ফতোয়াবাজি কি বন্ধ হবে না

ফতোয়াবাজদের দৌরাত্ম্য যেন থামার মতো নয়। যতই তাদের থামানোর চেষ্টা করা হয়, ততই তাদের গতি বাড়ে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় বিশেষ করে দরিদ্র-অসহায় নারীদের ফতোয়ার শিকার হওয়ার খবর আসছে পত্রিকান্তরে। এই ফতোয়ার শিকার হয়ে কাউকে কাউকে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়তে হচ্ছে।


শ শ ঘটনার গুটিকয়েক মাত্র পত্রিকার পাতায় সংবাদ আকারে প্রকাশ হয়ে থাকে। কোনো কোনো ঘটনা পশ্চিমা বিশ্বে এমনভাবে প্রচার করা হয়, বাংলাদেশিদের তখন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তার চেয়েও বড় কথা, অমানবিক এবং প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এই বিধান কার্যকর হওয়ার কারণে দরিদ্র সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। ধর্ম সম্পর্কেও অনেকের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ ফতোয়া আমাদের দেশে আইন ও সংবিধানবিরোধী। আমাদের দেশের উচ্চ আদালতও এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন। তার পরও কিছুই হচ্ছে না।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের হেনার মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমে যেভাবে সংবাদ প্রচার হয়েছে, তাতে মনে করা হয়েছিল, হয়তো দেশে অন্তত ফতোয়ার নামে মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে। কিন্তু হেনার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপিত হতে না হতেই দেখা গেল মৌলভীবাজার জেলায় আরেক ফতোয়ার শিকার হয়েছে এক দম্পতি। সভ্যতা-বিবর্জিত মনে হতেই পারে সেই ফতোয়ার রায়। মৌলভীবাজার জেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাঁপন গ্রামের স্থানীয় জামে মসজিদের সেক্রেটারিসহ চার ব্যক্তিকে হাজির হওয়ার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ প্রদান করেছেন। এই চার ব্যক্তি কয়সর ও রাবেয়া দম্পতিকে ফতোয়া দিয়ে চরম বিপাকে ফেলেছে। ফতোয়ার কারণে চার মাস ধরে এই দম্পতি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা ফতোয়া দিয়েছে যেহেতু রাবেয়াকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়েছে কয়সর, তাই হিল্লা বিয়ে না দেওয়া হলে আর ঘরসংসার করতে পারবে না তাঁরা। ফতোয়াবাজদেরই একজন আজাদের সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের হিল্লা বিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে বোঝা যায় যে কত বড় জঘন্য মনোবৃত্তি লুকিয়ে ছিল ফতোয়াবাজদের মনে। আর এ-ও প্রমাণ হয় যে তারা আসলে ধর্মের নামে ভোগের কথাই চিন্তা করেছে।
অথচ ফতোয়া নিষিদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি রায় আছে। আছে একাধিক নির্দেশনা। গত বছর এ বিষয়ে সরকারকে প্রচারণা চালানোর কথাও উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এত কিছুর পরও ফতোয়া নামের ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ মুহূর্তে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ফতোয়াবাজদের শাস্তি বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংস্কার করতে হবে অতি দ্রুত। হিল্লা বিয়ে কিংবা দোররার মতো শাস্তি সামাজিক শান্তির পরিপন্থী বিধায় যত দ্রুত এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ততই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.