ভোলায় ছাত্র-শ্রমিক সংঘর্ষ, হত ১ ওসিসহ আহত ৫০-২৫ বাসে আগুন, ভাংচুর

ভোলা, ৮ জুলাই ॥ ভোলায় বাসভাড়াকে কেন্দ্র করে বাস শ্রমিক ও কলেজ ছাত্রদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় মমিন নামের এক বাস শ্রমিক নিহত হয়েছে। ভোলা থানার ওসিসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভোলা সরকারী কলেজসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে হামলা চালিয়ে ২৫টি বাস ভাংচুর করেছে।


রবিবার দুপুরে ভোলা সরকারী কলেজ ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সংঘর্ষের পর থেকে ভোলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যুগীর ঘোল, ভোলা কলেজ ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বাস শ্রমিকদের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা টায়ার জ্বালিয়ে ও রাস্তার ওপর বাস রেখে ভোলা চরফ্যাশন সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিকেল ৫টার দিকে বাস শ্রমিকরা ভোলা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়নে করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার দুপুরের দিকে ভোলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র চরফ্যাশন থেকে ভোলায় এসে ৯৫ টাকার স্থলে ছাত্র হিসেবে ৫০ টাকা ভাড়া দিতে চায়। বাসের স্টাফরা ৭০ টাকা দাবি করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বাসস্টাফরা ছাত্রটিকে লাঞ্ছিত করে পথিমধ্যে রূপসী সিনেমা হলের কাছে নামিয়ে দেয়। এ খবর পেয়ে ভোলা সরকারী কলেজের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা লাঠিসোটা নিয়ে দুপুর ২টার দিকে কলেজসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে উভয়পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা একপর্যায়ে বাস ভাংচুর করে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
ভোলা বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম জানান, ছাত্ররা তাদের একটি বাসে আগুন দিয়েছে। ২৫ থেকে ৩০টি বাস ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ১০-১২ জন স্টাফ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মমিন নামের এক স্টাফকে মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশাল বাচিমে নেয়ার পথে মারা গেছে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপর দিকে ভোলা কলেজ ছাত্রদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রদের মধ্যে জিকু, জিকরুল, কাইয়ুম, রজিব দে, পাভেল, হুমায়ুন, কবির, মোঃ রাজিব, সোহেল, রিয়াজ, ভাস্কর, মোঃ সোহেল, নিরব, রিয়াজ, জাহিদ, শাহিন, হাবিব, রাশেদ, হান্নান, শংকর, প্রদিপ, আক্তার, মোর্শেদসহ ৩৫-৪০ জন আহত হয়েছে।
ভোলা থানার ওসি সোহরাব আলী জানান, প্রথম দফা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বাস শ্রমিকরা বিকেলে ফের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে তিনি এবং ব্যাটালিয়ন আনসার নায়েক আব্দুর রউফ আহত হয়েছেন। আব্দুর রউফকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহম্মদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে ছাত্রদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। ছাত্রদের পক্ষ থেকেও ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.