পবিত্র কোরআনের আলো-ইমরান (আ.)-এর বংশধরদের কাহিনীর অবতারণা

৩৫. ইয্ ক্বা-লাত ইমরাআতু ই'মরা-না রাবি্ব ইন্নী নাজারতু লাকা মা-ফী বাত্বনী মুহার্রারান ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী; ইন্নাকা আনতাছ্ ছামীউন আ'লীম। ৩৬. ফালাম্মা- ওয়াদ্বাআ'তহা- ক্বা-লাত রাবি্ব ইন্নী ওয়াদ্বা'তুহা- উনছা-; ওয়াল্লাহু আ'লামু বিমা- ওয়াদ্বাআ'ত; ওয়ালাইছায-যাকারু কালউনছা-; ওয়া ইন্নী ছাম্মাইতুহা- মারইয়ামা, ওয়া ইন্নী উয়ী'যুহা- বিকা ওয়াযু!ি!!!!!ইয়্যাতাহা- মিনাশ্ শাইত্বা-নির্ রাজীম।


৩৭. ফাতাক্বাব্বালাহা- রাব্বুহা- বিক্বাবূলিন হাছানিন ওয়া আম্বাতাহা- নাবা-তান হাছানা, ওয়্যাকাফ্ফালাহা- যাকারিয়্যা; কুল্লামা- দাখালা আ'লাইহা- যাকারিয়্যাল মিহরাবা ওয়াজাদা ই'নদাহা- রিয্ক্বান-; ক্বা-লা ইয়া-মারইয়ামু আন্না- লাকে হা-যা-; ক্বা-লাত হুয়া মিন ই'নদিল্লাহি; ইন্নাল্লাহা ইয়ারযুক্বু মাইঁয়্যাশাউ বিগাইরি হিছাব। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৫-৩৭]
অনুবাদ : ৩৫. যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে প্রভু, আমার গর্ভে যা আছে তাকে আমি স্বাধীনভাবে তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম। তুমি আমার পক্ষ থেকে এ সন্তানটিকে কবুল করে নাও। অবশ্যই তুমি সব শোনো এবং সব জানো।
৩৬. অতঃপর যখন ইমরানের স্ত্রী সন্তান জন্ম দিল তখন সে বলল_হে প্রভু, আমি তো একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছি; আল্লাহ ভালোভাবেই জানতেন ইমরানের স্ত্রী কী জন্ম দিয়েছেন; কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলে তো মেয়ের মতো হয় না। ইমরানের স্ত্রী বললেন, আমি এ শিশুর নাম রাখলাম মারইয়াম এবং আমি এ শিশু ও তার অনাগত সন্তানকে অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
৩৭. আল্লাহ ইমরানের স্ত্রীর দোয়া কবুল করলেন এবং তাঁকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে গ্রহণ করে নিলেন আর তাঁকে সুন্দরভাবে গড়ে তুললেন। অতঃপর তাঁর তত্ত্বাবধায়ক করা হলো যাকারিয়াকে। এর পর যখনই যাকারিয়া তাঁর কাছে তাঁর ইবাদতের কক্ষে যেতেন তখনই সেখানে কিছু খাবার দেখতে পেতেন। যাকারিয়া জিজ্ঞেস করতেন, হে মারইয়াম এসব তোমার কাছে কোথা থেকে আসে? সে জবাব দিত, আল্লাহর কাছ থেকে। অবশ্যই আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসেবে রিজিক দান করেন।
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে আলে ইমরান বা ইমরানের বংশধরদের কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে। ইমরানের (আ.) স্ত্রীর নাম ছিল হান্না। তিনি মারইয়ামের মা এবং ঈসা (আ.)-এর নানি। সেকালে পুত্রসন্তানকে পার্থিব কাজ থেকে মুক্ত রেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমতে দান করার রেওয়াজ ছিল এবং অনুরূপ দানের জন্য মানত করাও জায়েজ ছিল। ইমরানের স্ত্রী হান্নাও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে বায়তুল মুকাদ্দাসে দান করার জন্য মানত করেছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলো তখন তিনি হতাশ হয়ে ভাবলেন, হয়তো তার মানত কবুল হয়নি। কারণ কন্যাসন্তান বায়তুল মুকাদ্দাসে দান করার কোনো রেওয়াজ ছিল না। তিনি কন্যার নাম রাখলেন 'মারইয়াম' এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন তাকে গ্রহণ করে নিতে। আল্লাহ তায়ালা যে মারইয়ামকে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমতের জন্য কবুল করেছিলেন সে কাহিনী এখানে বলা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে কন্যাশিশু মারইয়াম বায়তুল মুকাদ্দাসের খাদেম হিসেবে স্থান পেলেন। তার খালু যাকারিয়া (আ.) তার লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন। এভাবেই মারইয়াম সুন্দরভাবে গৃহীত হলো এবং সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠল। আল্লাহর রহমতে মারইয়াম গড়েও উঠল সুন্দর মানুষ হিসেবে। মারইয়াম যখন বড় হয়ে উঠলেন তখন তাঁর খালুও তত্ত্বাবধায়ক যাকারিয়া (আ.) তাঁর ইবাদত কক্ষে গেলেই দেখতে পেতেন সেখানে কিছু না কিছু খাবার আছে। জানতে চাইলে মারইয়াম বলতেন, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা এখানে স্বীকার করছেন, তিনি যাকে চান তাকে বিনা হিসাবে রিজিক দান করেন।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইমরান (আ.) বনি ইসরাইল বা ইহুদি বংশের লোক। বায়তুল মুকাদ্দাস ইহুদিদেরই ধর্মীয় কেন্দ্রভূমি। সেখানে ইহুদিদেরই একক কর্তৃত্ব ছিল। এরপর মারইয়াম পুত্র ঈসা (আ.) যখন ইহুদি ধর্মের সংস্কার করতে চেষ্টা করেন, তখনই বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ইহুদি বংশের ধারা আদর্শিকভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরে খ্রিস্টান ধর্মের জন্ম হয়, যা ছিল ইহুদিদের চরম শত্রু। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা সবাই ইমরানের বংশধর নয়, তবে এখান থেকে আলে ইমরান বা ইমরানের ভিন্ন বংশধারার সূচনা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.