চট্টগ্রামে হুমকিতে শিল্প উৎপাদন by রাশেদুল তুষার

চট্টগ্রামে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ৩৮৫ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। পাওয়া যাচ্ছে ২০৫ থেকে সর্বোচ্চ ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে এ মুহূর্তে সরকারি সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) বন্ধ করে সেই গ্যাসের কিছু অংশ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে।


আর স্টিল রি-রোলিং মিল ও ডাইং কারখানার মতো ভারী শিল্প-কারখানায় চলছে গ্যাস রেশনিং। গ্যাস-বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের পুরো প্রভাব পড়ছে সার্বিক শিল্প উৎপাদনে। এ প্রসঙ্গে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারজানুর রহমান গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত কিছুদিনে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে গেছে ৮০ শতাংশ। তার ওপর সেচ মৌসুমের অজুহাতে প্রতিদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে ১২ ঘণ্টা। ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে। এর সঙ্গে আছে গ্যাস স্ট্যাগারিং। গড়ে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। শুধু গ্যাস রেশনিংয়ের কারণে স্বাভাবিক উৎপাদনের ২০ শতাংশ কম হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ব্যাংকের দায়দেনাও শোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।'
বিএসআরএম রডের ডিলার নজরুল ট্রেডিং সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রডের দর টনপ্রতি বেড়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতিটন ৬০ গ্রেড রডের দর ছিল ৬৮ হাজার টাকা, যা মঙ্গলবার ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিনিয়োগ বোর্ড চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা কারণে গত এক বছরে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকে দেশি-বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অবকাঠামোসহ গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এসব বিনিয়োগ বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিনিয়োগ বোর্ড চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব কবির সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগ্রহ থাকার পরও চট্টগ্রামে জায়গা না পেয়ে অনেক বিনিয়োগকারী ফেরত যাচ্ছে। এর সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট তো আছেই।'
গ্যাসের অভাবে শতাধিক শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ থমকে গেছে। এ ছাড়া গ্যাস সরবরাহে হলিডে স্ট্যাগারিং এবং ঘন ঘন গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার সমস্যা তো নিত্যদিনের। এ অবস্থা চলতে থাকলে মিল-কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) বর্তমানে ১২৬টি আবেদন জমা পড়ে আছে। এই গ্রাহকদের নতুন সংযোগ দিতে হলে আরো ২৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হবে।
কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের দুটি সার কারখানায় (কাফকো ও চিটাগাং ইউরিয়া) উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে দৈনিক ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট, গ্যাসনির্ভর সরকারি তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৪২ মিলিয়ন ঘনফুট প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, 'গ্যাস সংকট যদি জাতীয় সমস্যা হয় তাহলে কেন শুধু চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানায় হলিডে স্ট্যাগারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে? এখন চট্টগ্রামে গ্যাসের অভাবে শিল্প খাতে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রি-রোলিং মিলগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।' এ সংকট থেকে চট্টগ্রামের শিল্প উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.