খোলা হাওয়া-হে নূতন, নিষ্ঠুর নূতন, সহজপ্রবল by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

১৩০৫ সালের ৩০ চৈত্রের ঝড়ের দিনে শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘বর্ষশেষ’ কবিতাটি, যার সঙ্গে আশ্চর্য মিল রয়েছে আরও ৮০ বছর আগের এক ঝড়ের দিনে পার্সি বাইশি শেলির লেখা ‘ঔড টু দ্য ওয়েস্ট উইন্ড’ কবিতার। দুই কবি ঝড়কে মেনেছেন পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে, ‘বিবর্ণ বিশীর্ণ জীর্ণ পাতা’ উড়িয়ে দিয়ে নতুনকে


আবাহনের দূত হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় শুধু সমাজের, অচলায়তনের, পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তন চাননি, চেয়েছেন ব্যক্তির, তাঁর নিজেরও। ‘মহান মৃত্যুর সাথে মুখোমুখি করে দাও মোরে’ এ রকম একটি অনুরোধও রেখেছেন ঝড়ের কাছে। যেমন রেখেছেন শেলি।
উনিশ শতকের শেষে এসে রবীন্দ্রনাথ যে সময় কবিতাটি লেখেন, ভারতের রাজনীতি ও সমাজে নানা সংকট ঘনীভূত হচ্ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছিল; উপনিবেশী শাসনও আরও তীব্রতা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছিল। ‘বর্ষশেষ’ কবিতায় ব্যক্তির শক্তি সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে সমষ্টির পরিবর্তনের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে এবং সন্দেহ নেই যে, রুদ্ধ ও আত্মবিস্মৃত বাঙালি সমাজের যে ব্যাপক সংস্কার তাঁর কাম্য ছিল, তার একটি প্রকাশ কবিতাটিতে রয়েছে। এর শুরু থেকেই ঝড়ের কাঁপন অনুভব করা যায়, এর রুদ্র রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায়।
আমাদের সময়ে যদি বেঁচে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ, অথবা তাঁর সময়টি হতো আমাদের সময়ের মতো, ‘বর্ষশেষ’ কবিতাটি কীভাবে শুরু ও শেষ করতেন তিনি? তাঁর ঝড়ের তীব্রতা কি আরও প্রবল হতো? ঝড়ের যে দয়াহীন দস্যুতার কথা বলেছেন, তা কী ঝড়ের না হয়ে রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠানের হতো অথবা হতো ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর? যে ‘পঙ্ককুণ্ড হতে’ ছিন্ন করে ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তিনি চৈত্রশেষের ঝড়কে, সে পঙ্ককুণ্ডের পরিচয়টি কী তিনি দ্বিধাহীন দিতেন, চিহ্নিত করতেন এই পঙ্কের স্বরূপ? অথবা ‘শুধু প্রাণ ধারণের’ যে গ্লানির কথা উল্লেখ করেছেন, যে ‘শরমের ডালি’র কথা, তাদেরই বা কী ব্যাখ্যা দিতেন?
এ রকম ব্যাখ্যা অথবা বর্ণনা অথবা পরিচয় ‘বর্ষশেষ’ কবিতাতে অবশ্য তিনি দেননি, শুধু ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং কোনো বিশেষের পরিবর্তে এক নির্বিশেষ পুরাতনের, অমঙ্গলের এবং এক সাধারণ ‘খিন্ন শীর্ণ জীবনের শতলক্ষ ধিক্কার-লাঞ্ছনা’র উল্লেখ করেছেন। এই ‘শতলক্ষ’ অবশ্য ধারণ করে প্রায় সব বাঙালিকে; ‘ধিক্কার-লাঞ্ছনা’ নির্ধারণ করে উপনিবেশী শাসনের গ্লানিকে। হয়তো রবীন্দ্রনাথ এই ১৪১৭-এর বর্ষশেষেও এ রকম সমষ্টিক দুর্ভাগ্যের অবসান চাইতেন, এক শক্তিধর রাষ্ট্র ও শাসনযন্ত্রের নিগড় থেকে সাধারণ নাগরিকের মুক্তি চাইতেন।