স্বীকৃতি পেল জাহাজ ভাঙা শিল্প

অবশেষে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেল জাহাজ ভাঙা। এটা অবশ্যই একটা সুখবর। তবে শিল্প হিসেবে সরকারের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্তের অনেক আগে থেকেই জাহাজ ভাঙা একটি শিল্প হিসেবে বিকশিত হচ্ছিল। মাঝখানে এই বিকাশমান শিল্পটিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


জাহাজ ভাঙা ও রিসাইক্লিংকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাহাজ ভাঙার সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। পাশাপাশি এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক উপশিল্প। জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রতিবছর প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। সরকারও এ শিল্প থেকে আয় করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব। দেশের লৌহজাত সামগ্রীর চাহিদারও সিংহভাগ পূরণ হয় এই জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম সীমিত আকারে এ ব্যবসা শুরু হয় বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় গড়ে ওঠা এই শিল্প বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। সেখানে রয়েছে ১১৯টি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এ শিল্পে।
জাহাজ ভাঙা শিল্প নিয়ে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ অনেক। তাঁদের মতে, এ শিল্পের প্রসার যত ঘটছে, তত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখলেও জাহাজ ভাঙা শিল্প অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবেই গড়ে উঠেছে। শিল্পের বিকাশের সময় পরিবেশ নিয়ে কিছু ভাবা হয়নি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু পুরনো জাহাজে নেই, এ কথাও বলা যাবে না। ১০ হাজার টনের একটি জাহাজে ৩০০ টন বর্জ্য থাকে বলে জানা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প কোনো ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে_এমন একটি শিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবেশের কথাও ভাবতে হবে। মানতে হবে, জাহাজ ভাঙা শিল্পের কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হচ্ছে। আগে থেকেই এটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকলে ভূমিধস থেকে শুরু করে অনেক দূষণই রোধ করা সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক অবকাঠামোর অভাবের পাশাপাশি জাহাজ ভাঙা একটি বিপজ্জনক শিল্প। একটু অসাবধান হলে এখানে অনেক লোকের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু কেবলই পরিবেশদূষণের কথা বলে শিল্পটিকে বিপন্ন করা যাবে না। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে, মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে, এমন একটি শিল্পকে কেমন করে পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে বিকাশের সুযোগ দেওয়া যায়, সে দিকটি নিয়ে অবশেষে ভেবেছে সরকার। জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে যে এলাকায় শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এ শিল্পের উদ্যোক্তাদেরও নিয়মকানুন ও বিধিবিধান কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেবল ব্যবসা বা শিল্পের দোহাই দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না।
জাহাজ ভাঙা ও রিসাইক্লিং শিল্পের এত দিন কোনো অভিভাবক ছিল না। এখন জাহাজ ভাঙা ও রিসাইক্লিংকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হচ্ছে। এতে এ শিল্পের কর্মকাণ্ডে বিশৃঙ্খলা দূর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যখন জাহাজ ভাঙা শিল্পে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল, তখন এই সরকারি সিদ্ধান্ত শিল্পটিকে যে রক্ষা করবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সরকার একটি সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ।

No comments

Powered by Blogger.