পাঠকের মন্তব্য-এটি রাজনীতির প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন দেশের মর্যাদার

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো


সেতু নয়, আগে মানসম্মান বাঁচান
আসিফ নজরুল তাঁর সময়চিত্র কলামে এ কথা লিখেছেন। এ সম্পর্কে পাঠক মাহতাফ হোসাইন: পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সৃষ্টি টানাপোড়েনের আগে উচিত ছিল—তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজ থেকে পদত্যাগ করা এবং বাকি অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এখন উচিত বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে গালমন্দ না করে মুখে কুলুপ এঁটে থাকা। ভবিষ্যতে উচিত দেশের প্রাপ্ত সম্পদ ও বিদেশি গ্রহণযোগ্য সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করে পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ করা।
কোহিনূর সুলতানা শিউলী: স্যার, আপনার নিশ্চয় মনে আছে, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের কথা? স্নায়ুযুদ্ধের সেই উত্তপ্ত যুগে মিসরের পরিস্থিতি অনেকটা এখনকার বাংলাদেশের মতোই ছিল। আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তা প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের সোভিয়েতের সঙ্গে অস্ত্র কেনার চুক্তি করায় মার্কিনপন্থী বিশ্বব্যাংক নাখোশ হয়ে মিসরের সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল করে। এতে আরব জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট নাসেরের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। তিনি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সুয়েজ খাল থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তাঁর এ সিদ্ধান্তে পশ্চিমা শক্তিগুলো (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) বেজায় চটেছিল এবং আরেকটা আরব-ইসরায়েল যুদ্ধও বেধে গিয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে আখেরে প্রেসিডেন্ট নাসেরের লাভই হয়েছিল। সুয়েজ খাল তো জাতীয়করণ হয়ই, পাশাপাশি নাসের রাতারাতি একাধারে আরব দেশসহ তৃতীয় বিশ্ব ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নায়ক বনে যান। এরপর আর পুঁজিবাদী শিবির কখনো তাঁকে খুব একটা ঘাঁটায়নি।
এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদ যে নিজেদের অর্থায়নে (প্রয়োজনে ৩২ কোটি হাত দিয়ে কিংবা এক বেলা বাজার না করে) পদ্মা সেতু নির্মাণের যে কথা বলছেন, স্পিরিটের কথা ভাবলে সেটির সঙ্গে নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের খুব একটা পার্থক্য নেই। সময় ও বাস্তবতা হয়তো ভিন্ন, তবে উভয় ক্ষেত্রেই যে অপ্রতিরোধ্য জাতীয়তাবাদী চেতনা সক্রিয়, তা অস্বীকার করা যাবে না। সরকার যদি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটিই হবে দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব ও ভাবমূর্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত হবে এ রকম যেকোনো পরিকল্পনার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা। সুয়েজ খাল জাতীয়করণে মিসরীয়রা যেভাবে প্রেসিডেন্ট নাসেরের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেভাবে পদ্মা সেতু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো আমাদেরও দরকার। এটি রাজনীতির প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন দেশের মর্যাদার।

নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি
বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে তানভীর সোহেলের এই প্রতিবেদনে। এ সম্পর্কে জেড রহমান লিখেছেন: সবাই শুধু ক্ষমতায় আসতে চায়। সরকার ক্ষমতায় থেকে কী ভুল করল, কেন তাদের জনসমর্থন কমে যাচ্ছে, কোন সমস্যাগুলো জনগণকে ভোগাচ্ছে, তার সমাধান কী হতে পারে—এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
মাহমুদ হোসাইন: খোলনলচে বদলাতে হবে বিএনপির। বিএনপির গায়ে মেখে আছে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার আলসেমি। তার ওপর জামায়াত নামের বিষফোঁড়া। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির নেতৃত্বের চেহারাও আশাব্যঞ্জক নয়। পরীক্ষিত, পরিশ্রমী, সৎ নেতাদের উপস্থাপন করতে হবে।
মো. এস রহমান: নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে এবং এভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ডালপালা ছড়াবে। যদি তথাকথিত ভৌতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়, তবে দলীয় গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা বাদ দিয়ে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে অর্থাৎ প্রাক-গণতান্ত্রিক যুগে চলে যেতে হবে। সেখানে না থাকবে খালেদা জিয়ার বিএনপি, না থাকবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। তাঁদের চারপাশে যে তোষামোদকারী চক্র গড়ে উঠেছে, তারও আর কোনো প্রয়োজন হবে না।

