রাজপথে কর্মসূচি-জনদুর্ভোগ বিবেচনায় রাখুন

দুটি ন্যায্য দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাস্তায় নেমেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কড়াইল বস্তির অধিবাসীরা। কর্মসূচি ছিল ভিন্ন। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করেছিলেন শাহবাগ মোড়ের রাস্তাগুলো। আর কড়াইল বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদে মহাখালী মোড়কে কেন্দ্র করে


আশপাশের রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কড়াইল বস্তিবাসীরা। এ দুই অবরোধে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। রাজধানীর নিয়মিত যানজটেই নগরবাসী যেখানে জেরবার হয়ে যায়, সেখানে ব্যস্ত সড়কে এ দুই অবরোধ যানজটের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চৈত্রের অসহনীয় গরম। ঘামে ভিজে যানজটে বসে থেকে অনেক ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক ও জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলা কর্মসূচির প্রতি সকলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কর্মসূচির পেছনের দাবিগুলো ন্যায্য ছিল। গ্রহণযোগ্য কোনো পন্থায় কর্মসূচিগুলো পালিত হলে তা জনবিরক্তি উৎপাদন না করে বরং জনসমর্থন পেতে পারত। সাতক্ষীরায় নাটক মঞ্চায়নকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন ও নিপীড়ন হয়েছে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন, এটি আশাপ্রদ খবর। মিছিল, সমাবেশ করে তারা ঘটনার কথা দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছেন, গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। রাস্তা অবরোধ না করেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে তা করা যেত। রাজধানীবাসীও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিবাদমুখর হতে পারত। কিন্তু অবরোধের ফলে যে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে তাতে অবরোধকারীরা তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে জনসমর্থন কতটা টানতে পেরেছেন সে প্রশ্ন উঠবে। অন্যদিকে কড়াইল বস্তিবাসীর দাবিও ন্যায্য। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে এ বস্তিতে হাজারো মানুষের বসবাস। জায়গাটি বিটিসিএলের হলেও এ সময়ের মধ্যে বস্তি উচ্ছেদের উদ্যোগ আসেনি। বলতে গেলে নির্বিবাদেই গড়ে উঠেছে বৃহৎ বস্তিটি। হঠাৎ করে নিম্ন আয়ের মানুষের এমন জনবসতি উচ্ছেদ করার উদ্যোগ সমর্থন করা যায় না। উচ্ছেদ করতে হলে এসব মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেই তা করতে হবে। কিন্তু তা না করে, বস্তিবাসীকে পথে বসিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। স্বাভাবিক কারণেই তারা প্রতিবাদী হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় কি একটাই? যখন-তখন রাস্তায় নেমে নাগরিকদের চলাচলে বাধা দেওয়াই কি প্রতিবাদের একমাত্র উপায়? বারবার অপরিকল্পিত ও হঠকারী প্রতিবাদে রাজধানীবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবরোধের মতো ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদের বিকল্প পদ্ধতিগুলো কিছুতেই রপ্ত হচ্ছে না। শান্তিপূর্ণ উপায়েও যে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় তা যেন কেউ বুঝতেই চাইছেন না। আমরা মনে করি, যখন-তখন রাস্তা অবরোধের এ প্রবণতাটি বন্ধ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দ্রুত তৎপর হতে হবে। যে কোনো মূল্যে রাস্তাগুলোতে যান চলাচল অবাধ রাখতে হবে। তবে আন্দোলনকারীদের দাবিকে পাশ কাটিয়ে নয়। আমরা আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে সাতক্ষীরার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিও নিশ্চিত করা দরকার। সাময়িকভাবে কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ আছে। বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়ে সরকার দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.