মুমিনের মেরাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

৬২০ খ্রিস্টাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাবা শরিফ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে গমন করেন। সেখানে উপস্থিত নবীদের নামাজের ইমামতি করে তিনি ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন এবং সিদরাতুল মুনতাহায় উপস্থিত হন।


সেখান থেকে বিশেষ বাহনে চড়ে আরশে আজিমে গিয়ে আল্লাহতায়ালার সাক্ষাৎ ও সানি্নধ্য লাভ করেন। এই ঘটনাকে মিরাজ বলা হয়। মেরাজে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জান্নাত, জাহান্নামসহ সৃষ্টিজগতের সবকিছুর রহস্য প্রত্যক্ষ করেন। মেরাজের রাত মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এদিন নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করে দিনে নফল রোজা পালন করে থাকেন।
সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) মেরাজ গমনের বর্ণনা এসেছে এভাবে, 'তিনি সেই পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা_ যিনি তার স্বীয় বান্দাকে (সা.) এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে করেছেন তিনি বরকতময়। যাতে তাকে নিজের কিছু কুদরত দেখান। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুরই শ্রোতা ও দ্রষ্টা।'
মেরাজ মহানবীর ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের অন্যতম অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মেরাজ গমন করে তিনি আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশসহ ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধিবিধান নিয়ে আসেন। কোরআনে কারিমে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নামাজ ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম একটি। যেহেতু মেরাজের রাতে মুসলমানদের নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ জন্য নামাজকে 'মুমিনের মেরাজ' বলে অভিহিত করা হয়। নামাজের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহতায়ালার মিলন ও কথোপকথন হয়ে থাকে।
মেরাজের রাতে নবীদের নামাজের ইমামতির মাধ্যমে এ বিষয়টিই প্রমাণিত হয় যে, সকল নবীর (আ.) নবুয়তের মাধ্যমে প্রাপ্ত শরিয়ত শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) নবুয়ত ও তার শরিয়ত চলবে। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) আনীত শরিয়তই সর্বশেষ শরিয়ত। তিনিই শেষ নবী ও রাসূল; তারপর আর কোনো নবী-রাসূলের আগমন ঘটবে না। এসব বিশ্বাস করা যেমন একজন মুমিনের কর্তব্য, ঠিক তেমনি মেরাজের রাতে প্রাপ্ত উপহারের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোই মুসলমানের কাজ। আর সেটা হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ও আল্লাহতায়ালার বিধান মোতাবেক জীবন অতিবাহিত করা।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। এ দায়িত্ব যে উপেক্ষা করে সে আল্লাহতায়ালার কৃপা লাভের যোগ্যতা হারায়। হজরত মুয়ায বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ইচ্ছায় যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করে, তার ওপর থেকে মহান আল্লাহতায়ালার জিম্মাদারী নিঃশেষ হয়ে যায়।' -আহমদ
অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত ওমর (রা.) বলেন, 'নামাজ বর্জনকারী ইসলাম প্রদত্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে না এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে না।' নামাজ একটি ফরজ ইবাদত। সাধ্য থাকা অবস্থায় নামাজ আদায় না করা অমার্জনীয় অপরাধ। সাহাবিরা জীবনের কঠিনতম অবস্থাতেও নামাজ ত্যাগ করেননি।
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয় নামাজের মাধ্যমে। নামাজের প্রতি যে যত বেশি মনোযোগী আল্লাহতায়ালার রহমত তার তত বেশি সহযোগী। মানুষ যখন নামাজ আদায় করে তখন তার অন্তরে ইমানের আলো বিকশিত হয়; আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একজন মুসলমানের জীবনে যখন নামাজ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধান মানা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে আল্লাহর প্রিয়, মানুষের প্রিয় ও সবার প্রিয়। ইচ্ছা করলেও সে অনেক মন্দ কাজ করতে পারে না। অন্যায় অপরাধ করা থেকে আল্লাহতায়ালার রহমত তাকে অদৃশ্যভাবে বাধা দেয়। নামাজ মানুষকে অশল্গীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। ইমানদার যখন নামাজ পড়েন তখন আল্লাহতায়ালা তাকে মায়ার চাদরে ঢেকে নেন। তার ওপর দয়ার বৃষ্টিবর্ষণ করেন। তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। জীবনচলার পথে তার যা যা প্রয়োজন সবকিছু ব্যবস্থা করে দেন।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মেরাজের উপহার নামাজের অনুগামী হয়ে আদর্শবান ও সুষ্ঠু সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
muftianaet@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.