বাড়তি দাম কমিয়ে দিয়েছে সরকারি চিনির 'স্বাদ' by ফেরদৌস লিপি

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চিনির দাম বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় ডিলাররা সেই চিনি কিনছেন না। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনির দর ৪৮ টাকা।


অথচ বিএসএফআইসি আট মাস ধরে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে চিনি কেনার জন্য ডিলারদের ক্রমাগত চিঠি দিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারি এ সংস্থার চেয়ে বাজারের অন্য চিনির পাইকারি দাম কমপক্ষে সাত টাকা কম হওয়ায় ডিলাররা করপোরেশনের চিনি তুলছেন না।
দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত শনিবার এস আলম ব্র্যান্ডের চিনি প্রতি মণ এক হাজার ৭৭২ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি চিনির পাইকারি দাম পড়ে ৪৮ টাকা। এ ছাড়া সিটি ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনি মণপ্রতি এক হাজার ৮০৫ টাকা। এ দুটি ব্র্যান্ডের কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ছিল প্রায় ৪৯ টাকা এবং ভারত থেকে আমদানি করা চিনির মণপ্রতি দাম ছিল এক হাজার ৬৭০ টাকা। সেই হিসাবে ভারতীয় চিনির কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ছিল ৪৫ টাকা।
গত ১২ জুন চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে আসা একটি চিঠি দেখিয়ে খাতুনগঞ্জের ডিলার মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মনোরঞ্জন সাহা গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আট মাস ধরে বাংলাদেশ সুগার করপোরেশন আমাদের চিঠি দিয়ে আসছে। কিন্তু বাজার দরের চেয়ে বেশি হওয়ায় আমরা করপোরেশনের চিনি উত্তোলন করছি না।'
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামেই ডিলারদের কাছে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এটি উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। এখানে করপোরেশনের কোনো লাভ থাকে না।'
সরকারি সংস্থার চিনির দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেসরকারি কম্পানিগুলোর কাছ থেকেই চিনি কিনছেন। এ প্রসঙ্গে মেসার্স ইউসুফ অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, 'সুগার করপোরেশন আমাদের চিঠি দিয়েছে ৫৫ টাকা করে চিনি কিনতে। আর দুই টাকা লাভে এ চিনি বিক্রি করতে। অথচ বর্তমানে খুচরা বাজারেই চিনির দাম ৫২ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। তাই পরিবেশকরা কেউ করপোরেশনের চিনি কিনছেন না।'
আরেক ব্যবসায়ী শাজাহান বাহাদুর বলেন, 'বাংলাদেশ সুগার করপোরেশন থেকে ৫৫ টাকা রেটে চিনি কিনলে প্রতি টনে ব্যবসায়ীদের আট হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে।' তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, 'ডিলারদের সঙ্গে করপোরেশনের চুক্তি সারা বছরের। এ ক্ষেত্রে ডিলাররা বেসরকারি চিনির দাম যখন বেশি থাকে তখন করপোরেশনের চিনি নেবেন আর যখন বেসরকারি চিনির দাম কম থাকে তখন সরকারি চিনি নেবেন না, এটা ঠিক না। বর্তমানে ডিলাররা উত্তোলন না করলেও সংকট দেখা দিলে তারা ঠিকই আবার করপোরেশন থেকে চিনি নেবে।'
উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে শিল্প মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন রাজধানীর খোলাবাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.