুন দিয়েছে—এ বিষয়ে পরে জানা যাবে। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল মনোয়ার জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই বিক্ষুব্ধরা বিভিন্ন ব্লকে আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.