সাকিবের সঙ্গে ঢাকা টু মাগুরা
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছুটির দিনে মূল রচনা লিখেছেন উৎপল শুভ্র। এ লেখা শুরু থেকে সারা দিনই ছিল পাঠকদের পড়ার তালিকার শীর্ষে। তাঁরা শুধু পড়েনই-নি, মতামত জানিয়েছেন। তৈয়েবুর রহমান লিখেছেন: শচীন টেন্ডুলকারের শৈশবের কথা উঠলেই বিশাল একটা জায়গাজুড়ে তাঁর প্রথম কোচ রমাকান্ত আরচেকারের কথা থাকে। আশরাফুলের সাক্ষাৎকার থাকলেই ওয়াহিদুল গনির প্রসঙ্গ চলে আসে। সাকিবের শিকড়ের সন্ধানে এত বড় একটা লেখা, সেখানে তাঁর আবিষ্কর্তার (সাদ্দাম হোসেন গোর্কি) শুধু নামটাই এল? প্রথম আলো কি সাকিবের সঙ্গে তাঁর একটা ছবি ছাপতে পারত না?
এ ডব্লিউ হক: গত কয় দিন পদ্মা সেতু আর পদ্মা সেতু, মন্ত্রীদের চিৎকার, চেঁচামেচি দেখতে দেখতে ও পড়তে পড়তে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আজ ‘সাকিবের সঙ্গে ঢাকা টু মাগুরা’ পড়ে ও ছবিগুলো দেখে ভালো ও সুস্থ বোধ করছি। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।
জাকির হোসেন: ড. ইউনূস, সাকিব আল হাসান সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন। দেশের জন্য এঁদের অবদানের ভিন্নতা রয়েছে। সাকিব সব কিশোরের অনুপ্রেরণা। আল্লাহ, তুমি সাকিবকে সুস্থ রাখো। সাকিব যেন দেশের জন্য আরও অনেক অনেক বছর অবদান রাখতে পারে।

হ্যালো, আপনি কি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ফোন করার জন্য মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই ফোনে অসংখ্য ফোন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সেই টেলিফোনকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়টি ছিল গত শুক্রবার অনলাইনে প্রকাশিত এই সংবাদের মূল প্রতিপাদ্য। এ সম্পর্কে মাহমুদ লিখেছেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সাহসিকতা, এই মানসিকতা বাংলার গণমানুষের সঙ্গে এক নজিরবিহীন সেতুবন্ধই বলা চলে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে যারা দুর্নীতি করে, তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কোনো জায়গা নেই—এতে এটাই প্রমাণিত।
মো. রাসেদ আলম: সব কটি ফোনই কি তোষামোদকারীদের ছিল? কেউ কি প্রধানমন্ত্রীর ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়নি? পদ্মা সেতু, পুঁজিবাজার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য কেউ কি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেনি?
নাসির আলি: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, প্রধানমন্ত্রী। আপনার এমন উদারতার জন্য। আপনি এগিয়ে যান, আপনার সঙ্গে বাংলার ১৬ কোটি জনগণ আছে। আমরা সবাই মিলে পদ্মা সেতু বানাব।
জাকির: একটা ফোনও তো করতে পারলাম না। সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না—এই কণ্ঠ শোনা যায়।

অবশেষে ‘ঈশ্বর কণার’ সন্ধান মিলল!
বিজ্ঞানীরা অনেক দিন এই কণার সন্ধানে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত যে তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বিজ্ঞানীরা। এ সম্পর্কে মোহাম্মদ খান লিখেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ গর্ব করতে পারে যে সত্যেন্দ্রনাথ বসু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং ওনার গবেষণা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়েই কেটেছে। সেই গবেষণার ফল, যা আজকের গিসহ বসন বা তথাকথিত ঈশ্বর কণা নিয়ে সারা বিশ্ব হইচই করছে।
মো. সিরাজুল ইসলাম: আমাদের বুঝতে হবে যে একটি ‘অকারণ’ থেকে ‘কারণের’ অস্তিত্ব, এবং ‘নাথিং’ থেকে ‘সামথিং’ সৃষ্টি হতে পারে না, যদি-না সেখানে কোনো প্রভাবকের প্রভাব না থাকে। সার্নের বিজ্ঞানীরা শুধু ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাজাগতিক বিস্ফোরণের পরবর্তী অবস্থা তা জানতে চাচ্ছেন, যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ক্রম-সম্প্রসারণশীল আমাদের এই মহাজগতের ব্যাখ্যা দিতে সহায়তা করতে পারে। মনে রাখতে হবে যে ‘ঈশ্বর কণা’ ‘ঈশ্বর’ নয়; বরং এটি হতে পারে ‘ঈশ্বরের কণা’। সার্নের বিগ ব্যাং তৈরি করতে যেমন বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন হয়েছে, তেমনি মহাজগতের সেই প্রথম বিগ ব্যাং সৃষ্টি করতেও সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হয়েছে। এই ক্রম-সম্প্রসারণশীল মহাজগতের সম্প্রসারণ একসময় সংকুচিত হতে থাকবে, যখন এর প্রথম বিগ ব্যাং দ্বারা অর্জিত শক্তি ক্ষয় পাবে; আর তখনই আমরা এগিয়ে যাব আরেকটি বিগ ব্যাং-এর দিকে।
প্রতাপ: মানুষের ক্ষমতা অপরিসীম। সার্নের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন।

(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.