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে ১৪১৭ সালে টেনে আনাটা নিতান্ত অনুচিত। তিনি ভ্রমণ পছন্দ করতেন, কিন্তু সময়ভ্রমণ নিশ্চয় নয়। আর দৈবক্রমে কোনো সময়যানে চড়ে তিনি আমাদের সময়ে এসে পড়লে নিশ্চয় হতবুদ্ধি হয়ে যেতেন। না, দীনপ্রাণ দুর্বলের ‘এই চিরপেষণ যন্ত্রণা, ধূলিতলে/ এই নিত্য অবনতি, দণ্ডে পলে পলে/ এই আত্ম-অবসান’ দেখে নয়, যে অভিজ্ঞতা তাঁর নৈবদ্যে বর্ণিত আছে; তিনি হতবুদ্ধি হতেন এক ক্ষুদ্র রক্ত দিয়ে চেনা স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া একটি দেশে মানুষের প্রতি মানুষের চরম অবহেলা, অশ্রদ্ধা, নিষ্ঠুরতা দেখে, নারীকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে অন্ধকারে অদৃশ্য করে রাখার পুরুষী প্রত্যয় দেখে; শিশুকে বিকলাঙ্গ করে তার ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেওয়ার উল্লাস দেখে। তিনি নিশ্চয় হতবুদ্ধি হতেন স্বাধীনতা উদ্যাপনের সুযোগ ও অধিকার থেকে দেশের এক বিশালসংখ্যক মানুষকে বঞ্চিত থাকতে দেখে। ‘বর্ষশেষ’-এর এক শ তেরো বছর পরও তাঁর সোনার বাংলায় কেন ধর্মকে মানুষ বিভেদ সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে; কেন দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অক্ষরজ্ঞানহীন রয়ে গেছে; অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে একবার একটি জনগোষ্ঠী বিপন্ন হয়ে পড়লে, এই বিপন্নতা যে তার চিরস্থায়ী দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়, এসব দেখেও তিনি বুদ্ধিরহিত হতেন। একটি ঝড়ের তাণ্ডবে একটি স্কুল উড়ে যাওয়ার ১০ বছর পরও সেটির পুনর্বাসন হয়নি দেখে তিনি নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতেন: তাঁর চৈত্রশেষের ঝড় যেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নয়, কোনো মহাসমুদ্রের মাঝখান দিয়ে বয়ে যায়, সেখানে হয়তো চরকির মতো পাক খেতে থাকা জাহাজে বসে তিনি তাঁর সেই মহান মৃত্যুর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার আশা ব্যক্ত করতেন।
অথবা, বাংলাদেশের এত মানুষের, স্বপ্নের, ইচ্ছার মৃত্যু দেখে তিনি নিশ্চয় মৃত্যুর উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকতেন।
তবে সৌভাগ্য রবীন্দ্রনাথের। সময়যান তৈরি হোক না-হোক, তাতে চড়ার কোনো সম্ভাবনা তাঁর নেই। তিনি চিরশান্তির দেশে গেছেন, ‘শান্তির অক্ষয় অধিকার’ তিনি অর্জন করেছেন। তাঁকে শান্তি পারাপারের মাঝখানে রেখে আমরাই না হয় আমাদের সময়টা একবার ভ্রমণ করি। চৈত্রশেষ ও বৈশাখের শুরুর মধ্যে পার্থক্য কয়েকটি মুহূর্তের। কিন্তু এই পার্থক্য আবার একটি বছরেরও। কোনো কোনো সময় এক যুগের অথবা শতাব্দীরও। সময়টা গুরুত্বপূর্ণ বর্ষশুরুর হিসাবে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ সময়কে জয় করার প্রত্যয়ও। সেটি আমাদের আছে, কিন্তু ওই যে মানুষ মেতেছে মানুষের অনিষ্ট চিন্তায়, নিধন হচ্ছে প্রকৃতি, হারিয়ে যাচ্ছে সমাজের, রাষ্ট্রের হিতকারী ইচ্ছাটি, বাড়ছে ভোগ এবং নীতিহীন সঞ্চয়ের অভিলাষটি এবং হিংস্র হয়ে পড়ছে সমষ্টির ও প্রতিষ্ঠানের আচরণগুলো, তার কী হবে? এত প্রবল এবং অমোঘ এসব প্রকাশ যে, প্রাণের শক্তি হাতের মুঠিতে নিয়ে তা উঁচু করে তুলে ধরতেও এখন শঙ্কা হয়। একটা মহা ভাঙনপ্রবণ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ নদীর প্রবল ঘূর্ণির আর ফেনায়িত শক্তির দিকে চোখ মেলে রাখা যায় এবং আশা করা যায়, এই শক্তিটা আমাদের অন্তরে ধারণ করে একটি বিশাল পরিবর্তনের সূচনা যেন আমরা করে ফেলতে পারি।

২.
