ইলিশ ধরার উৎসব-ভাতের সঙ্গে বাড়তি মাছ

বুধবার সমকালে 'মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ইলিশ ধরা শুরু' শিরোনামের খবরটি উৎসাহব্যঞ্জক। প্রজনন মৌসুমে মার্চ ও এপ্রিল টানা দুই মাস ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। এর শুভ প্রভাব পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। নদী ও সাগরে বেশি মাছ ধরা পড়বে এবং তার আকারও বড় হবে। দামও কমে আসবে।


তবে এ সময়েও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম যেন সচল থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের এ মাছের দাম এত বেড়ে যাচ্ছিল যে তা কেবলই উচ্চবিত্তের খাদ্য তালিকায় স্থান পাচ্ছিল। গত বছরও দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল এবং এর প্রভাবে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায়। বড় আকারের মাছও বাজারে আসে। রফতানি বাজারেও মেলে সুফল। দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলেও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রকৃতি আমাদের অঢেল সম্পদ দেয়নি যে নির্বিচারে তার ব্যবহার করা যাবে। নির্বিচারে সারা বছর মাছ ধরা হলে তার বংশবিস্তার বিঘি্নত হবেই। অন্যদিকে আমাদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে জেলেদের জীবিকা। মাছ ধরা ও বিপণনের সঙ্গে হাজার হাজার জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত। কেবল ভোলাতেই ইলিশের ওপর নির্ভরশীল আশি হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এ সময়ে তাদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান ছাড়াও বিকল্প কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তবে সব জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আগামী মৌসুমে এ কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারিত করার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা চাই। মাছ ধরার কাজে যুক্ত জেলেদের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা চাঁদাবাজির শিকার হয় এবং এমনকি জীবনের হুমকিতেও পড়ে। দেশের জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। মাছে-ভাতে বাঙালির জন্য ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু মাছের বড়ই আকাল ও দুর্মূল্য। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে ইলিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিও মনোযোগী হতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.