অনুচ্ছেদভিত্তিক সুপারিশগুলো প্রকাশ করুন-সংবিধান সংশোধনী

সংবিধান সংশোধনে এলোপাতাড়ি আলোচনা কম হয়নি। এখন সংসদীয় বিশেষ কমিটির উচিত হবে অনতিবিলম্বে অনুচ্ছেদভিত্তিক প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো প্রকাশ করা। এটা খসড়া বিল বা প্রতিবেদন আকারে হতে পারে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও একইভাবে দফাওয়ারি সুনির্দিষ্ট আলোচনায় অংশ নিতে হবে।


সরকারি দলের প্রস্তাবের অপেক্ষায় তারা সময় নষ্ট করতে পারে না। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপি কমিটিতে বা সংসদের ফ্লোরে তাদের সুনির্দিষ্ট মতামত প্রকাশ করতে পারে। আমরা আশা করব, তারা এ ক্ষেত্রে অন্তত প্রথাগত বিরোধিতাসর্বস্ব বাগাড়ম্বর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা তাদের তরফে একটি বিলও পেশ করতে পারে। দ্বাদশ সংশোধনী পাসের সময় আওয়ামী লীগ জানত তাদের বিল পাস হওয়ার নয়। তবুও তারা পেশ করেছিল। এবং মতৈক্যের ভিত্তিতে দুটো সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়েছিল।
আমরা মনে করি, সব মহলের সঙ্গে যথাযথ আলাপ-আলোচনা, মতামত গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় মতৈক্যের ভিত্তিতেই সংবিধান সংশোধনের কাজটি হওয়া উচিত। এ জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করা প্রয়োজন তা হচ্ছে সংবিধানের কোথায় কী পরিবর্তন হচ্ছে, কোন অনুচ্ছেদের পরিবর্তে কী বসছে, কী বাদ পড়ছে, কোন বাক্যের বদলে কী বসছে তা জানানো। জনমত যাচাই ও ব্যাপকভিত্তিক মতামত নেওয়ার জন্য এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর সংবিধান সংশোধনের কাজটি জরুরি হয়ে পড়ে। বিশেষ কমিটি গঠিত হয়। বিএনপি এ ধরনের কমিটি মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব প্রস্তুত করার পর আইন মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে সংসদে পেশ করবে, এরপর সংসদীয় কমিটি গঠিত হবে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য। বিএনপির এই বিরোধিতার বিষয়টি নিতান্তই কার্যপ্রণালিগত। কিন্তু সংবিধান ও এর সংশোধনীর ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী, তা যেকোনোভাবেই তারা নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে।
সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে সরকার বিরোধী দলের নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ ব্যাপারে সম্ভাব্য দিন-তারিখও ঠিক হয়েছে। আমরা আশা করব, বিশেষজ্ঞরা তাঁদের সংশোধনী প্রস্তাব দাঁড়ি-কমাসহ উপস্থাপন করবেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর কোন অংশ তারা সমর্থন করে, কোন অংশ করে না, কোন অংশের পরিবর্তে কী চায় সেটা স্পষ্ট করাও তাদের দায়িত্ব। সরকারি দল নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করবে, সেটা যেমন প্রত্যাশিত নয়; তেমনি বিরোধী দল যুক্তিসংগত কারণ না দেখিয়ে বা বিকল্প সুপারিশ প্রদান থেকে বিরত থেকে সংবিধান সংশোধনীর বিরোধিতা করবে, সেটাও প্রত্যাশিত নয়।
সংবিধান সংশোধন কোনো দলের একক বিষয় নয়, আবার এটি শুধু একটি সরকারের মেয়াদ বা পাঁচ বছরের বিষয় নয়। সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত সংশোধনীর সুপারিশগুলো নিয়ে তাই ব্যাপক আলোচনা ও মতবিনিময় জরুরি। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো এখনই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করলে কাজটি সহজ হতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারি দলের, বিশেষ করে বিশেষ কমিটির আন্তরিক উদ্যোগ আশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.