সর্বগ্রাসী সেই ভাঙনের শব্দ আমরা প্রতিমুহূর্ত শুনছি। এই কিছুদিন আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্টক মার্কেট বিপর্যয় তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। একটি খবরের কাগজ সেই প্রতিবেদনের কপি পেয়ে পুরোটা ছাপিয়ে দিচ্ছে। সেটি পড়তে বসলে হাত-পা হিম হয়ে যায়।
ত্রিশ লাখ স্বল্প আয়ের মানুষ, যার একটি বড় অংশ ভাগ্যবিড়ম্বিত, ভাগ্যান্বেষী অথবা কর্মহীন তরুণ, তারা তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ করেছিল পঙ্কিল পুঁজিবাজারে। আর তাদের শেষ কপর্দকটিও কী রকম শীতল হাসি হাসতে হাসতে একদল লুটেরা যে লুট করে নিল, তার লোমহর্ষক বর্ণনা আছে প্রতিবেদনটিতে। আমি পড়ছিলাম আর আমার চোখ ভিজে যাচ্ছিল টিভিতে দেখানো কয়েক যুবকের বুক খালি করা কান্নার কথা মনে করে; যারা বলছিল, শেয়ারবাজারের বিশাল পতনের পর, ‘আমাদের স্বপ্ন বলে কিছু রইল না।’ এই স্বপ্নকে যারা হত্যা করেছে, ওবায়দুল কাদের যাঁদের বলেছেন ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। একেকজনের নামের পাশে কুড়ি ত্রিশ এক শ দেড় শ কোটি টাকার লাভের হিসাব। এই ধনপতিদের একটা প্রশ্নই শুধু করতে ইচ্ছে করে, টলস্টয়ের একটি গল্পের শিরোনাম ধার করে, ‘একটা কবরের জন্য কতটা জমির প্রয়োজন, জনাব?’ যাক, নববর্ষে আপনাদের জন্য আমার শুভ কামনা রইল। আপনাদের মধ্যে যাঁরা মাত্র ১৫০ কোটি টাকা কামাই করেছেন এবং আপনারা যদি আরও ৪০ বছর এই পৃথিবীর আলো-হাওয়া ভোগ করার আশা রাখেন, তবে প্রতিদিন আপনাদের এক লাখ টাকা খরচ করতে হবে। আশা করি, এই নতুন বছরে প্রতিদিনই এক লাখ টাকা খরচের উপায় আপনারা খুঁজে পাবেন। যদি এ টাকা খুবই কম হয়ে যায়, ধরুন, ছেলেমেয়ের হাতখরচই তাতে হয় না, তবে কামনা করব, এ বছর আরও বড় বিপর্যয় আপনারা ঘটাতে সক্ষম হবেন, যাতে ছেলেমেয়ের দৈনিক হাতখরচের জন্য নিদেনপক্ষে এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে পারেন। ভাববেন না, আরও ৩০ লাখ হতভাগা মানুষ লাইনে আছে, যাদের আমাদের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তি তাচ্ছিল্যভরে জুয়াখোর বলে গালি দেন। অথচ আপনারা দুই লাখ টাকা ঢেলে ২০০ কোটি বানিয়ে নিলে কর্তাব্যক্তির কাছে আপনারা হন পাকা খেলোয়াড়, সমীহের পাত্র। জুয়াখোর বেচারারা চোখের পানি, নাকের পানি এক করে মন্ত্রী মহাশয়দের আপ্তবাক্য শোনে। আপনারা প্রতিবেদন নিয়েও ভয় পাবেন না। এ দেশে ক্ষমতাবান ও গুরুত্বপূর্ণদের কোনো দিন কোনো বিচার হয়নি, হবেও না। এ দেশে নির্যাতিত ছাত্রদের পক্ষে মৌন মিছিল করার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝরাতে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু বিত্তশালী ক্ষমতাবানদের টিকিটি স্পর্শ করার সাহস হয় না কোনো প্রশাসনের। সেই একই কোতোয়ালেরা বরং এদের হাত থেকে হাসতে হাসতে নানা উপঢৌকন গ্রহণ করে।
পুরোনো বছরটি ভ্রমণে আমাদের আরও চোখে পড়বে অসহায়, বিপন্ন নারীদের ওপর সাধারণ তস্কর থেকে নিয়ে ক্ষমতাধর রাজপুরুষদের নির্মম নিগ্রহ। ফতোয়ার শিকার সেই বালিকার কথাটি মনে করুন, মায়া যার নাম, যাকে দেখে থাকলে আপনার মনে হবে যেন পৃথিবীতে একটুখানি আনন্দ খুঁজে নিতেই সে এসেছিল। ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্ধ ঠাকুরেরা এবং সমাজের চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা তাকে সেই সামান্য আশা পূরণের সুযোগ দিল না। আর তার যারা হত্যাকারী, তাদের একটা বিচার যাতে হয়, সে সম্ভাবনাটাও বন্ধ করে দিলেন চার ডাক্তার, যাঁদের কাছে বিবেকের একটা প্রত্যাশা মানুষ করে, তাঁরা শিক্ষিত যেহেতু। আর মায়াদের চিরতরে স্তব্ধ করে দেয় যে ধরনের ফতোয়া, যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই, যাতে প্রকাশ পায় শুধুই নির্মমতা আর জিঘাংসা, তাকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা দিতে পথে নামেন ইসলাম রক্ষাকারীরা। আমাদের বর্ষভ্রমণে আরও ধরা পড়বে এক আঠারো বছরের ছেলে, ঝালকাঠির রাজাপুরের লিমন হোসেনের পঙ্গু হয়ে যাওয়া। চিরাচরিত ক্রসফায়ারের গল্প সাজিয়ে র‌্যাব এই পঙ্গু হয়ে যাওয়াকে বৈধতা দিতে চেয়েছে। সংবাদপত্রে একটি ছবি দেখে আমার চোখ ভিজে এসেছিল—এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমনের যে চেয়ার-টেবিলে বসে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো শূন্য পড়ে আছে, পাশে তার এক সহপাঠী পরীক্ষা দিচ্ছে। এই সংগ্রামী তরুণটি তো বাংলাদেশেরই প্রতীক। একে পঙ্গু করা তো বাংলাদেশকেই পঙ্গু করা। আমাদের শক্তিধর বাহিনীগুলোকে কি মানুষের জন্য ক্রমাগত মায়ামমতা হারাতে হবে?
নির্মমতার, নিগ্রহের, নিষ্ঠুরতার উদাহরণ আরও অসংখ্য আছে, শতলক্ষ আছে, আছে শতলক্ষ ধিক্কার, লাঞ্ছনাও। কিন্তু সেগুলোর ঠিকুজি নেওয়াটা আমাদের উচিত হবে না। যে হালখাতা আজ জাতি হিসেবে আমরা লিখব, সেখানে লাল কালিতে এসব উদাহরণকে খরচের খাতায় আমরা ফেলে দেব। যেটুকু সামান্য সঞ্চয় আমাদের, সেগুলোকে খুব বড় দাগে লিখে, সেগুলোকে সম্বল করে আমাদের এগোতে হবে। এক মাদ্রাসার বিনা বেতনে ইংরেজি শিক্ষক, যিনি ইটের ভাটায় শরীর খাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁর করুণ কাহিনি পত্রিকায় ছাপা হলে শুধু তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি মানুষ, ধ্বংসপ্রায় মাদ্রাসাটাকেও গড়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। আমার এক ছাত্রের কিডনি সংস্থাপন প্রয়োজন হলে তাকে সাহায্য করার জন্য আবেদন রেখেছিলাম একটি কাগজে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন অনেকেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের পর এক বাঙালি স্কুলছাত্রী পাশে দাঁড়িয়েছে এক ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারের এবং সেই পরিবারের একটি মেয়েও যোগ দিয়েছে তার সঙ্গে, হানাহানি বন্ধে তারা শুরু করেছে ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ। এগুলোই আমাদের সঞ্চয়। ক্ষুদ্র হতে পারে, অসংখ্য নাও হতে পারে, কিন্তু সঞ্চয়। আমাদের নতুন বছরজুড়ে মহাযাত্রার পাথেয়।

৩.
নববর্ষকে রবীন্দ্রনাথ অভিহিত করেছিলেন নিষ্ঠুর নূতন আবার সহজপ্রবল হিসেবে। নতুন যে, সে তখনই নিষ্ঠুর, যখন তার শর্তগুলো মেনে নিতে আমাদের অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হয়, খাড়া পথ বেয়ে উঠতে হয়, স্রোতস্বী নদী পার হতে হয়। সহজ সে, কারণ তার একটি মায়াময় রূপ আছে, সহজিয়া ভাব আছে, যেহেতু তার স্থানটা শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রাণে। সেই কঠিনের সাধনায় আমাদের নামতে হবে, শুরু করতে হবে সেই প্রবলের আবাহন; তাহলেই তার সহজ রূপটি আমাদের জীবনজুড়ে শ্যামল ছায়া বিছিয়ে দেবে।
সত্য যে কঠিন, এখন এই কঠিনেরে ভালোবাসতে হবে। সেটি অসাধ্য কিছু নয় শেষ বিচারে এবং আমাদের অভয় দেন রবীন্দ্রনাথ, যে কখনো করে না বঞ্চনা।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.